Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কথা ফুটতেই ঘরে ফিরল ময়না

বছর নয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল এক নাবালিকাকে। মুখে কোনও কথা নেই। শুধু একটি শব্দ— ময়না। উপায় না দেখে কোতোয়ালি থানার পুলিশ তাকে পৌঁছে দেয় নিমতৌড়ির একটি হোমে।

ঘরে-ফেরা: মায়ের সঙ্গে মাতঙ্গিনী। নিজস্ব চিত্র

ঘরে-ফেরা: মায়ের সঙ্গে মাতঙ্গিনী। নিজস্ব চিত্র

পার্থপ্রতিম দাস
তমলুক শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৮
Share: Save:

বছর নয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল এক নাবালিকাকে। মুখে কোনও কথা নেই। শুধু একটি শব্দ— ময়না। উপায় না দেখে কোতোয়ালি থানার পুলিশ তাকে পৌঁছে দেয় নিমতৌড়ির একটি হোমে। সেখানেও বার বার মেয়েটি বলে গিয়েছে ‘ময়না’। তারপর থেকে ময়নাই তার নাম হয়ে গিয়েছিল।

হোমের চিকিৎসকরা বুঝেছিলেন, ময়না পরিণত মস্তিষ্কের নয়। শুরু হয় তার চিকিৎসা। ঠিকানা বা পরিবার, কারও কথাই বলতে পারছিল না সে। হোমের অন্যেদের সঙ্গেই কাটছিল ময়নার জীবন। আট বছর ধরে সে নাচ, গান, হাতের কাজ শিখেছে। ময়নার বানানো পাটের রাখি কিনে নিয়ে গিয়েছেন জেলাশাসক থেকে প্রশাসনের অন্য আধিকারিকেরা। সেই সঙ্গে সমানে চলেছে চিকিৎসাও। ফলও মিলেছে।

গত বছর পুজোর সময় হঠাৎই দু’টো নতুন কথা বলে ফেলে ময়না— গৌর সিংহ। তার বাবার নাম। সঙ্গে জুড়ে দেয় পুরনো কথাটাও— ‘ময়না’। খোঁজ শুরু হয়। তমলুক উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক যোগেশ সামন্ত বলেন, “বাবার নামের সঙ্গে ফের ময়না কথাটা উচ্চারণ করায় সন্দেহ হয়, ময়না ওর নাম নয়। আমরা পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না ব্লকে ওর ছবি দিয়ে খোঁজ শুরু করি।’’ কিছুদিনের মধ্যেই একটি পরিবার জানায়, তাঁদের নিঁখোজ মেয়ের সঙ্গে ওই ছবির মিল আছে। জেলা প্রশাসনের তরফে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সত্যতা প্রমাণ হওয়ার পরই মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুমতি পেয়েছেন ‘ময়না’র মা লক্ষ্মীবালা সিংহ। ময়না যে আসলে মাতঙ্গিনী সিংহ। বছর দুয়েক আগে মারা গিয়েছেন তার বাবা।

বৃহস্পতিবার সকালে তমলুকের ওই হোম থেকে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যান লক্ষ্মীদেবী। তিনি জানান ২০০৮ সালে ময়না থেকে বাসে করে পিংলায় দিদির বাড়ি যাচ্ছিল মাতঙ্গিনী। কী করে যে সে দিন হারিয়ে গেল! অনেক খুঁজেও পাওয়া যায়নি তাকে। লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘‘মেয়ে শুধু একটু তোতলাতো। আর কোনও অসুখ তো ছিল না।’’

অনেকদিন পরে মায়ের কাছে ফিরতে পেরে খুশি বাঁধ মানেনি মাতঙ্গিনীর। কাগজপত্রে সই সাবুদের পালা শেষ করে মাকে জড়িয়ে হোমের দরজা পেরিয়েছে সে। পিছনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়েছে তার এতদিনের বন্ধু সালমা, নাসিমা, হোমের সুপার আলপনাদি, প্রণতিদিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mother Daughter missing Return
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE