তৃণমূলের মিছিলের জেরে যানজট শালবনিতে।— সৌমেশ্বর মণ্ডল
বামেদের শিল্প-মিছিল এবং সভার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শালবনিতে পাল্টা কর্মসূচি করল তৃণমূল। হল মহামিছিল, সভা। শাসক দলের জেলা নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিলেন, তাঁরা ঘর গোছাতে নেমে পড়েছেন।
জাঠার পর শিল্প-পদযাত্রায় দলের বুথ সংগঠনে কিছুটা প্রাণ এসেছে বলে দাবি করেন জেলার বাম-নেতৃত্ব। আর তার সমর্থনে তাঁরা বলছেন, সিঙ্গুর থেকে শালবনি পদযাত্রার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভিড়ের কথা। শুক্রবার পদযাত্রা শেষে শালবনির সভাতেও ভিড় হয়েছিল ভালই। সেখানে শিল্প প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। বুঝিয়ে দেন, তেলেভাজা শিল্প, মুড়িভাজা শিল্পের গল্প শুনিয়ে লাভ নেই! রাজ্যে যে শিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে, ক্ষমতায় ফিরলে তা বামেরাই রূপায়িত করবে। শালবনিতে ইস্পাত কারখানাই হবে বলে ঘোষণাও করেন তিনি।
জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, বামেদের শিল্প-পদযাত্রায় সাড়া দেখে তৃণমূল যে শঙ্কিত তা এই পাল্টা কর্মসূচি থেকেই স্পষ্ট। শিল্প নিয়ে বামেদের ‘কুত্সা-অপপ্রচারের’ জবাব দিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতাদের শালবনিতে এনে সভা করার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। আগামী বৃহস্পতিবার এই সভা হওয়ার কথা। গত লোকসভা ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুরে বামেদের ফল আশানুরূপ হয়নি। ফল পর্যালোচনা করে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খোঁজা শুরু করে বামেরা। নিচুতলায় নির্দেশ আসে, আন্দোলনে স্থানীয় বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সঙ্গে ‘তারুণ্যের’ সঞ্চার ঘটিয়ে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে চাইছে সিপিএম। ‘বৃদ্ধতন্ত্রের’ অবসান ঘটানোর চেষ্টা চলছে। এর আগে জাঠা কর্মসূচিতে এবং এ বার শিল্প-পদযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে দাবি দলের এক সূত্রের। জেলায় রামজীবনপুর হয়ে ঢুকে চন্দ্রকোনা, কেশপুর, মেদিনীপুরের উপর দিয়ে ওই পদযাত্রা শালবনিতে পৌঁছয়। এই দীর্ঘপথে যে ভাবে শয়ে শয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে পদযাত্রাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন, তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন শাসক দলের একাংশ নেতা।
জেলা সিপিএমের এক নেতার বক্তব্য, গত লোকসভা নির্বাচনের পরে অনেকের মনে হচ্ছিল, এখানে বিজেপিই প্রধান বিরোধী দল। জাঠার পর এই পদযাত্রায় যে ভাবে সাড়া মিলল তাতে স্পষ্ট, বামেরাই বিকল্প! সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ও বলছেন, “লালঝান্ডা মাথা তুলে এখনও দাঁড়িয়ে আছে এবং থাকবে। ওরা চেষ্টা করেও একটা জায়গাতেও পদযাত্রাকে রুখতে পারেনি।”
অবশ্য এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ তৃণমূল। শক্তি প্রদর্শনে শনিবার দুপুরে শালবনিতে মহামিছিল করে তারা। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দলের কর্মী-সমর্থকদের ব্লক সদরে আনা হয়। পরে সভাও হয়। সভায় ছিলেন দীনেন রায়, প্রদ্যোত ঘোষ, শ্রীকান্ত মাহাতো, নেপাল সিংহ, রমাপ্রসাদ গিরিরা। সভায় দীনেন রায় জানিয়ে দেন, “জঙ্গলমহলকে আর অশান্ত করতে দেওয়া হবে না!” প্রদ্যোতবাবু বলেন, “সিপিএম ঘুরপথে অশান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে। কোন শক্তি যাতে কোনও ভাবেই জঙ্গলমহলে অশান্তি করতে না পারে, উন্নয়ন থামিয়ে দিতে না- পারে, তা দেখতে হবে।”
এখন অঞ্চলে অঞ্চলে মিটিং-মিছিল চলবে বলেও জানিয়ে দেন শাসক দলের জেলা নেতৃত্ব। শিয়রে বিধানসভা নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বেসামাল তৃণমূল পাল্টা কর্মসূচি সংগঠিত করে কতটা ঘর গোছাতে পারে, সেটাই দেখার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy