Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
নালিশও উঠছে নানাবিধ

আরও নাম, বহর বাড়ছে স্বাস্থ্য বিমার

রাজ্যের প্রায় ৬০ লক্ষ পরিবার এই স্বাস্থ্য বিমার আওতায় এসেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ। এই স্বাস্থ্য বিমা কার্ড থাকলে যে কোনও পরিবার নির্দিষ্ট তালিকাভুক্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বছরে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ‘ক্যাশলেস’ চিকিৎসার সুযোগ মেলে।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৪০
Share: Save:

বাড়ির উঠোনে পড়ে পা ভেঙে গিয়েছিল বিক্রমজিৎ ঠাকুরের। ভর্তি হয়েছিলেন মেদিনীপুরের এক নার্সিংহোমে। কিন্তু সেখানে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় পেশায় দিনমজুর বিক্রমজিতের। তিনি বলেন, “অস্ত্রোপচারের আগে একের পর এক পরীক্ষা করতে বলা হয়। প্রায় সবই বাইরে থেকে করতে হয়েছে। কিন্তু ভর্তির দিন চারেক পরেও অস্ত্রোপচার করা হয়নি।’’ বিক্রমজিতের স্ত্রী শিখার স্বাস্থ্য বিমার কার্ড রয়েছে। পরে অন্য নার্সিংহোমে গিয়ে বিক্রমজিৎ জানতে পারেন, আগের ওই নার্সিংহোম স্বাস্থ্য বিমার কার্ড থেকে ১৮ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে। অথচ সেখানে তাঁর অস্ত্রোপচারই হয়নি। নানা মহলে নালিশ জানিয়ে পরে অবশ্য টাকা ফেরত পেয়েছেন বিক্রমজিৎ।

রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনায় (আরএসবিওয়াই) সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে এমন নানা অভিযোগ হামেশাই ওঠে। কার্ড থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা না করে রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া, স্বাস্থ্য বিমার আওতায় থাকা রোগীদের বাইরের দোকান থেকে নিজেদের খরচে ওষুধ কেনা-সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা মানছেন, “একবার মৌখিক ভাবে অভিযোগ শুনেছিলাম যে কার্ড দেখানোর পরেও এক নার্সিংহোম চিকিৎসা করতে অস্বীকার করছে। জানিয়েছে, এই কার্ডে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। টাকা লাগবে।”

এই সব নালিশের মাঝেই আরও উপভোক্তাকে এই প্রকল্পে আনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এ ব্যাপারে রাজ্যের নির্দেশিকা পেয়ে জেলা পদক্ষেপ করছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, “রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনায় নতুন করে নাম নথিভুক্ত হবে। এ ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” ইতিমধ্যে জেলা থেকে ব্লকে ব্লকে প্রয়োজনীয় নির্দেশও পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ইমপ্লিমেন্টিং অফিসার তথা জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারঙ্গির কথায়, “এর ফলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ উপকৃত হবেন।”

রাজ্যের প্রায় ৬০ লক্ষ পরিবার এই স্বাস্থ্য বিমার আওতায় এসেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ। এই স্বাস্থ্য বিমা কার্ড থাকলে যে কোনও পরিবার নির্দিষ্ট তালিকাভুক্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বছরে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ‘ক্যাশলেস’ চিকিৎসার সুযোগ মেলে। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ২৫টি বেসরকারি হাসপাতাল- নার্সিংহোম এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। প্রশাসনের দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুরে এই প্রকল্প ভাল ভাবেই চলছে। তবে জেলার একাংশ স্বাস্থ্যকর্তাও মানছেন, খামতি কিছু রয়েছে। তার মোকাবিলা করাটা জরুরি।

সমস্যাটা ঠিক কোথায়?

কোথাও কোথাও সরকারি হাসপাতালের একাংশ চিকিসক রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে কমিশন আদায় করেন বলে অভিযোগ। আবার কোথাও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা নার্সিংহোম বিমা তালিকার আওতায় থাকা সত্ত্বেও সেখানকার চিকিৎসকেরা রোগীর থেকে চিকিৎসা খরচ নেন। শুধু চিকিৎসক নন, একাংশ কর্মীও এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। একাংশ উপভোক্তার দাবি, এই সব চক্র ভাঙতে না পারলে স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বে পারে।

নানা অভিযোগ যে ওঠে তা মানছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। তাঁর কথায়, “কখনও কখনও অভিযোগ আসে। তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” জেলার আর এক স্বাস্থ্য কর্তার সংযোজন, “নতুন করে নাম নথিভুক্তির কাজ দ্রুতই শুরু হবে। আগামী দিনে জেলায় স্বাস্থ্য বিমার কাজ যাতে আরও ভাল ভাবে চলে সেই দিকটিও দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE