Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বেআইনি বাড়ি নির্মাণ ঠেকাতে পুরসভার নয়া সিদ্ধান্তে বিতর্ক

নালিশ ঠোকার আগে স্বচ্ছ হতে হবে নিজেকে

অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার আগে ত্রুটিমুক্র হতে হবে নিজেকেও। স্বচ্ছতার প্রমাণও দিতে হবে। বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ভুরি ভুরি ভিত্তিহীন অভিযোগ জমা পড়া ঠেকাতে এ বার এই সিদ্ধান্তই নিল মেদিনীপুর পুরসভা। পুর-কর্তৃপক্ষের অভিজ্ঞতার বলছে, বেআইনি বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিত্তিহীন হয়।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০০:১২
Share: Save:

অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার আগে ত্রুটিমুক্র হতে হবে নিজেকেও। স্বচ্ছতার প্রমাণও দিতে হবে।

বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ভুরি ভুরি ভিত্তিহীন অভিযোগ জমা পড়া ঠেকাতে এ বার এই সিদ্ধান্তই নিল মেদিনীপুর পুরসভা। পুর-কর্তৃপক্ষের অভিজ্ঞতার বলছে, বেআইনি বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিত্তিহীন হয়। সুসম্পর্ক না থাকায় প্রতিবেশীরাই এমন অভিযোগ করে থাকেন। তদন্তে নেমে দেখা যায়, অভিযোগকারী নিজেই বেআইনিভাবে পেল্লায় বাড়ি বানিয়ে বসে রয়েছেন। মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের তাই বক্তব্য, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ কমিয়ে মানুষকে হেনস্থার হাত থেকে বাঁচাতেই এই সিদ্ধান্ত।’’ পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিবেশীকে জব্দ করতে নালিশ ঠোকা হয়। এ জন্য ১০০ টাকা খরচেও তাঁরা দ্বিধা করেন না। এই নিয়ম এ বার তাঁদেরই জব্দ করবে।’’

তবে পুরসভার এই সিদ্ধাম্ত ঘিরে প্রশ্ন উঠতেও শুরু করেছে। শহরের বাসিন্দা থেকে বিরোধী, একাংশের মত, এর ফলে কেউ আর অভিযোগ জানাতেই চাইবেন না। ফলে, চুপচাপ বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে অনিয়ম হবে। যা মোটেই কাম্য নয়। বাম কাউন্সিলর গোপাল ভট্টাচার্য যেমন বলেন, ‘‘আগে নিয়ম ছিল, যথাযথ ভাবে কর দিয়ে থাকলেই অভিযোগ জানানো যাবে। কিন্তু পুরসভার এই সিদ্ধান্ত তো মানুষকে বেআইনি বাড়ি তৈরিতে উৎসাহিত করবে।’’ নয়া এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ একাংশ শহরবাসীও।

ক্ষুদিরামনগরের বাসিন্দা অমলেন্দু সাউ বলেন, ‘‘এই নিয়মের ফলে অনেকেই আর অভিযোগ জানাতে সাহস করবেন না। এতে আখেরে ক্ষতিই হবে। বেআইনি নির্মাণ বাড়লে তো শহর ঘিঞ্জি হবে।’’ রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা চন্দন পালের আবার বক্তব্য, “নিয়ম মেনে বাড়ি হয়েছে কিনা তা তো পুরসভারই দেখার কথা। সেটা করবে না, উল্টে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ জানাতে গিয়ে ১৫-২০ বছর আগে হওয়া ত্রুটির জন্য জরিমানা দিতে হবে, এ তো একপ্রকার হুমকি।’’ যদিও উপ-পুরপ্রধানের যুক্তি হল, “আইনের চোখে যিনি এখন বেআইনি নির্মাণ করেছেন তিনি যে দোষে দোষী, আগে যিনি বেআইনি ভাবে বাড়ি তুলেছেন তিনিও দোষী। তাহলে বেআইনি নির্মাণের জন্য একজনের জরিমানা হলে, অন্যের হবে না কেন?’’ উপ-পুরপ্রধানের মতে, নতুন এই নিয়ম ভবিষ্যতে সকলকে নিয়ম মেনে বাড়ি তৈরিতে উৎসাহিত করবে।

পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, ৮ মিটার উঁচু অর্থাৎ দোতলা বাড়ির জন্য সামনে ও দু’দিকে চার ফুট করে ও পিছনের দিকে সাড়ে ৬ ফুট জমি ছাড়তে হবে। এরপর বাড়ির উচ্চতা যত বাড়বে জমি ছাড়তে হবে তত বেশি। আগে নিয়মের কড়াকড়ি ছিল না। অনেকেই এক-দেড় ফুট জমি ছেড়ে বাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন। আবার কেউ প্রভাব খাটিয়ে কিংবা জমি কম থাকায় পুর-কর্তৃপক্ষের সহানুভূতি আদায় করে বেআইনি নির্মাণ করেছেন। এ সব নিয়ে অভিযোগও জমা পড়ে পুরসভায়। সম্প্রতি ক্ষুদিরামনগরে এমন এক বেআইনি নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ এসেছিল। তদন্ত, শুনানি শেষে দেখা গিয়েছে, যিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর নির্মাণও বেআইনি। এরপর দু’জনকেই জরিমানা করে পুরসভা। একই ঘটনা ঘটেছে কর্নেলগোলাতেও।

নতুন নিয়মে বেআইনি নির্মাণ ঠেকানো যায় নাকি, এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়াটাই বন্ধ যায়, সেটাই এখন দেখার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Municipality Illegal construction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE