Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নিজে হাতে স্কুল সাফ করেন শিক্ষকই

হাতে ঝাঁটা আর ফিনাইলের বোতল! আদুল গায়ে গামছা গোটানো হাঁটু পর্যন্ত! না, কোনও সাফাই কর্মী নয়। শৌচাগার সাফ রাখতে স্কুল ছুটির পরে এই ভূমিকাতেই দেখা যায় ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া কেসিএম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষককে সুব্রত মহাপাত্রকে।

সাফাই: শৌচাগার পরিষ্কারের কাজে সুব্রতবাবু। নিজস্ব চিত্র

সাফাই: শৌচাগার পরিষ্কারের কাজে সুব্রতবাবু। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৭ ০১:০৬
Share: Save:

হাতে ঝাঁটা আর ফিনাইলের বোতল! আদুল গায়ে গামছা গোটানো হাঁটু পর্যন্ত! না, কোনও সাফাই কর্মী নয়। শৌচাগার সাফ রাখতে স্কুল ছুটির পরে এই ভূমিকাতেই দেখা যায় ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া কেসিএম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষককে সুব্রত মহাপাত্রকে। তাঁর সঙ্গে কাজে হাত লাগান ভোকেশনাল কোর্সের বিজ্ঞান শিক্ষক সৌমেন হুই, স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষক পল্টু দাস, শিক্ষাকর্মী রাজেন্দ্রনাথ সরেন ও নৃপেন নায়েক এবং স্কুলের নৈশ প্রহরী চণ্ডী দে। মাঝে মধ্যে আবাসিক ছাত্ররাও হাত লাগায় কাজে।

স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের শৌচাগার, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শৌচাগার এবং গোটা স্কুল চত্বর নিয়মিত সাফ করেন তাঁরা। বেলিয়াবেড়া ব্লকের সুপ্রাচীন এই স্কুলের বিশাল চত্বরে রয়েছে স্কুলের একাধিক ভবন। স্কুলের নিজস্ব সাফাই কর্মী নেই। ঠিকা একজন স্কুল চত্বর ঝাঁট দেন। স্কুলের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা সাড়ে আটশোর কাছাকাছি। ফলে, প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর ধুলোয় ভরে যায় বারান্দা থেকে ক্লাসঘরের মেঝে।

এত পড়ুয়ার জন্য স্কুলে রয়েছে মাত্র তিনটি শৌচাগার। একটি ছেলেদের, দু’টি মেয়েদের। আর দু’টি শৌচাগার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ফলে, শৌচাগারগুলি অপরিষ্কার হয়ে যায়। সাফাই কর্মীর অভাবে শৌচাগারগুলি পরিষ্কার করার মতো কেউ নেই। তবে মুশকিল আসান আছেন সুব্রতবাবু। এ জন্য সমস্যা হচ্ছে না স্কুল কর্তৃপক্ষেরও। সুব্রতবাবু তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পরিচ্ছন্ন করে তোলেন স্কুল চত্বর। স্কুল ছুটির হলে মাঝে মধ্যেই ঝাঁটা হাতে শুরু হয়ে যায় নির্মল বিদ্যালয় অভিযান।

সুব্রতবাবুর কথায়, “শৌচাগার ও চত্বর নোংরা থাকলে নানা রকম রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে। স্কুল হল বিদ্যামন্দির। তাই শিক্ষাঙ্গণ পরিষ্কার রাখার জন্য সাধ্য মতো চেষ্টা করি। সহ শিক্ষক ও কর্মীরাও যথেষ্ট সাহায্য করেন।” সুব্রতবাবু মনে করেন, এটাও এক ধরনের শিক্ষা। শিক্ষকদের এমন ভূমিকায় দেখে পড়ুয়ারাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাঠ শিখছে।” স্কুলের বৃত্তিমূলক পাঠক্রমের শিক্ষক সৌমেন হুই, শিক্ষাকর্মী নৃপেন নায়েক, রাজেন্দ্রনাথ সরেন-রা বলেন, “পরিশ্রমের কাজ হলেও যখন চারপাশ ঝকঝক করে, তখন ভীষণ ভাল লাগে। পড়ুয়ারাও শিখছে কোনও কাজই ছোট নয়।”

শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বেলিয়াবেড়ার বিডিও কৌশিক ঘোষ বলেন, “স্কুলটিকে নির্মল রাখার এই দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE