Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিদ্যুৎ সংযোগ কাটায় বিপাকে পরীক্ষার্থীরা

দোরগোড়ায় মাধ্যমিক। মাস খানিকের মধ্যে রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকও। তার আগেই আঁধারে ডুবেছে জঙ্গলমহলের বেশ কিছু দরিদ্র পরিবার। কারণ, কয়েকশো বিপিএল গ্রাহকের সংযোগ কাটা হয়েছে। সমস্যায় পড়েছে ওই সব পরিবারের পরীক্ষার্থীরা।

পড়তে ভরসা কুপির আলো। নিজস্ব চিত্র।

পড়তে ভরসা কুপির আলো। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৩
Share: Save:

দোরগোড়ায় মাধ্যমিক। মাস খানিকের মধ্যে রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকও। তার আগেই আঁধারে ডুবেছে জঙ্গলমহলের বেশ কিছু দরিদ্র পরিবার। কারণ, কয়েকশো বিপিএল গ্রাহকের সংযোগ কাটা হয়েছে। সমস্যায় পড়েছে ওই সব পরিবারের পরীক্ষার্থীরা।

গরিব বিপিএল গ্রাহকদের অভিযোগ, জঙ্গলমহলে অশান্তি-পর্বের ত্রুটিপূর্ণ বকেয়া বিলগুলি সংশোধন না করেই একের পর এক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযান শুরু করেছেন বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কর্মীরা। মাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক আগে ঝাড়গ্রাম মহকুমার অন্তর্গত জামবনি, গোপীবল্লভপুর, বেলপাহাড়ি-সহ বিভিন্ন ব্লকের গরিব বিদ্যুৎ গ্রাহকের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরব হয়েছে সারা বাংলা বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতি। সংগঠনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির নেতা তপন রায় জানালেন, জামবনি ব্লকের জঙ্গল ঘেরা বাঁকশোল ও কুমরি গ্রামে মোট ৫৮টি বিপিএল পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ওই পরিবারগুলিতে ৬ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এবং দু’জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছে। অন্ধকারে কেরোসিনের কুপি জ্বেলে পড়তে হচ্ছে শচীন মাহাতো, তুষার মাহাতো, সোনালি মাহাতোদের। নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে বাড়তি টাকা গুনে কুপি আর হ্যারিকেন জ্বালানোর কেরোসিন কিনতে হচ্ছে।

অধিকাংশ বিপিএল গ্রাহকের বকেয়া বিলের পরিমাণ ছিল ২০-২৫ হাজার থেকে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত। শেষে গ্রাহকদের আন্দোলনের চাপে বিদ্যুৎ দফতর ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিলে ছাড় দেয়। কিন্তু লালগড়-সহ জঙ্গলমহলের বহু গ্রাহককেই এই ছাড়ের আওতায় আনা হয়নি বলে অভিযোগ। আর তাই জামবনি ব্লকের শুশনি গ্রামের বিপিল তালিকাভুক্ত দিনমজুর প্রভাস মাহাতোর বর্তমান বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। ওই ব্লকের বেড়াগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা শেখ সাজ্জাদের বকেয়া বিলের পরিমাণ ১ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা। বেরাগাড়ির নিরঞ্জন মাহাতোর ৮৫ হাজার ৪৫৫ টাকার বিল বকেয়া রয়েছে।

২০০৯-২০১০ সালে মাওবাদী সন্ত্রাসের কারণে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গাঁ-গঞ্জে দীর্ঘদিন মিটার রিডিং নেওয়া বন্ধ ছিল। পরে হঠাৎ করে গ্রাহকদের কাছে একসঙ্গে বিপুল অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল আসা শুরু করে। জামবনি ব্লকের এ রকম ২৩৮টি ত্রুটিপূর্ণ বিল সংশোধনের জন্য ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর সারা বাংলা বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতির পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি, গ্রাহকরাও পৃথক-পৃথক ভাবে বিল সংশোধনের জন্য বিদ্যুৎ দফতরে লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু বিলগুলি সংশোধন করা হয়নি। উল্টে বহু বিপিএল গ্রাহকের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। জামবনির কুমরি গ্রামের প্রবীর মাহাতো বলেন, “খেটে খাওয়া লোকজন একসঙ্গে কীভাবে এত টাকার বিল জমা দেবেন, এটা সরকার ভাবছে না। অথচ পরীক্ষার আগে লাইন কেটে দেওয়া হচ্ছে।”

বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা অবশ্য এ ক্ষেত্রে গাফিলতি মানতে নারাজ। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম ডিভিশনের আওতায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার গ্রাহকের প্রায় ৮৫ কোটি টাকার বিল বকেয়া রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২০ হাজার গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ঝাড়গ্রামের ডিভিশনাল ম্যানেজার উজ্জ্বল রায় বলেন, “অহেতুক কোনও গ্রাহককে সমস্যায় ফেলার প্রশ্নই ওঠে না। যাঁরা বিল জমা দিচ্ছেন না, তাঁদেরই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Electricity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE