ছবিতেই: নমো-নমো করে বিশ্বকর্মা বন্দনা রেল কারখানার ফিটিংস শপে। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকে আকাশে মেঘ-রোদের খেলা। তারই মাঝে গাড়ি, মোটরবাইক থেকে যন্ত্রপাতি— সব সাফসুতরো করে মালা পড়িয়ে চলেছে পুজো। বিশ্বকর্মা আরাধনাতেই আগমনীর সুর হাজির খড়্গপুরে।
এই রেলশহরে দেব কারিগরের পুজো ঘিরে প্রতিবারই আলাদা জৌলুস থাকে। তবে সেই জাঁক এ বার অনেকটাই ফিকে ছিল রেল কারখানার বিভিন্ন বিভাগে। ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই রেল কারখানার প্রতিটি বিভাগেই এ বার নমো-নমো করে হয়েছে বিশ্বকর্মা পুজো। ৭-৮ ফুটের বদলে মূর্তি নেমে এসেছে ১-২ ফুটে। অনেক জায়গায় আবার বিশ্বকর্মার ছবিতে মালা দিয়ে পুজো হয়েছে। মাইকে গান, জলসার আয়োজনও ছিল না। ডিজেল শপের কর্মী তথা কারখানার মেন্স ইউনিয়নের ব্রাঞ্চ-১ সভাপতি কবিন্দ্রনাথ মল্লিকের কথায়, “আমাদের শপের তিনজনকে এখনও চাকরিতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। ওয়াগন শপে এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তার উপর মাইক ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যায়নি। তাই নমো-নমো করে পুজো হয়েছে।”
চিফ ওয়ার্কস ম্যানেজার একে গুপ্তের সঙ্গে এ দিন বারবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও পাওয়া যায়নি। তবে রেল কারখানা সূত্রে খবর, বছর দু’য়েক ধরে একাংশ শপে বিশ্বকর্মা পুজোর জলসায় অশ্লীল নাচ-গান ঘিরে প্রশ্ন উঠছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়েই এ বার মাইক বাজানোর অনুমতি দেননি চিফ ওয়ার্কস ম্যানেজার। ফিটিংস শপের পুজোয় মূর্তির বদলে পুজো হয়েছে বিশ্বকর্মার ছবিতে। ওই শপের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জীব রাও বলেন, “মাইকই যখন বাজবে না, তখন বাড়তি খরচ করে লাভ কী! ” মনমরা ভাব ডিজেল পিওএইচ শপ, ইএমইউ মোটর কোচ পিওএইচ শপ, ডিজেল লোকোমোটিভ শপ, ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ শপে, টুল শপ, পেইন্ট শপে। পেইন্ট শপের কর্মী তথা মেন্স কংগ্রেস নেতা রণধীশ চক্রবর্তী বলছিলেন, “চিফ ওয়ার্ক ম্যানেজার মাইক ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়ার কারণ আমাদের জানাননি।”
এমন জাঁক-হীন বিশ্বকর্মা দেখতে এসে হতাশ দূরদূরান্তের মানুষজন। হিজলি স্টেশন এলাকার সন্ধ্যা সরেন, কলাইকুণ্ডার তরণী দে বলছিলেন, “প্রতিবার বিশ্বকর্মা পুজো দেখতে রেল কারখানায় আসি। কিন্তু এ বার পুজো দেখে মন ভরল না।”
খড়্গপুরের অন্যত্র অবশ্য বিশ্বকর্মা পুজোয় জাঁক ছিল যথেষ্ট। কারখানার বাইরে বোগদা চত্বরে রেলের একাধিক বিভাগে তারস্বরে মাইক বাজিয়ে চলেছে পুজো। সঙ্গে প্রদর্শনী। ইলেক্ট্রিক্যাল ট্র্যাকশন রোলিং বিভাগে রেলের ট্র্যাকশন ব্যবস্থায় পেন্টোয় বিদ্যুৎ ব্যবহারে কীভাবে ইএমইউ ট্রেন চলে তার মডেল দেখানো হয়েছে। ওই বিভাগের কর্মী কমিটির কোষাধ্যক্ষ শম্ভুশরণ সিংহ বলেন, “এমনিতে আমরা ২৫ কিলোভোল্টে কাজ করি। আর এখানে ১২ ভোল্টে ট্রেন চালিয়ে দেখানো হচ্ছে।” নজর কেড়েছে খরিদা মন্দিরতলায় গাড়ি চালকদের বিশ্বকর্মা। রাজ পোশাকে ১৮ ফুটের দেবকারিগর দেখতে ভিড় জমেছে। কমিটির সম্পাদক চন্দন নাগ বলেন, “দেড় লক্ষ টাকা বাজেট। ঠাকুর দেখতে যে ভিড় হচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে আমাদের আয়োজন সফল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy