Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মেদিনীপুর বইমেলা

নোট ধাক্কার আশঙ্কা, ব্যাঙ্কের অভয় পিওএস-এ

নোটের ধাক্কায় বেসামাল হতে পারে মেদিনীপুর বইমেলা। আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। খুচরোর অভাবে মেলায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমতে পারে বলে তাঁদের ধারণা।

প্রস্তুতি থমকে নেই। স্টল তৈরির কাজ চলছে জোর কদমে। — নিজস্ব চিত্র

প্রস্তুতি থমকে নেই। স্টল তৈরির কাজ চলছে জোর কদমে। — নিজস্ব চিত্র

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৩৬
Share: Save:

নোটের ধাক্কায় বেসামাল হতে পারে মেদিনীপুর বইমেলা। আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। খুচরোর অভাবে মেলায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমতে পারে বলে তাঁদের ধারণা।

যদিও সেই সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছেন এসবিআই কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন মেলার মাঠে বসানো হবে মোবাইল এটিএম। অর্থাৎ একটি পিওএস মেশিন থেকে প্রত্যেক ক্রেতা ১০০০টাকা করে পাবেন। দেওয়া হবে ১০ টাকার নোটও।

মেলায় নোট সমস্যার সমাধানে ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। আর্জি জানিয়েছেন, মেলার মাঠে এটিএম মেশিন বসানোর! যাতে অন্তত মেলাটা সচল থাকে। ব্যাঙ্কের থেকে পিওএস-এর আশ্বাসে মেলায় খুশি উদ্যোক্তারা। মেদিনীপুর বইমেলা কমিটির সম্পাদক অগমপ্রসাদ রায় বলছেন, “ব্যাঙ্ক পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। এতেই সকলে খুশি। এক একজন ক্রেতা ১০০০ টাকা পেতে পারেন। এটা কম কীসের! আশা করি, বইমেলায় স্বাভাবিক ছন্দই থাকবে।”

বইমেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “এখন খুচরোর প্রচুর সমস্যা। শহর জুড়েই নগদের টান। নতুন দু’হাজার টাকার নোট এসেছে ঠিকই তবে তা ভাঙাতে গিয়েও তো সমস্যা হচ্ছে। মেলায় এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল।’’ সেই আশঙ্কা থেকেই ব্যাঙ্কের কাছে আর্জি জানানো হয়েছিল। তাঁর দাবি, মানুষ যেন মেলায় এসে বই কেনার জন্য খুচরো টাকা পেতে পারেন।

মেলার মাঠে এটিএম মেশিন বসানোর আর্জি জানিয়ে দিন কয়েক আগেই উদ্যোক্তারা স্টেট ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। ব্যাঙ্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার শক্তিকুমার ঘোষ বলেন, “বইমেলার উদ্যোক্তারা আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। তাঁদের আর্জি খতিয়ে দেখেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মেলার মাঠে পিওএস মেশিন থাকবে।”

কাল, রবিবার থেকে মেদিনীপুরে শুরু হচ্ছে ‘মেদিনীপুর বইমেলা ও মৈত্রী উৎসব- ২০১৬’। এ বার পঞ্চম বর্ষ। মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর হলের মাঠে এই মেলা বসছে। সব মিলিয়ে ৬১টি স্টল থাকছে।

দিন কয়েক আগেই শহরে সবলা মেলা হয়ে গিয়েছে। নোট বাতিলের প্রভাব পড়ে সেই মেলায়। প্রত্যাশিত জনসমাগম হয়নি। বেচাকেনাও হয়েছে কম। শুধু তাই নয়। শীতের মরসুমে শহরে একাধিক ছোটখাটো মেলা হয়ে গিয়েছে। সর্বত্রই ৫০০, ১০০০-এর ধাক্কা লেগেছে। কোনও মেলাতেই স্বাভাবিক ছন্দ ছিল না।

এমনকী কোনও কোনও দোকানের ঝাঁপ দিনের অধিকাংশ সময়ই বন্ধ ছিল বলে অভিযোগ। কেউ আবার দোকান খুলেও দিনভর খালি হাতে বসে থেকেছেন!

অথচ, অন্য বছর মেলাগুলো রীতিমতো গমগম করে। নগদের টানে সমস্যায় পড়তে হয়েছে বইমেলার উদ্যোক্তাদেরও। বইমেলা কমিটির সম্পাদক অগমবাবু বলছিলেন, “নগদ বেশি নেই। তাই কাউকে কাউকে চেক দিতে হয়েছে।’’ মেলার মাঠে স্টল তৈরি, আলো লাগানো, মাঠ সাজানো— কাজ কম নয়। এই সব কাজ যাঁরা করেন, তাঁদের তো অগ্রিম টাকা দিতে হয়।

কুণালবাবুর কথায়, “মেলার জন্য বেশ কিছু ফ্লেক্স করা হয়েছে। তার টাকা বকেয়াই রয়ে গিয়েছে। ছাপাখানায় বলে দিয়েছি, পরে দেবো!” শহরে এই বইমেলা চলবে আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বইমেলায় লোক টানতে অবশ্য চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না উদ্যোক্তারা।

প্রথম দিনই থাকছে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা। প্রতিদিনই থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। থাকছে নামী প্রকাশনী সংস্থার স্টল।

এত কিছুর পরও নোটের চোটে মেলা কাত হবে না তো?

বইমেলার এক উদ্যোক্তা আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘‘এখন খুচরোর আকাল! যতটুকু প্রয়োজন মানুষ ততটুকুই কেনাকাটা করছেন। ফলে প্রভাব তো পড়বেই।’’

শুধু তো ক্রেতারা নন। বিক্রেতাদের কাছেও বেশি খুচরো নেই। ফলে চাইলেও অনেকে বিক্রি করতে পারছেন না। সেই সমস্যা সমাধানেই পিওএস-এর অভয় দিয়েছেন ব্যঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তাতে কতটা কাজ হল বলবে সময়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Midnapore book fair demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE