পাশাপাশি: মন্দির-মসজিদে মাঝে শুধু একটি পাঁচিল। নিজস্ব চিত্র
দুর্গোৎসবের একাদশীতেই এ বছর পালিত হবে মহরম। রাজ্য জুড়ে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তি-শৃঙ্খলার প্রশ্নে ওই দিন দুর্গাপুজোর বিসর্জন বন্ধ রাখার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু হাইকোর্ট তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে— যে রাজ্যে সম্প্রীতির আবহ রয়েছে, সেখানে দু’টি অনুষ্ঠান কেন একসঙ্গে হতে পারবে না!
পশ্চিমবঙ্গের শহরে, শহরতলিতে, প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জে দুই সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান একসঙ্গে পালন করার অজস্র নজির রয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরও তেমনই। ওই একই দিনের জন্য অন্য ভাবে তৈরি হচ্ছে রামনগরের ঠিকরাহাটি। পূর্ব মেদিনীপুরের এই এলাকায় একশো বছরের পুরনো মসজিদের পাশেই আয়োজন করা হয় দুর্গোৎসবের। এ বার সেই পুজোর ৭৪ বছর। তাই তৈরি হচ্ছে স্থায়ী দুর্গাদালান, মসজিদ থেকে মেরেকেটে ১০ ফুট দূরত্বে। ভিতরে ৩০ ফুটের মৃন্ময়ী দেবী মূর্তি। শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা এখন সারা গ্রাম জুড়ে। চক্ষুদান সারা হয়েছে মহালয়ায়। আর যা বাকি রয়েছে সামলাতে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পী দেবেন্দ্র কামিল্যা। তাঁর সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন হেদাৎ সাহা।
এই পুজোর কথা শুনে মুগ্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। ঠিকরাহাটির নতুন নামকরণও করে ফেলেছেন তিনি— ‘সম্প্রীতি নগর’। স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য এর মধ্যে নতুন করে বলার মতো কিছুই খুঁজে পান না। প্রতি বছরই ইদে আর দুর্গোৎসবে একসঙ্গে মেতে ওঠেন সকলে। এ বার আয়োজন একটু আলাদা। একে তো পুজোর ৭৪ বছর, তার উপর বিজয়া দশমী শেষ হতে না হতেই মহরম। কোনটা ফেলে কোনটা করেন!
প্রতি বছরই ঠিকরাহাটিতে প্রতিমা তৈরির কাজে হাত লাগান মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরা। আবার মহরমের তাজিয়া তৈরি করেন হিন্দুরা। যোগ দেন পদযাত্রাতেও। দুর্গাপুজো করা হয় ‘জাগরণ সঙ্ঘ’-এর ব্যানারে। ক্লাবের সহ-সম্পাদক সত্যরঞ্জন দত্ত বলেন, “এখানে দুই সম্প্রদায় একসঙ্গে আনন্দ-উৎসবে যোগ দেয়।” একই কথা বলেন ‘কাবরা তয়তল নুরানি মসজিদ কমিটি’-র সম্পাদক হেদাৎ সাহাও।
পুজো কমিটির সম্পাদক সুব্রত বেরার কথায়, “মহালয়ার দিন আয়োজন করেছিলাম রক্তদান শিবিরের। উভয় সম্প্রদায়ের ৭৫ জন রক্তদান করেন।” মহরম কমিটির সদস্য হাতিম সাহার কথায়, “একাদশীর দিন মহরমে যোগ দেবেন এলাকার সমস্ত মানুষ।” পুজো উপলক্ষে মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নানা প্রতিযোগিতা ও বস্ত্রদানে যোগ দেন স্থানীয় সোবান সাহা, আলিয়া সাহা, শেখ হায়দাররা। আর মহরমের আয়োজনে রাতভর কাজ করেন নিবাসচন্দ্র সার, প্রভাতচন্দ্র জানারা।
দুর্গোৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাগরণ সঙ্ঘের সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে-র কাছেই এই উৎসবের কথা জানতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রীতির চিত্রে মুগ্ধ হয়ে পরিদর্শনের জন্য এখানে পর্যটন দফতরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। সুধাংশুবাবুর কথায়, “মানবতার জয় হয়েছে এখানে। এমন পুজো আয়োজন করতে পেরে আমরা খুশি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy