(বাঁদিকে) ময়নার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আহতরা। (ডানদিক) ভোট পরবর্তী অশান্তিতে আহত শেখ হবিবুর। তমলুক হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র।
ভোট শেষ। এ বার পালা ‘ঢাক’ বাজানোর। ‘চড়াম-চড়াম’ বাদ্যি বাজছে জেলায় জেলায়। তবে কিনা সেই বাজনা নিতান্ত একতরফা নয়। প্রতিরোধের দোকাঠিতে বেসুর বাজছে। তাই আক্রান্তের তালিকায় থাকছে তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীর নামও।
শুক্রবার তমলুক থানার মিরিকপুর এলাকায় এক তৃণমূল সমর্থককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সিপিএম সমর্থকদের বিরুদ্ধে। শেখ হাবিবুর নামে ওই তৃণমূল সমর্থককে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ জনের বিরুদ্ধে তমলুক থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
শাসকদলের এজেন্টের ছেলে ও তাঁর এক কিশোরী আত্মীয়াকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সুতাহাটাতেও। অভিযোগ, এ দিন সকালে খড়িবেড়িয়া এলাকায় তৃণমূলের এজেন্ট সুশান্ত মণ্ডলের বাড়িতে হানা দেয় একদল সিপিএম সমর্থক। পাশাপাশি দু’টি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। সুশান্তবাবুর ছেলে বরুণকে মারধর করে সিপিএমের লোকেরা। মারধর করা হয় সুশান্তবাবুর নবম শ্রেণির পড়ুয়া এক আত্মীয়াকে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় খড়ের গাদায়। দুপুরে সুতাহাটা থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন বরুণ মণ্ডল। তবে পুলিশ জানিয়েছে, আগুন লাগানোর অভিযোগ আসেনি। তদন্ত চলছে। সুশান্তবাবু বলেন, “আমি খড়িবেড়িয়ায় ৫৬ নম্বর বুথে তৃণমূল এজেন্ট ছিলাম। ভোটের দিন থেকেই সিপিএমের লোকজন শাসাচ্ছিল। এ দিন সকালে সিপিএমের নেতাকর্মীরা এসে আমার বাড়িতে চড়াও হয়।”
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পুলকেশ মিশ্রের দাবি, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। সাজানো ঘটনায় আমাদের ফাঁসাচ্ছে তৃণমূল।” সুতাহাটার তৃণমূল নেতা আনন্দময় অধিকারীর বলেন, ‘‘ওই এলাকায় সিপিএমের প্রভাব বেশি। আমাদের কর্মীদের ওপর ওরা হামলা চালাচ্ছে ওরা। পুলিশকে জানিয়েছি।’’
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ময়নার বাকচায় ভোটের সময়ই শুরু হয়েছিল গোলমাল। গ্রেফতারও করা হয়েছিল পাঁচ তৃণমূল কর্মীকে। শুক্রবার সকালে আড়ংকিয়ারানা গ্রামে ফের সংঘর্ষ শুরু হয় তৃণমূল ও সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে। উভয় পক্ষের মোট চার জন জখম হয়েছেন। তাঁদের ময়না ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
অড়ংকিয়ারানার ঘটনা সম্পর্কে সিপিএমের ময়না জোনাল কমিটির সম্পাদক বিনয় পট্টানায়েকের অভিযোগ, ‘‘গ্রামের বাম সমর্থকদের হুমকি দিয়ে বুথে যেতে বাধা দিয়েছিল তৃণমূল। তা অগ্রাহ্য করে ভোট দেওয়াতেই এ দিন ফের আক্রমণ করা হয়েছে।’’ যদিও ময়না ব্লক তৃণমূল কার্যকরী সভাপতি সুব্রত মালাকারের অভিযোগ, ‘‘সকালে আমাদের দলের দুই সমর্থক মাঠে যাচ্ছিলেন। পথে সিপিএমের সমর্থকরা তাঁদের আটকে মারধর করছিল।’’ তাঁর দাবি, ওই দুই সমর্থককে উদ্ধার করতে গিয়ে মার খেয়েছেন অন্য এক তৃণমূল সমর্থকও।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে উভয় পক্ষের মোট চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’’
বাকচা স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ছিল। ভোটগ্রহণের আগেই আড়ংকিয়ারানা থেকে নানা অভিযোগ এসেছে। বুধবার রাতে বাম সমর্থক শঙ্কর দাসের বাড়িতে তৃণমূল সমর্থকরা ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ ওঠে। বৃহস্পতিবার সকালেও ভোট দিতেযাওয়ার পথে সিপিএম সমর্থকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। গ্রেফতার করা হয় পাঁচ তৃণমূল কর্মীকে। ফলে চাপা উত্তেজনা ছিলই। শুক্রবার সকাল ১১ টা নাগাদ দাসপাড়ায় দুই তৃণমূল সমর্থকের সঙ্গে সিপিএম সমর্থকদের সঙ্গে বচসা বাধে। সে সময়ই মদন মণ্ডল, মিলন মণ্ডল নামে ওই দুই তৃণমূল সমর্থককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এরপর অন্য তৃণমূল সমর্থকরা জড়ো হয়ে এক সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়, মারধর করে। ঘটনায় এক মহিলা সহ দু’জন আহত হন। ময়না থানার পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। ওই গোলামালের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই সিপিএম ও দুই তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ দিকে তমলুক শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বুথে সিপিআই প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট বাদল মাইতিকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর চঞ্চল খাঁড়ার বিরুদ্ধে। সিপিআই প্রার্থী অশোক দিন্দার অভিযোগ, ‘‘বুধবার ভোট চলার সময়ই বাদলবাবু দুপুরে বাড়িতে খেতে যান। সে সময় তাঁর বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর চঞ্চল খাঁড়ার নেতৃত্বে একদল দুষ্কৃতী। বলা হয়, ভোটের ফল বের হওয়ার পর এলাকা ছাড়া করে দেওয়া হবে।’’
চঞ্চলবাবু অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘আমি এ দিন ভোটের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’’ পুলিশ তদন্ত
শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy