Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সমুদ্রে দুর্ঘটনা রুখতে নেভিগেশন চ্যানেল দাবি

সমুদ্র সৈকত থেকে সমুদ্রের প্রায় দশ কিলোমিটার ভিতরে ছোট নৌকা ও ভুটভুটিতে মাছ ধরেন ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা। ট্রলারগুলি আরও গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরে।

ট্রলারের ধাক্কায় ভাঙা নৌকা।

ট্রলারের ধাক্কায় ভাঙা নৌকা।

শান্তনু বেরা
কাঁথি শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:২৯
Share: Save:

সমুদ্রে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। সোমবার ফের কাঁথি উপকূলে হরিপুর থেকে সমুদ্রের ৫ কিলোমিটার ভিতরে ট্রলারের ধাক্কায় একটি নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে মৎস্য দফতর। যদিও কেউ হতাহত হননি। দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে পেটুয়াঘাট, শৌলা, দিঘা, শঙ্করপুরের মতো মৎস্যবন্দর থেকে গভীর সমুদ্রে ট্রলার চলাচলের পথ (নেভিগেশন চ্যানেল) নির্দিষ্ট করে দেওয়ার দাবি তুলল কাঁথির বিভিন্ন মৎস্যজীবী সংগঠন।

সমুদ্র সৈকত থেকে সমুদ্রের প্রায় দশ কিলোমিটার ভিতরে ছোট নৌকা ও ভুটভুটিতে মাছ ধরেন ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা। ট্রলারগুলি আরও গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরে। কিন্তু দিঘা, শঙ্করপুর, শৌলা, পেটুয়া মৎস্যবন্দর থেকে কয়েক হাজার ট্রলার সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার সময় কিংবা মাছ ধরে বন্দরে ফেরার সময় প্রায়ই ছোট মৎস্যজীবীদের নৌকা, ভুটভুটির সঙ্গে ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয়, ছোট মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার জালও ছিঁড়ে যায় বলে অভিযোগ।

ছোট মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, গভীর সমুদ্রে নিরাপত্তার কারণে এখন অধিকাংশ ট্রলারে জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ওই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর এ ধরনের ঘটনা আরও বেড়ে গিয়েছে। তাঁদের দাবি, জিপিএস সিস্টেমে ট্রলারের মেশিনে নির্দিষ্ট বন্দরের নাম ও ট্রলারের গতি এন্ট্রি করতে হয়। এরপর ট্রলার স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্দরের দিকে ছুটে চলে। সে ক্ষেত্রে ট্রলারের গতিপথের মধ্যে কোনও নৌকা বা অন্য কিছু পড়লে তার অবস্থা দফরফা। দিনের বেলায় ট্রলারের পরিচয় জানা গেলেও রাতের অন্ধ্যাকারে ছোট মৎস্যজীবীরা টর্চ জ্বালিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দ্রুতগতির ট্রলারকে চিহ্নিত করতে পারেন না।

খেজুরির ওয়াশীলচক, রামনগরের দাদনপাত্রবাড়, কাঁথির বগুড়ানজলপাই-সহ বেশ কিছু জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবি উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক লক্ষী নারায়ণ জানা বলেন, “গত এক বছরে অন্তত একশোটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে ৪০টির মতো নৌকা ভেঙেছে। পাঁচশোর বেশি জাল ছিঁড়েছে। এর মধ্যে দশটি ঘটনায় দিঘা মোহনার মৎস্যজীবী সংগঠনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’ তিনি জানান, ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে ট্রলারগুলিকে ধরতে পারেনি ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা। কারণ অধিকাংশ ট্রলারই রাতে বন্দরে ফেরে। সেই কারণেই তাঁদের দাবি, ট্রলার চলাচলের পথ (নেভিগেশন চ্যানেল) নির্দিষ্ট করা হোক।

দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সহ-সভাপতি দেবাশিস শ্যামল বলেন, “সড়কের ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন আছে। আইন ভাঙলে তার শাস্তি রয়েছে। তেমনি জলপথে ট্রলারের যাতায়াতের রুট নিদিষ্ট করে দিক মৎস্যদফতর। এর ফলে ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা নেভিগেশন পথে দাঁড়াবে না বা মাছ ধরবে না। ফলে দুর্ঘটনাও এড়ানো যাবে।’’ একই বক্তব্য কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবী ইউনিয়নের সভাপতি তমালতরু দাস মহাপাত্রের।

মৎস্য দফতরের সহ অধিকর্তা (মেরিন) রামকৃষ্ণ সর্দারের দাবি, “ট্রলারগুলি মাছ ধরে বন্দরে ফেরার পথে জিপিএস সিস্টেম ছাড়াও অনেক সময় সহকারী মাঝিকে দিয়ে ট্রলার চালায়। সে জন্যই দুর্ঘটনা বাড়ছে। সম্প্রতি আমরা এ নিয়ে সচেতনতা সভা করেছি।’’ তিনি বলেন, ‘‘ট্রলার চলাচলের নিৰ্দিষ্ট পথ হলে, সমুদ্রে তা নজরদারি করা কঠিন। তবে দাবি যখন উঠেছে তখন বিষয়টি নিয়ে উপকূলরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sea Navigation Channel accidents
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE