Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

রূপনারায়ণে ভাঙন-আতঙ্ক

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক শহর থেকে কোলাঘাটগামী রূপনারায়ণের তীর বরাবর মূল নদীবাঁধের পাশেই রয়েছে গোবরা ও আচাইপুর গ্রাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক ও কাঁথি শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৬
Share: Save:

বাড়ির পাশে রূপনারায়ণ। তার তীরে চাষজমিতে ভাঙন চলছিল কয়েকমাস ধরেই। টানা বৃষ্টি আর ভরা কোটালে সেই ভাঙনই ভয়ানক হয়ে উঠল তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই -১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। রূপনারায়ণের তীরে গোবরা, আচাইপুরের মতো গ্রামে বহু বাড়ির পাশেই খরস্রোত বইছে। নদীগর্ভে মিশে যাওয়ার উপক্রম ২০টিরও বেশি বাড়ির।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক শহর থেকে কোলাঘাটগামী রূপনারায়ণের তীর বরাবর মূল নদীবাঁধের পাশেই রয়েছে গোবরা ও আচাইপুর গ্রাম। বাঁধের পাশে প্রায় দু’শো পরিবারের বাস। এই সব বাড়ি থেকে মাত্র ২৫-৫০ ফুট দূরে বইছে রূপনারায়ণ। ভাঙন-আতঙ্ক রাতের ঘুম কেড়েছে গোবরা গ্রামের প্রায় ১২০টি ও আচাইপুর গ্রামের ৮০টি পরিবারের। যে কোনও সময় নদীতে মিশে যেতে পারে গ্রামের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রও। আচাইপুরের শ্রীদাম সামন্তের বাড়ির পাশে এখন খরস্রোত। শ্রীদামবাবু বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগেও বাড়ির সামনে পুব দিকে প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর চর ছিল। সেই জমিতে ধান, আলু , ঝিঙে, পটল , কুমড়োর মতো নানা আনাজ চাষ হতো। রূপনারায়ণের ভাঙনে সেই চাষজমি আর নেই। এ বার ভরা কোটালে বৃহস্পতিবার বাঁধ ভেঙেছে। এখন হয়তো বাড়িটাও চলে যাবে।’’ এলাকার বাসিন্দা কাকলি সামন্ত বলছিলেন, ‘‘স্রোত ক্রমশ বাড়ির কাছে চলে আসছে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে খুব আতঙ্কে রয়েছি।’’

ভাঙন ঠেকাতে প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দা শ্রীদাম সামন্ত, নারায়ণ সামন্ত, সতীশ গরানির মতো গ্রামবাসীরা। পঞ্চায়েত সমিতির বরাদ্দ করা প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকায় কাজও শুরু হয়েছিল কিছু দিন আগে। কাঠের গুঁড়ি পুঁতে বোল্ডার ফেলার তোড়জোড় চলছিল। কিন্তু এই দুর্যোগে বেশিরভাগ কাঠের গুঁড়ি ভেসে গিয়েছে। শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বামদেব গুছাইত বলেন, ‘‘নিম্নচাপের জেরে প্রবল জোয়ারের ধাক্কায় ভাঙনরোধের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’দুর্বল সমুদ্রবাঁধ উপচানো জলে বৃহস্পতিবার রাতেই বিপর্যস্ত হয়েছিল স্থানীয় জামড়া শ্যামপুর গ্রাম। তবে শুক্রবার রাতের জোয়ারে নতুন করে আর ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। শনিবার শঙ্করপুর, জামড়া শ্যামপুর, জলধা, চাঁদপুর, তাজপুর প্রভৃতি উপকূলবর্তী গ্রামগুলি ও সমুদ্রবাঁধ পরিদর্শন করেন সেচ দফতরের প্রতিনিধিরা এবং স্থানীয় বিধায়ক অখিল গিরি। অখিলবাবু জানান, জরুরি ভিত্তিতে বালির বস্তা ফেলে বাঁধ মেরামত শুরু করেছে সেচ দফতর। শঙ্করপুর থেকে জলধা মৎস্য খটি পর্যন্ত ২.৫ কিলোমিটার সমুদ্রপাড় গ্রানাইট পাথর দিয়ে মেরামত করা হবে। শঙ্করপুর ১ নম্বর ঘাট থেকে মৎস্যবন্দর পর্যন্ত ২.৮ কিলোমিটার সমুদ্রপাড় বাঁধানোর কাজও অবিলম্বে শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rupnarayan River Erosion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE