Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বেপরোয়া বাসে লাগাম পরানোর দাবি

দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়।

নজর-নেই: বুধবারের দুর্ঘটনার পরেও টনক নড়েনি। বৃহস্পতিবারও খড়্গপুরের সতকুঁইতে জাতীয় সড়ক দিয়ে বেপরোয়া গতিতেই বাস চলছে বলে অভিযোগ। দেখার কেউ নেই। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নজর-নেই: বুধবারের দুর্ঘটনার পরেও টনক নড়েনি। বৃহস্পতিবারও খড়্গপুরের সতকুঁইতে জাতীয় সড়ক দিয়ে বেপরোয়া গতিতেই বাস চলছে বলে অভিযোগ। দেখার কেউ নেই। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৬
Share: Save:

বাস দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে সাতজনের প্রাণ। জখম হয়েছেন আরও ২৪ জন যাত্রী। গত বুধবার খড়্গপুরের সতকুঁইতে বেপরোয়া বাস বাইককে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় বলে অভিযোগ। অধিকাংশ নিত্যযাত্রীরই অভিযোগ, চালকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ফলেই ঘটছে অধিকাংশ দুর্ঘটনা। যার ফল ভুগতে হয় যাত্রীদের। নজর দেয় না পুলিশও। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পরেও বাস চালকদের হুঁশ না ফেরায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা বাসের গতি নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলছেন।

হুমগড়-কাঁটাখালি রুটের বাস খড়্গপুরের দিকে আসার সময় বুধবার দুপুরে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের সতকুঁইতে রাস্তার পাশের নয়ানজুলিতে উল্টে যায়। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, কাঁসাই নদীর সেতু পেরনোর পরেই গতি বাড়িয়ে দেয় বাসটি। সতকুঁইতে একটি বাইককে পাশ কাটাতে গিয়ে উল্টে যায় বাসটি। দুর্ঘটনায় মৃতদের শনাক্ত করে পুলিশ। পরে পুলিশ জানায়, মৃতদের মধ্যে একজনের নাম জানানো হয়েছিল অজয় মুর্মু। পরে তাঁর আসল পরিচয় জানা যায়। তাঁর আসল নাম শেখ জালাল। তাঁর বাড়ি খড়্গপুর শহরের পাঁচবেড়িয়ায়। দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়।

বুধবারের দুর্ঘটনায় হুগলির গোঘাটের বাসিন্দা সুরজিৎ পতিহার নামে এক বালকেরও মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনায় জখম হন সুরজিৎতের মা মৌসুমি পতিহারও। প্রথমে তাঁকে ছেলের মৃত্যুর খবর দেওয়া না হলেও পরে সব কিছু জানানো হয়। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর মেডিক্যালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে সুরজিতের মামা সুশান্ত দোলুই বলছিলেন, “ভাগ্নের মৃত্যুর কথা বোনকে জানানোটা খুব কঠিন ছিল। তবে ও যে ভাবে ছেলের খোঁজ করছিল তাতে বাধ্য হয়ে সবকিছু জানাতেই হয়েছে। তবে দুর্ঘটনায় জখম আমার বোন, বোনের জা ও আর এক ভাগ্নের অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরেও বাস চালকদের হুঁশ ফেরেনি বলে অভিযোগ যাত্রীদের। সতকুঁই এলাকার বাসিন্দা শক্তি রায় বলছেন, “দীর্ঘদিন ধরেই এই রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া ভাবে বাস চলাচল করে। বছরখানেক আগে রাস্তা সম্প্রসারিত হওয়ায় বাসের গতি আরও বেড়েছে। তার জেরেই দুর্ঘটনা ঘটল। তারপরেও অবশ্য বাসের গতি কমেনি।” একই কথা শোনা গেল খড়্গপুর থেকে মেদিনীপুর রুটের বাসের নিত্যযাত্রী সরকারি কর্মী সোমা সেনগুপ্তর গলাতেও। তাঁর কথায়, “মেদিনীপুর থেকে খড়্গপুর শহরের মধ্যে প্রায় সব বাসই খুব দ্রুত গতিতে চলাচল করে। বিশেষ করে সুপার ফাস্ট বাসগুলি আরও বেপরোয়া ভাবে চলে।’’ তিনি বলেন, ‘‘বেপরায়ো ভাবে বাস চলার পিছনে একাংশ নিত্যযাত্রীও দায়ী। বাস আস্তে চললে একাংশ যাত্রীই হইচই করেন। কিন্তু এই দুর্ঘটনার পরে তো গা শিউরে উঠছে।” সমস্যার কথা স্বীকার করে জেলা বাস মালিক সংগঠনের সভাপতি মৃগাঙ্ক মাইতি। তিনি বলছেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আসলে বাসের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকসানের বহর বাড়ছে। তাই যাত্রী তুলতে সকলেই মরিয়া, এটা অস্বীকার করছি না। বাস চালকদেরও তো নির্ধারিত সময়ে বাস চালাতে হবে।’’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘কোনওভাবেই বেপরোয়া ভাবে বাস চালানো যাবে না। আমি এ বিষয়ে সতর্ক করব।”

বৃহস্পতিবার মৃতদের পরিবারের হাতে ১০ হাজার টাকা করে সাহায্য তুলে দিয়েছে পুলিশ। বাসের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কিছু পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাসের গতি নিয়ন্ত্রণে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে পুলিশের উদ্যোগে দু’দিকে গার্ডওয়াল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। নিয়ন্ত্রণ হারালেও বাস যাতে রাস্তার পাশের নয়ানজুলিতে পড়ে না য়ায়, সে জন্যই এই ব্যবস্থা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bus Accident Dead
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE