Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তমলুকের যুবকের মৃত্যু জ্বরে, পুরসভার ভূমিকায় ক্ষোভ

গত রবিবার থেকে জ্বর নিয়ে তমলুকের এক নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন দেবকান্তবাবু।

আবাস: পুরসভার এলাকাতেই এমন অবস্থা। মৃতের বাড়ির সামনে এ ভাবেই জমে থাকে জল।

আবাস: পুরসভার এলাকাতেই এমন অবস্থা। মৃতের বাড়ির সামনে এ ভাবেই জমে থাকে জল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৪০
Share: Save:

দিন দুয়েক আগে নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু তার পরেই ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য তমলুক থেকে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। তবে শেষ রক্ষা হল না। শুক্রবার এসএসকেএমে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল তমলুকের শালগেছিয়া এলাকার বাসিন্দা দেবকান্ত মিত্র (৩৮)-এর।

স্থানীয় সূত্রে খবর, গত রবিবার থেকে জ্বর নিয়ে তমলুকের এক নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন দেবকান্তবাবু। শুক্রবার সকালে ছাড়া পাওয়া পরে ওই যুবকের অবস্থার ফের অবনতি হতে শুরু করে। তারপর সন্ধ্যায় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর শংসাপত্রে দেবকান্তের মৃত্যুর কারণ হিসেবে জ্বরের উল্লেখ রয়েছে। তাঁর এনএসওয়ান পজিটিভ ছিল বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

মৃত দেবকান্ত মিত্র।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নানা প্রান্তে ডেঙ্গি রোগীর খোঁজ মিলেছে আগেই। জ্বর নিয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তমলুকেও ছবিটা আলাদা নয়। তবে জেলার সদর শহরে জ্বরে মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম। তবে সে কথা জানেন না বলেই দাবি করলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল। তিনি বলেন, “তমলুক শহরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা এখনও পর্যন্ত নজরে আসেনি। তবে ওই যুবকের মৃত্যুর রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হবে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে মিলিয়ে মোট ৭০ জন জ্বরের রোগী চিকিৎসাধীন। তবে তাঁদের কারও রক্তেই ডেঙ্গির জীবাণু মেলেনি বলে দাবি দফতরের।

তমলুক পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে জেলাশাসকের অফিস ও বাংলো থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরেই দেবকান্তের বাড়ি। হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের পাশে দোতলা পাকা বাড়িতে থাকতেন তিনি। জেলাশাসকের বাংলোর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জ্বরে মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেনের বক্তব্য, “শহরের ১৪ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচ জন বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর এসেছে। তবে চার জনের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গির জীবাণু মেলেনি। আর এক জনের রিপোর্ট এখনও আসেনি।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেহাল নিকাশির জেরেই বিপদ বাড়ছে। ক্ষোভ তৈরি হয়েছে মশা নিধনে পুরসভার ভূমিকা নিয়েও। শুক্রবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রাজ্য সড়কের ধারে পুরসভার বড় নিকাশি নালার কয়েক ফুট দূরে দেবকান্তের বাড়ির সামনেই জমে রয়েছে পচা জল। গত কয়েক মাস ধরে পায়ের পাতা ডোবা জল পেরিয়েই যেতে হচ্ছিল বলে অভিযোগ বাড়ির লোকেদের। বড় নিকাশি নালাতেও জমে রয়েছে পচা জল। অভিযোগ, নিকাশি নালাটি উঁচুতে থাকায় বাড়ির সামনে জমে থাকা বৃষ্টির জল বার হতে পারে না। দেখা গেল, বাড়ির পিছনেও জল জমে রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুরসভার তরফে বছর তিনেক আগে যে বড় নিকাশি নালা তৈরি হয়েছে, তা দিয়ে জল বার হয় না। অপরিকল্পিত ভাবে নালা নির্মাণের ফলে আশেপাশের বাড়ির জল বেরতে পারে না। বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব।

পুরপ্রধানের অবশ্য দাবি, দেবকান্তের বাড়ির কাছে জল জমে থাকার বিষয়টি নজরে এসেছে তাঁদের। তাঁর কথায়, “ওই এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা সংস্কার চলছে। তাই সাময়িক ভাবে বড় নিকাশি নালায় জল জমে থাকতে পারে। তবে বহু দিন ধরে জল জমে থাকার অভিযোগ ঠিক নয়। নিয়মিত মশা মারার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” স্থানীয়দের পাল্টা দাবি, পুরসভার তরফে মশা মারার নিয়মিত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলেই জ্বরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Fever Tamluk তমলুক
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE