তমলুক কলেজে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির লাইন। নিজস্ব চিত্র
স্নাতকস্তরে কলেজে ভর্তি নিয়ে দুর্নীতি রুখতে কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলেজে তোলাবাজি যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, দ্ব্যর্থহীন ভাবে তাও জানিয়েছেন। তার পরেও কলকাতার বেশ কয়েকটি কলেজে ভর্তি নিয়ে তোলাবাজির একাধিক অভিযোগ ওঠায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তৎপর হয়েছে পুলিশ। কয়েকজনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হতে আসা ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকদের এ নিয়ে সতর্ক করতে বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে পুলিশ।
কলকাতার কলেজেগুলির পাশপাশি জেলার কলেজগুলিতেও একই পদক্ষেপ করা হয়েছে পুলিশের তরফে। কলেজে ভর্তির জন্য কেউ টাকা চাইলে অভিযোগ জানাতে পুলিশের হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কেউ টাকা চাইলে, অভিযোগ জানানোর জন্য ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের পুলিশের তরফে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সোমবার থেকে বিভিন্ন কলেজে ঢোকার মুখে এ ধরনের ব্যানার টাঙিয়েছে পুলিশ। এমনকী বহিরাগতদের দাপাদাপি রুখতে জেলার বেশ কিছু কলেজে পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।
অথচ একেবারেই ভিন্ন ছবি দেখা গেল পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদরে তমলুকে কলেজে। কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও এ দিন দেখা গেল কলেজের গেটে পুলিশের সতর্কবার্তা দেওয়া ব্যানার তো নেই-ই, এমনকী দেখা যায়নি কোনও পুলিশ কর্মীকেও। কলেজের প্রশাসনিক অফিসের সামনে সেমিনার হলে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির জন্য লম্বা লাইন। ভিড় ছাত্র সংসদের অফিসেও। অভিভাবকদের কয়েকজনের অভিযোগ, বেলা ১১টা থেকে কলেজে কাউন্সেলিং ও ভর্তির সময় দেওয়া হয়েছিল। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কলেজে ঢোকার পরেই বহিরাগত একদল যুবক এসে তাঁদের কলেজের বাইরে চলে যেতে বলে। এমনকী হুমকিও দেওয়া হয়। অভিভাবকদের একাংশ রুখে দাঁড়ালে অবশ্য ওই যুবকেরা পিছু হটে। অভিভাবকদের অভিযোগ, কলেজ চত্বরে বহিরাগতদের দাপাদাপি সত্ত্বেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
এদিন কলেজের বাইরেও একাধিক জায়গায় বহিরাগতদের জটলা দেখা গিয়েছে। গত শুক্রবার কলেজে ভর্তির প্রথম দিনের কাউন্সিলিংয়ে একদল যুবক কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে অভিভাবকদের ঢুকতে বাধা দিয়েছিল বলে অভিযোগ। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ভর্তি শুরু হতেই কলেজের সামনে ও ভিতরে বহিরাগত যুবকদের দাপাদাপি বেড়েছে। যারা আদৌ ওই কলেজের ছাত্র তো নয়ই, এলাকার বাসিন্দাও নয়। রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেই ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে তাদের। এইসব বহিরাগতদের হটাতে পুলিশেরও কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি।
কলেজ চত্বরে বহিরাগতদের রুখতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?
কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। অভিভাবকেরাও এ নিয়ে কোনও অভিযোগ করেননি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি।’’
যদিও বহিরাগত তত্ত্ব মানতে নারাজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তমলুক কলেজ ইউনিট সভাপতি শেখ রহমতুল্লা। তাঁর দাবি, ‘‘কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সে জন্য ছাত্র সংসদের সদস্যরা কলেজে ভর্তির জন্য আসা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের কলেজ চত্বরে থাকতে বারণ করেছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষই ছাত্র সংসদকে এবিষয়ে দায়িত্ব দেয়। ওখানে কোনও বহিরাগত ছিল না।’’
তবে, অশান্তি রুখতে এ দিন সুতাহাটার রামপুর বিবেকানন্দ মিশন কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র ভর্তি ঘিরে যাতে অশান্তি না হয়, সে জন্য পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল কলেজ চত্বরে।
যদিও, ছাত্রছাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, বহিরাগত কিছু টিএমসিপি কর্মী ভর্তি প্রক্রিয়ায় খবরদারি করছিল। মহিষাদল রাজ কলেজে এদিন প্রথম বর্ষে ভর্তি নিয়ে কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে কলেজের টিএমসিপি ছাত্র সংসদের তরফে ‘হেল্প ডেস্ক’ খোলা হয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দিয়ে ব্যানারও ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy