প্রতিবার বর্ষা এলেই বুক কাঁপত পশুপতি ভৌমিকের। বৃষ্টিতে কখনও মাটির দেওয়াল ধসে পড়ত তো কখনও ছাদ চুঁয়ে জল। ভালভাবে ঘর সারানোর জন্য তিল তিল করে ব্যাঙ্কে টাকা জমিয়েছিলেন হলদিয়ার বাজিতপুরের বছর ষাটেকের এই রিকশাচালক। বর্ষার আগে ঘর সারাবেন বলে টাকা তুলতে ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন। ব্যাঙ্কে গিয়ে মাথায় হাত পড়ে তাঁর। ব্যাঙ্ক থেকে তাঁকে বলা হয়, ২৯ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কয়েক দফায় ১ লক্ষ ৫২ টাকা তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে।
শুধু হলদিয়া নয়, দিঘা ও মহিষাদলেও একই ধরনের ঘটনা সামনে আসায় নড়েচড়ে বসেছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখার অফিসাররা। পূর্ব মেদিনীপুরের সাইবার ক্রাইম বিষয়ে অফিসার সমীর সন্নিগ্রাহী জানান, দিঘা ও মহিষাদলের ঘটনায় কিছু সূত্র পাওয়া গেলেও হলদিয়ার ঘটনা তাঁদের অবাক করেছে। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে ওই ব্যক্তির এটিএম কার্ড ক্লোন করে জালিয়াতি করা হয়েছে।
কী ভাবে ক্লোন হয় এটিএম কার্ড?
জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে এটিএম কাউন্টারে গ্রাহককে সাহায্যের নাম করে এগিয়ে আসে জালিয়াত। মূলত রক্ষীবিহীন এটিএম গুলিকেই টার্গেট করা হয়। প্রতারণা চক্রের হাতে একবার এটিএম কার্ড দিলেই হল। জালিয়াতের হাতে থাকা স্মার্ট ফোন দিয়েই কাজ সেরে ফেলা হয়। স্মার্ট ফোনে একটি বিশেষ সফটওয়ার আগে থেকেই ইনস্টল করা থাকে। তার মাধ্যমেই নিমেষে এটিএম কার্ড থেকে যাবতীয় তথ্য স্মার্ট ফোনে নিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া অনেক এটিএম মেশিনের সামনে ক্যামেরা লুকনো থাকে। গ্রাহক পাসওয়ার্ড দেওয়ার সময় লুকনো ক্যামেরায় তা ধরা পড়ে যায়। এর পর একটি খালি (ব্ল্যাঙ্ক) এটিএম কার্ডে যাবতীয় তথ্য আপলোড করে নেওয়া হয়। ওই কার্ড ব্যবহার করেই টাকা তুলে নেওয়া যায়।
হলদিয়া, দিঘা ও মহিষাদল তিনটি ঘটনাতেই থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ জানিয়ছে তদন্ত চলছে। তবে হলদিয়ার ঘটনায় পশুপতিবাবু যে এটিএমে জালিয়াতের খপ্পরে পড়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার সিসি টিভির ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না। হলদিয়ার ব্রজলাল চকের যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পশুপতিবাবুর অ্যাকাউন্ট ছিল তার ম্যানেজার তপন কুমার রাউথ বলেন, ‘‘একজন গ্রাহক প্রতারিত হয়েছেন জেনেছি। পুলিশ কোনও তথ্য চাইলে অবশ্যই সহযোগিতা করব।’’
কিন্তু এ ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়? সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে খুব সাবধানে এটিএম ব্যবহার করতে হবে। রক্ষীবিহীন এটিএম এড়ানোই ভাল। কয়েক মাস অন্তর এটিএম পিন নম্বর এবং নেট ব্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড বদলানো প্রয়োজন। ফোনে কেউ ডেবিট কার্ডের পিন বা কার্ড নম্বর জানতে চাইলে তা না বলা। প্রয়োজনে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করা। পাশাপাশি, প্রায় প্রতিটি রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্কের তরফেই জানানো হয়েছে, তাঁরা গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত সচতেন করেন যে, ব্যাঙ্কের তরফে কেউ ফোন করে এটিএম কার্ডের নম্বর বা পিন নম্বর জানতে চাইলে গ্রাহকেরা যেন তা না দেন। কারণ ব্যাঙ্ক কোনও গ্রাহকের কাছ থেকে এ ভাবে পিন নম্বর বা কার্ড নম্বর জানতে চায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy