Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মহিলার দেহ উদ্ধারে নয়া তথ্য 

ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি, ধৃত ৪

সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত মামলায় এই শাস্তি রাজ্যে প্রথম। কিন্তু আদালতে এই শাস্তি ঘোষণার এক মাসের মধ্যেই চণ্ডীপুরে এক বধূর আত্মহত্যার কারণ হিসেবে উঠেছে ফের একই অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫৪
Share: Save:

কলেজ পড়ুয়া বান্ধবীর আপত্তিকর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ে পাঁশকুড়ার এক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া যুবকের পাঁচ বছর কারাদণ্ডের শাস্তি হয়েছে তমলুক আদালতে।

সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত মামলায় এই শাস্তি রাজ্যে প্রথম। কিন্তু আদালতে এই শাস্তি ঘোষণার এক মাসের মধ্যেই চণ্ডীপুরে এক বধূর আত্মহত্যার কারণ হিসেবে উঠেছে ফের একই অভিযোগ। চণ্ডীপুর থানার হবিচক গ্রামে ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ দুই ছাত্র সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম সৌরভ সামন্ত ওরফে বান্টি, চন্দন গুছাইত, সুপ্রভাত ঘোড়ই ওরফে পচা ও সায়ন মান্না। এদের মধ্যে সৌরভ, চন্দন ও সুপ্রভাতের বাড়ি স্থানীয় নন্দপুর গ্রামে। সায়নের বাড়ি এড়াশাল গ্রামে। ধৃতদের রবিবার তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চণ্ডীপুরের হাঁসচড়া বাজার সংলগ্ন হবিচক গ্রামের বাসিন্দা ওই মহিলার স্বামী কাজের সূত্রে ওড়িশায় থাকেন। তিন ছেলে-মেয়ে ও শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতেন তিনি। গত শনিবার বিকেলে ঘর থেকে প্রণতি মাইতি নামে ওই মহিলার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর ঘর থেকে একটি চিঠিও উদ্ধার করে পুলিশ।

পরিবার সূত্রে খবর, মাসতিনেক আগে এক মেয়েকে নাচের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে ওই মহিলার মোবাইল ফোনটি হারিয়ে যায়। বাড়ি ফিরে অন্য একটি ফোন থেকে যোগাযোগ করলে জানা যায় সেটি কুড়িয়ে পেয়েছে স্থানীয় নন্দপুর গ্রামের সৌরভ সামন্ত ওরফে বান্টি। সে মহিলাকে ফোনটি ফিরিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু মহিলার ভাইয়ের অভিযোগ, ‘‘দিদির মোবাইল ফোনে কিছু ব্যক্তিগত ছবি ছিল। ফোন ফিরিয়ে দেওয়ার কয়েকদিন পর থেকে সৌরভ তাঁর দিদিকে ফোন করে সম্পর্ক গড়ার প্রস্তাব দেয়। দিদি রাজি না হাওয়ায় সে জানায় দিদির মোবাইলের সব ছবি তার কাছে আছে। সম্পর্কে রাজি না হলে সে ওই সব ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেবে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, সৌরভ ওরফে বান্টির সঙ্গী এলাকার আরও তিন যুবক ফোন করে সমানে তাঁর দিদিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। তারই মধ্যে তারা দিদির কিছু আপত্তিকর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়। পাড়ায় বিষয়টি জানাজানি হওয়ার জেরেই তাঁর দিদি অপমানে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে।

মহিলার কাছে পাওয়া চিঠিতে এ ধরনের কোনও বিষয়ের উল্লেখ আছে কি না তা নিয়ে পুলিশ কিছু জানাতে চায়নি। তবে তাদের বক্তব্য ওই চিঠিতে অভিয়ুক্তদের নাম রয়েছে। মহিলার ভাইয়ের যে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে তার সঙ্গে চিঠিতে বক্তব্যের মিল আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।

তবে, অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি দাবি করেছেন মহিলার বাপের বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি-সহ এলাকার বাসিন্দারা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অশ্লীল ছবি ছড়িয়ে সম্ভ্রমহানি করা ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে।

কিছুদিন আগে সাইবার অপরাধের মামলায় কারাদণ্ডের শাস্তি ঘোষণার পর দণ্ডপ্রাপ্ত যুবকের জামিনের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার ঘটনায় এই সব অপরাধের ক্ষেত্রে বিরূপ বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে করছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতের আইনজীবী শরিফ নওয়াজের। তাঁর মতে, ‘‘সাইবার অপরাধে বর্তমান আইন অনুযায়ী আদালত ওই যুবকের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। তবে এ ধরনের অপরাধ রুখতে দোষীদের আরও কড়া শাস্তির জন্য আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tamluk jail Arrest Cybercrime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE