Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মোবাইলে মগ্ন শিক্ষক, শিকেয় পড়া

ক্লাস নিতে গিয়ে মোবাইলে কথা বলে চলেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা। সব সময় যে জরুরি ফোন তা নয়, চলছে নিখাদ আড্ডা। কেউ আবার ক্লাস নিতে নিতেই মেতে রয়েছেন হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুকে। ক্লাসঘরে মোবাইল না নিয়ে ঢোকার নির্দেশ রয়েছে শিক্ষা দফতরের। তা উড়িয়েই ফোনে ডুবে থাকছেন একাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫৯
Share: Save:

ক্লাস নিতে গিয়ে মোবাইলে কথা বলে চলেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা। সব সময় যে জরুরি ফোন তা নয়, চলছে নিখাদ আড্ডা।

কেউ আবার ক্লাস নিতে নিতেই মেতে রয়েছেন হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুকে। ক্লাসঘরে মোবাইল না নিয়ে ঢোকার নির্দেশ রয়েছে শিক্ষা দফতরের। তা উড়িয়েই ফোনে ডুবে থাকছেন একাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা।

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা স্কুল পরিদর্শক অমর শীল বলছেন, ‘‘আগের থেকে ক্লাসে মোবাইল ব্যবহার অনেকটাই কমেছে, এটা ঠিক। তবে মনে হচ্ছে, ফের স্কুলে স্কুলে নির্দেশ পাঠিয়ে ক্লাসে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিতে হবে।’’ জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি শ্যামপদ পাত্রও মানছেন, “ক্লাসে শিক্ষকদের মোবাইল ব্যবহার বন্ধের ক্ষেত্রে কিছুটা ঘাটতি থেকে গিয়েছে।”

সম্প্রতি জেলার এক স্কুলে গিয়ে হতবাকই হয়েছিলেন এক বিদ্যালয় পরিদর্শক। পড়ুয়ারা ক্লাসে হৈহল্লা করছে। আর ক্লাস ছেড়ে স্কুলের মাঠে মোবাইলে গল্পে ব্যস্ত শিক্ষক। তিনি এতটাই ফোনে মগ্ন যে স্কুল পরিদর্শকের আসার বিষয়টিও টের পাননি। ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিস ধরানো হয়েছিল। তারপরেও ছবিটা বিশেষ পাল্টায়নি। বেশিরভাগ স্কুলেই ক্লাস ফেলে মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন একাংশ শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক কড়া হলে কথা বলার বদলে চলে হোয়াটস আ্যাপ, মেসেঞ্জারে মেসেজ চালাচালি।

ভাদুতলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরীর কথায়, ‘‘কেউ কেউ ক্লাসে মোবাইল নিয়ে যান না। আবার কয়েকজন নিয়েও যান। তবে এটা ঠিক যে, ক্লাসরুমে মোবাইল ‘সাইলেন্ট’ রাখাটা চালু করতে পেরেছি।’’ শালবনি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বাসবী ভাওয়ালের দাবি, “ক্লাসরুমে কাউকেই মোবাইল নিয়ে যেতে দেওয়া হয় না। এই নিয়মটা আমাদের স্কুলে কঠোর ভাবে মানা হয়।” লক্ষ্মীপুর হাইস্কুলের স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি শঙ্কর চৌধুরীর কথায়, “ছাত্র-শিক্ষক, উভয়রেই ক্লাসরুমে মোবাইল নিয়ে যাওয়া বারন। এমনকী প্রার্থনা ও মিড ডে মিলের সময়েও মোবাইল সাইলেন্ট রাখতে বলা হয়েছে। তবে কোনও শিক্ষকের বাড়ির কেউ অসুস্থ থাকলে মোবাইল নিয়ে ক্লাসরুমে যেতে আপত্তি করা হয় না।’’

ক্লাসেও শিক্ষকদের মোবাইল মগ্নতার জন্য যারা সবথেকে ভুক্তভোগী, সেই পড়ুয়ারা কিন্তু অন্য কথা বলছে। এক নবম শ্রেণির এক ছাত্র বলল, “অনেক সময়েই ক্লাস শুরুর পর আমাদের পড়া দিয়ে স্যার টেবিলে বসে মোবাইলে কী সব করেন। মনে হয়, কখনও হোয়াটস অ্যাপ করেন, আবার কখনও ভিডিও দেখেন। পড়তে পড়তে সে দিকে চোখ চলে যায়।’’ ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর কথায়, “আমাদের এক শিক্ষিকার ঘনঘন ফোন আসে। ক্লাসের মধ্যেই তিনি ফোন ধরেন। আবার কখনও ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন।’’ প্রাথমিকের এক খুদে পড়ুয়ারও অভিজ্ঞতা, “আমাদের এক দিদিমণি তো সারাক্ষণ ফোনে কথা বলেন। তখন আমাদের কেউ জোরে কথা বললে উনি ভীষণ রেগে যান। আমাদের বকাবকি করেন।’’

পরিস্থিতি কবে বদলাবে সে দিকেই তাকিয়ে পড়ুয়ারা। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আহ্বায়ক রাজীব মান্নাও বলেন, “আমরাও শিক্ষকদের কাছে ক্লাসরুমে মোবাইল না ব্যবহার করার আবেদন জানিয়েছি। যাতে সার্বিক সাফল্য মেলে সে জন্য আরও প্রচার চালাব। অঙ্কন: মণীশ মৈত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mobiles phones teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE