রাস্তায় আবর্জনা। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তালবাগিচায়।
চিত্র এক: ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনা। উপচে পড়ছে ভ্যাট। সঙ্কীর্ণ নর্দমাও আবর্জনায় রুদ্ধ। বাসিন্দারা জানালেন, সপ্তাহে এক দিন সাফাইকর্মীর দেখা মেলে। এই ওয়ার্ডে সাফাইকর্মীর সংখ্যা ১০।
চিত্র দুই: ৬ নম্বর ওয়ার্ডেও রাস্তায় আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে। তবে ভ্যাটে সে ভাবে আবর্জনা নেই। নর্দমায় আবর্জনা থাকলেও কয়েকটি এলাকা বাদে জল নিকাশি সমস্যা নেই বললেই চলে। এই ওয়ার্ডে সাফাইকর্মীর সংখ্যা ১৫। ওয়ার্ডবাসী জানাচ্ছেন, সপ্তাহে এক দিন অন্তর এক দিন সাফাইকর্মীদের দেখা মেলে।
চিত্র তিন: ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তো রাস্তায় আবর্জনা সে ভাবে নজরেই পড়ে না। এই ওয়ার্ডে সাফাইকর্মীর সংখ্যা ২০। বাসিন্দারা জানালেন, প্রায় প্রতিদিন এলাকায় সাফাইকর্মীর দেখা মেলে। তাঁদের কাজও সন্তোষজনক।
সাফাইকর্মীর অনুপাত সব ওয়ার্ডে সমান নয় বলেই খড়্গপুর শহরের বেশ কিছু এলাকায় জঞ্জাল-যন্ত্রণা বাড়ছে। কয়েকজন কাউন্সিলর এ নিয়ে সরব হলেও পুরসভার কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। তাই সাফাইকর্মীর অনুপাতের বৈষম্যও ঘুচছে না। যেমন, দীর্ঘদিন ধরে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ জন সাফাইকর্মী আর ৭ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে ২০ জন সাফাইকর্মী। পুরবোর্ডের ক্ষমতার হাতবদলের সঙ্গেই সাফাইকর্মীর সংখ্যায় বৈষম্য বেড়েছে বলে শহরবাসীর অভিযোগ। আর তাই কোথাও সাফসুতরো ওয়ার্ড তো কোথাও জঞ্জালের পাহাড়।
৩৫টি ওয়ার্ডের খড়্গপুর পুরসভায় ৮টি ওয়ার্ড রেল এবং একটি ওয়ার্ড আইআইটি এলাকায় অবস্থিত। ওই ৯টি ওয়ার্ডে রেল ও আইআইটি কর্তৃপক্ষই সাফাইয়ের কাজ করেন। এ ব্যাপারে পুরসভার কোনও ভূমিকা নেই। তবে এখন পুরসভার পক্ষ থেকে ওই ৯টি ওয়ার্ডেও ২ থেকে ৩জন অস্থায়ী সাফাইকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। অথচ ২০১০ সালে ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসে প্রতিটি ওয়ার্ডের পরিধি বাড়ার পরেও ১, ২, ৫, ১১, ২৪, ২৯, ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে মাত্র ৫ থেকে ১০ জন সাফাইকর্মী রয়েছেন। এ দিকে শহরের ৬, ৭, ৯, ১৪, ১৬, ১৭, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫জন থেকে ২০ জন সাফাইয়ের কাজে নিযুক্ত রয়ছেন। তাই ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা বজায়ে কেন রেল ও আইআইটি এলাকার বদলে যে সমস্ত পুরওয়ার্ডে সাফাইকর্মী কম রয়েছে সেখানে নিয়োগ করা হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যেমন শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলর নাফিসা খাতুন বলেন, “আমার ওয়ার্ড খুব বড়। কিন্তু আমার ওয়ার্ডে ১০ জন মাত্র সাফাইকর্মী। আবার কোনও ওয়ার্ডে ১৮-২০জন করে সাফাইকর্মী রয়েছে। এই নিয়ে বহুবার বোর্ড মিটিংয়ে সরব হলেও সুফল পাইনি।’’
এমন পরিস্থিতিতে কম সংখ্যক সাফাইকর্মী দিয়েই কাজ করতে গিয়ে সাফাই থেকে বাদ পড়ছে ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা। কোথাও আবার ওয়ার্ডের এলাকা ভাগ করে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে এক-একটি এলাকায় পাঠানো হচ্ছে সাফাইকর্মীদের। যেমন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর স্মৃতিকণা দেবনাথ বলছিলেন, “আমার ওয়ার্ডে মাত্র ৬ জন সাফাইকর্মী দিয়ে গোটা ওয়ার্ড সামলাতে হচ্ছে। ফলে সাফাইয়ের কাজে ত্রুটি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বোর্ড মিটিংয়ে বলেও কিছুই হচ্ছেনা।’’ কিন্তু পাশের দুই তৃণমূল কাউন্সিলরের ওয়ার্ডে ৫-৭জন সাফাইকর্মী থাকলেও তাঁরা কি সরব হচ্ছেন? স্মৃতিকণাদেবীর মতে, “সকলে তো সাফাই নিয়ে সমান ভাবনাচিন্তা
করে না।’’
কিন্তু কেন সরব হচ্ছেন না তৃণমূল পরিচালিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা? এই প্রশ্ন পুর-নাগরিকদের মনেও। যদিও ৭ জন সাফাইকর্মী নিয়ে কাজ চালানো ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রিঙ্কি ঘোষের স্বামী তৃণমূল নেতা অপূর্ব ঘোষ বলেন, “আমরা পুরসভায় কম সংখ্যক সাফাইকর্মীর কথা জানিয়েছি। আমাদের পুরবোর্ডে আসার পরে এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। সময় লাগবে।’’ সমস্যার কথা অজানা নয় পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের। তিনি বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে সাফাইকর্মীর অভাব ও বৈষম্য শহরে দুই-ই রয়েছে। তবে আমরা সাফাইকর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা শুরু করেছি। কর্মীদের বেতনের জন্য টাকা প্রয়োজন। সেটা কোত্থেকে পাওয়া যাবে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।’’ আগামী বোর্ড মিটিংয়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে
তাঁর আশ্বাস। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy