Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মশার দাপটে দিনেও জানলা বন্ধ ঘাটালে

দুপুরে তীব্র রোদ। ভ্যাপসা আবহাওয়ায় জানলা বন্ধ করে পড়তে বসে শহরের গড়প্রতাপনগরের এক স্কুল ছাত্রী। উপায়ই বা কী সামনে পরীক্ষা। তার উপর ম্যালেরিয়ার ভয়। গরমের মধ্যে ভ্যানভ্যানে মশা থেকে বাঁচতে মশারিই ভরসা।

অপরিষ্কার: নালা-নয়ানজুলিতে  জমেছে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র

অপরিষ্কার: নালা-নয়ানজুলিতে জমেছে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র

অভিজি়ৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৪৬
Share: Save:

দুপুরে তীব্র রোদ। ভ্যাপসা আবহাওয়ায় জানলা বন্ধ করে পড়তে বসে শহরের গড়প্রতাপনগরের এক স্কুল ছাত্রী। উপায়ই বা কী সামনে পরীক্ষা। তার উপর ম্যালেরিয়ার ভয়। গরমের মধ্যে ভ্যানভ্যানে মশা থেকে বাঁচতে মশারিই ভরসা। ওই কিশোরীর কথায়, “এখন আমাদের পরীক্ষা চলছে। লোডশেডিং তো লেগেই রয়েছে, তার মধ্যে মশা। মশারি টাঙিয়েই পড়তে হয়।”

ঘাটাল পুরসভায় এমন ছবি ঘরে ঘরে। গোটা শহর আতঙ্কে ভুগছে। গত বছরই গড়প্রতাপনগরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল মৌ শাসমল নামে এক। আক্রান্ত হয়েছিলেন জনা দশেক মানুষ। তবে বেসরকারি মতে সংখ্যাটা আরও বেশি। ডেঙ্গি আর ম্যালেরিয়ার জোড়া থাবায় বিপর্যস্ত ঘাটাল এ বার আবার আক্রমণের ভয় পাচ্ছে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ হেলদোল নেই পুরসভার। পুরপ্রধান বিভাস ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা এ বার আগেভাগেই যথাযত ব্যবস্থা নিচ্ছি। শহরের মানুষকে সচেতন হতে হবে।”

তবে পুরপ্রধানের দাবির সপক্ষে তেমন কোনও প্রমাণ মেলেনি শহরে। পুরসভায় মোট ১৭টি ওয়ার্ড, জনসংখ্যা প্রায় ৬১ হাজার। অথচ, অলি-গলিতে পড়ে রয়েছে ডাবের খোলা। গ্যারেজগুলির সামনে টায়ারের স্তূপ। চায়ের দোকানগুলিতে ক্রমাগত জমছে মাটির ভাঁড়। বৃষ্টি নামলেই জল জমে যাবে ওই সব জায়গায়। জন্মাবে মশা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ সব না হয় মানুষের সচেতনতার অভাবে হচ্ছে। কিন্তু খাল, নালা নায়নজুলি পরিষ্কার করবে কে? এমনকী পুরসভায় খালি পড়ে রয়েছে পতঙ্গবিদ পদটিও।

সংস্কার না হওয়ায় নালা, খাল থেকে নয়ানজুলিগুলিতে গিয়ে পড়ছে আবর্জনা-প্ল্যাস্টিকে ভর্তি। কচুরিপানা তো রয়েছেই। ডাবের খোলা, মাটির ভাঁড় পরিষ্কার করার বিষয়ে উদ্যোগী নয় পুরসভা। এমনকী যাঁরা টায়ার বা ভাঁড় জমাচ্ছে, সেই সব ব্যবসায়ীদের শাস্তি দেওয়ার কথাও ভাবে
না প্রশাসন।

শহরের কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা নির্মল পালের আপেক্ষ, “শহরের নর্দমাগুলি বছরে একবারও সংস্কার হয়নি। মাঝে মধ্যে রাসায়নিক স্প্রে করেই দায় সারছে পুরসভা।’’ তাঁর দাবি, স্প্রে শুরু হলেই নালা থেকে মশা এসে ঢোকে বাড়ির মধ্যে। ফলে জানলা খোলাই দায়।

পুরসভার ১ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বেশিরভাগ এলাকায় আবার নদর্মা কাঁচা। সেখানে এই মরসুমে একদিনও রাসায়নিক স্প্রে বা ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো‌ হয়নি বলে দাবি বাসিন্দাদের। কুশপাতার দুরভাষপল্লির বাসিন্দা সবিতা কাপাটের অভিযোগ, “বাড়ির চারপাশ আমরাই পরিষ্কার করি। পুরসভার কোনও কর্মীই এ সব করে না। আমরা কোথায় জানাবো?”

অথচ মশার বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে প্রচার এবং অন্য কাজের জন্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর টাকাও বরাদ্দ করেছে। কিন্তু এখনও কাজ শুরু করেনি পুরসভা। চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষ বলেন, “সরকারি নির্দেশ পাওয়ার পরই আমরা স্বাস্থ্য কর্মী এবং আশাকর্মীদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। এ বার বাড়ি বাড়ি তাঁরা প্রচার শুরু করবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mosquitoes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE