Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বহিরাগত তকমাই কাঁটা শাসকের

তিনিই প্রাক্তন বিধায়ক। পাঁচ বছর আগেই কলকাতার নাম করা চিকিৎসক হিসেবে হইহই করে জিতে গিয়েছিলেন ভিন এলাকায়। কিন্তু এই পাঁচ বছরেও ‘ঘরের লোক’ হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। তাই এলাকার বাসিন্দাদের কাছে এখন সুর্দশন ঘোষদস্তিদার ‘বহিরাগতশুরুটা হয়েছিল মাস ছয়েক আগে ছোট একটি পোস্টার দিয়ে। সেখানে বক্তব্য ছিল, ‘‘একটানা ২৫ বছর ধরে বঞ্চিত।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০১:১১
Share: Save:

তিনিই প্রাক্তন বিধায়ক। পাঁচ বছর আগেই কলকাতার নাম করা চিকিৎসক হিসেবে হইহই করে জিতে গিয়েছিলেন ভিন এলাকায়। কিন্তু এই পাঁচ বছরেও ‘ঘরের লোক’ হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। তাই এলাকার বাসিন্দাদের কাছে এখন সুর্দশন ঘোষদস্তিদার ‘বহিরাগতশুরুটা হয়েছিল মাস ছয়েক আগে ছোট একটি পোস্টার দিয়ে। সেখানে বক্তব্য ছিল, ‘‘একটানা ২৫ বছর ধরে বঞ্চিত। এবার বহিরাগত মানছি না, মানব না।’’ গত বছর নভেম্বর মাসে মহিষাদলের আজড়ায় প্রাক্তন বিধায়ক সুদর্শন ঘোষদস্তিদারের ডাকে বিজয়া সম্মিলনী ছিল। ওই দিনে ওই অনুষ্ঠান মঞ্চের কাছেই পড়েছিল ওই ব্যানারটা। ভোটের দিন যত এগিয়েছে, সেই দাবি ততই জোরালো হয়েছে।

প্রথমে মহিষাদলবাসীর ব্যানারে পোস্টার পড়লেও পরবর্তী সময়ে মহিষাদলের বেশ কিছু প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা এবং মহিষাদলের অনেক বাসিন্দাই একই দাবিতে সরব হন। এমনকী গত ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি রঘুনাথ পান্ডার নেতৃতে স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে মহিষাদল বিধানসভা নাগরিক মঞ্চ তৈরি হয়। কিন্তু ভোট ঘোষণার দিন মহিষাদলের প্রার্থী হিসাবে তৃণমূল সুদর্শনবাবুর নাম ঘোষণা করে। এর পরই মহিষাদল বিধানসভা নাগরিক মঞ্চ মহিষাদলের চিকিৎসক সুব্রত মাইতিকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ‘পালতোলা নৌকা’ চিহ্নে দাঁড় করিয়েছে। তাই তিনিই এ বার বাম-কংগ্রেস জোটের নির্দল প্রার্থী।

সুদর্শনবাবুকে নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগের কারণ কী?

স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘‘সুদর্শনবাবুকে তো এলাকায় দেখাই যায় না। পরিযায়ী পাথির মতো আসে আর যান। তার থেকে সুব্রতবাবুই ভাল। দরকারে ওঁকেই পাওয়া যাবে।’’ মহিষাদলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, একটানা ২৫বছর ধরে সিপিএম থেকে শুরু করে কংগ্রেস, তৃণমূল সব দলই বহিরাগতদের এনে মহিষাদল প্রার্থী করেছে। গত বছর এখান থেকে তৃণমূল প্রার্থী করেছিল সুদর্শন ঘোষদস্তিদারকে। এবারও তাঁকে দল প্রার্থী করেছে।

তাহলে শুধুই কি বহিরাগত বলেই ক্ষোভ সুদর্শবাবুর বিরুদ্ধে? উন্নয়ন কি কিছুই হয়নি? সেখানেও পাল্টা যুক্তি রয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের। কাজ যে হয়েছে সেটা মেনে নিয়েছেন অবশ্য এলাকার বাসিন্দারা। বাড়ির সামনের বারান্দায় বসে বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘যে ক্ষমতায় আসবে উন্নয়ন করা তো তার দায়িত্ব। এতে নতুনত্ব কী আছে?’’

আবার সুদর্শনবাবুর লড়াই শুধু জোটের স্থানীয় চিকিৎসক সুব্রত মাইতির বিরুদ্ধে নয়, তাঁকে লড়তে হচ্ছে দলের গোষ্ঠী কোন্দলের বিরুদ্ধেও। মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির দলের দুই প্রাক্তন শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ রঘুনাথ পণ্ডা, নির্মল প্রামাণিক, দলের ব্লক কমিটির সদস্য প্রশান্ত বেতাল প্রকাশ্যে সুদর্শনবাবুর বিরোধিতায় নেমেছেন। রঘুনাথবাবুকে দল বহিষ্কার করলেও প্রশান্তবাবু এখনও কোনও চিঠি পাননি। এই সব নেতারা স্থানীয় প্রার্থী হিসাবে সুব্রত মাইতির সমর্থনে প্রচারেও বেরোচ্ছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা প্রচার করছেন। রঘুনাথবাবু সরসরি জোট প্রার্থীকে সমর্থনের কথা স্বীকার করেছেন। বলেন, ‘‘‘‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা বঞ্চিত। সব সময় দেখেছি মহিষাদলে বহিরাগত প্রার্থী দাড় করানো হয়।বি ধায়ক হওয়ার মত কি মহিষাদলের যোগ্য কেউ নেই? তাই আমরা সুব্রত মাইতিকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়েছি। বাম কংগ্রেস জোট তাঁকে সমর্থন করেছে।”

আবার নারদ কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে তাঁরই স্ত্রী কাকলি ঘোষদস্তিদারের। সেটাও কপালে ভাঁজ বাড়িয়েছে সুদর্শনবাবুর।

বিধানসভা ভিত্তিক ফল বলছে, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট পেয়েছিল ৫৫.২৯ শতাংশ আর বামেদের দখলে ছিল ৫২.৭৩ শতাংশ। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কমে গিয়েছে তৃণমূলের ভোট প্রাপ্রির হার প্রায় ৩ শতাংশ। অন্য দিকে, সেই সময বাম-কংগ্রেস জোট হলে যে শতাংশ দাঁড়াচ্ছে সেখানে দেখা যাচ্ছে বোট প্রাপ্তি কমেছে মাত্র ১ শতাংশ।

এমন পরিস্থিতিতে অবশ্য হার মানতে রাজি নন সুদর্শনবাবু। বলেন, ‘‘সিপিএম ৩৪বছর ধরে এলাকায় উন্নয়ন করেনি। আমি কত উন্নয়ন করেছি, সেটা এলাকার মানুষ ভাল করেই জানেন। বিরোধীরা কিছু বলতে না পেরে ওই বহিরাগত বিষয়টাকে নাড়াচাড়া করছেন। ওতে কাজের কাজ কিছুই হবে না।’’ আর সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘মানুষ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভ করে। তাই স্থানীয় প্রার্থীর দাবি উঠেছিল। তাছাড়াও বিদায়ী বিধায়ককে মহিষাদলের উন্নয়নের বিষয়ে বিধানসভায় মুখ খুলতে দেখা যায়নি। তিনি স্থানীয় হলে এটা হত না।’’

জোটের পাল তোলা নৌকোয় কতটা হাওয়া লাগে এখন সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election mahishadal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE