Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বাজ পড়ে মৃত্যু, ক্ষতি চাষ-ঘরবাড়ির

কালবৈশাখীর তাণ্ডবে বিপর্যস্ত দুই জেলা

মরসুমের প্রথম কালবৈশাখী গরম থেকে খানিক স্বস্তি দিলেও তার তাণ্ডবে কোথাও দফারফা হয়েছে ধান ও ফুল চাষের। ঘরের চাল উড়ে, চালের উপর গাছ ভেঙে পড়ে ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ির। ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে ও বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও বাদ যায়নি।

স্থানচ্যূত: তমলুকের পায়রাচালি। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

স্থানচ্যূত: তমলুকের পায়রাচালি। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৪৩
Share: Save:

মরসুমের প্রথম কালবৈশাখী গরম থেকে খানিক স্বস্তি দিলেও তার তাণ্ডবে কোথাও দফারফা হয়েছে ধান ও ফুল চাষের। ঘরের চাল উড়ে, চালের উপর গাছ ভেঙে পড়ে ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ির। ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে ও বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও বাদ যায়নি। ঘাটাল থেকে তমলুক, হলদিয়া দুই মেদিনীপুরেই শনিবারের ঝড় ভালই ক্ষতি করেছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর।

কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ও সেই সঙ্গে তুমুল বৃষ্টিতে শনিবার লন্ডভন্ড হয়ে যায় নন্দীগ্রাম বইমেলা। একাধিক বইয়ের স্টল কার্যত উড়িয়ে নিয়ে যায় কালবৈশাখী। জলে ভিজে বহু বই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক স্টলমালিককেই দেখা যায় কপাল চাপড়াতে। নন্দীগ্রাম বইমেলা কমিটির সম্পাদক রঞ্জিত কুমার শাসমল জানান, মেলায় প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। হলদিয়ার এসডিও পূর্ণেন্দু নস্কর জানান, বইমেলার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

শনিবার ঝড়ের সময়েই কার্যত বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে গোটা ঘাটাল মহকুমা। ঝড়ের দাপটে বহু জায়গায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের তারে। উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটিও। মহকুমা শাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, “ঝড়-বৃষ্টিতে মহকুমায় চাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রত্যেক পঞ্চায়েত প্রধানকে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।” বিদ্যুৎ দফতরের ডিভিশনাল ম্যানেজার (ঘাটাল) গোলক মণ্ডল বলেন, ‘‘শতাধিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। ফলে বিদ্যুতের সংয়োগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে দ্রুত মেরামতির কাজ চলছে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে দু’দিন লাগবে।”

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, ঝড়ে বহু বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে যায়। মোবাইল পরিষেবাও ব্যাহত হয়। বৃষ্টিতে বহু মাটির বাড়ি ভেঙেছে। একই ছবি চন্দ্রকোনা রোড, গোয়ালতোড় সহ প্রভৃতি এলাকাতেও। ঝড়ে মেদিনীপুর-রানিগঞ্জ জাতীয় সড়ক সহ একাধিক রাজ্য সড়কে গাছ পড়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়। যদিও রাতেই পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন এবং বাসিন্দারা সে সব সরিয়ে ফেলায় ফের যান চলাচল শুরু হয়েছে। গোয়ালতোড়ের বিডিও স্বপন কুমার দেব বলেন, “রবিবার দুপুরের পর গোয়ালতোড় শহরে বিদ্যুতের পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও গ্রামগুলিতে সংযোগ বিচ্ছিন। অনেক জায়গায় ঘর বাড়ি এবং চাষের ক্ষতির খবর এসেছে।”

ওই দিন রাতে ঝড়বৃষ্টির সময় পাঁশকুড়া থানার মহাপুরে বাজ পড়ে এক চাষি মারা যান। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শ্যামাপদ কিস্কু (৪৮)। মাঠে ধান কাটার সময় মৃত্যু হয় তাঁর। অন্যদিকে, মারিশদায় উত্তর কানাইদিঘিতে বাজে প্রচণ্ড শব্দে আতঙ্কিত হয়ে মৃত্যু হয় মিতালি মণ্ডলের (১৪)। মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার সময় বাজের শব্দে মাটিতে পড়ে জখম হন কাঁথির দক্ষিণ ডাউকির এক বৃদ্ধ। চন্দ্রকোনারোডের বড়াকুড়া গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান মুকবুল খান(৪৩)। পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার ঝড়ে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে ছিল গ্রামের রাস্তায়। রবিবার সকালে ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। মৃতের আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতির অভিযোগ তুলে ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান চন্দ্রকোনা রোডের বিদ্যুৎ সরবরাহ দফতরের সামনে। চন্দ্রকোনা রোড-সারেঙ্গা সড়কও অবরোধ করেন তাঁরা। খবর পেয়ে মেদিনীপুর থেকে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী। ঘণ্টা দেড়েক পথ অবরোধ চলার পর বিদ্যুৎ দফতরের তরফে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস পেয়ে অবোরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।

বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার (মেদিনীপুর) চিরঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। খোঁজখবর নিচ্ছি।” বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা বলেন, “ঝড়বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়েছে। এই তার এড়িয়ে চলাফেরা করতে হবে। কোনও ভাবেই ছেঁড়া তারে হাত দেওয়া যাবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছেঁড়া তারগুলো জোড়ার চেষ্টা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalbaisakhi Damage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE