Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিজেপির বাড়বাড়ন্তে আদিবাসী ক্ষোভের ছায়া! 

এ খবর শোনা মাত্রই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কেউ গেলেন সিগারেট খেতে। কেউ খোঁজ করলেন কোথায় ভাল চা পাওয়া যায়।

ঝাড়গ্রামে আনন্দে মেতেছেন বিজেপি সমর্থকরা ছবি: দেবরাজ ঘোষ

ঝাড়গ্রামে আনন্দে মেতেছেন বিজেপি সমর্থকরা ছবি: দেবরাজ ঘোষ

বরুণ দে ও রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য
মেদিনীপুর ও গোয়ালতোড় শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০০:৫৯
Share: Save:

ঘড়িতে তখন দুপুর ১টা। মেদিনীপুর শহরে জেলা পরিষদে বসে তৃণমূলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা। দলীয় সহকর্মীর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতেই বিবর্ণ হল তাঁর মুখ। ফোন রেখেন অস্ফুটে বললেন, ‘‘দলে এত দুর্নীতিগ্রস্ত লোক থাকলে তো এই ফলই হবে!’’ কেন এই আক্ষেপ? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, জেলার শীর্ষস্থানীয় ওই তৃণমূল নেতাকে তাঁর সহকর্মী ফোনে জানিয়েছিলেন, আদিবাসী অধ্যুষিত মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদরা গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছা়ড়া হয়েছে।

গোয়ালতোড় কলেজে ভোট গণনা চলছে। সকাল থেকে বাইরে অপেক্ষায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় খবর এল, মাকলি গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছে বিজেপি। মিনিট দশেক কাটতে না কাটতেই জানা গেল, পিংবনি গ্রাম পঞ্চায়েতও গেরুয়া শিবিরের দখলে গিয়েছে। এ খবর শোনা মাত্রই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কেউ গেলেন সিগারেট খেতে। কেউ খোঁজ করলেন কোথায় ভাল চা পাওয়া যায়। আদিবাসী অধ্যুষিত গোয়ালতোড়ের এই পিংবনিই বিজেপি নেতা পশুপতি দেবসিংহের খাস তালুক। জেলা বিজেপির সহ সভাপতিও তিনি। তাঁর এলাকায় লড়াই করেও প্রত্যাশিত ফল না মেলায় এক তৃণমূল নেতা বলেই ফেললেন, ‘‘আর কী হবে!’’

পশ্চিম মেদিনীপুরে সার্বিক ভাবে বিরোধীদের পিছনে বড় জয় পেয়েছে তৃণমূল। তবু বিজেপির উত্থানে উদ্বেগ বাড়ছে শাসকের। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় অন্তত একেবারে নীচু স্তরে ভাল ফল করেছে গেরুয়া শিবির। শালবনির ভীমপুর, সাতপাটি, গড়মালের মতো এলাকায় বিজেপির ভোট অনেক বেড়েছে। মেদিনীপুর সদর ব্লকের ধেড়ুয়া, চাঁদড়া, মণিদহ, কনকাবতীতে বিজেপির ভোট বেড়েছে। চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৮টি, তৃণমূল ৬টি। ধেড়ুয়া, মণিদহে জোর টক্কর হয়েছে। ধেড়ুয়ায় ৮টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৪টি, বিজেপি ৪টি। মণিদহে ১৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৭টি, বিজেপি ৬টি। গড়বেতা ২ ব্লকের মোট ১০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪টি দখল করল বিজেপি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১০টি পঞ্চায়েতই দখল করেছিল তৃণমূল। যেগুলিতে পঞ্চায়েতগুলি বিজেপি দখল করেছে তার অধিকাংশই আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। এ বার বিজেপির দখলে এসেছে পিংবনি, জিরাপাড়া, মাকলি ও আমলাশুলি গ্রাম পঞ্চায়েত। তৃণমূল দখলে রাখতে পেরেছে গোয়ালতোড়, পাথরপাড়া, গোয়ালডাঙা, সরবোথ, পিয়াশালা ও জগারডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতে।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “বিজেপি কিছু মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে। সার্বিক ভাবে তৃণমূলের ফল অনেক ভাল হয়েছে। তা-ও কেন বিজেপি কিছু ভোট পেল তা দেখা হবে।” বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশ বলেন, “আদিবাসী মানুষেরা ধান্দাবাজদের সঙ্গে থাকে না। সৎ মানুষের সঙ্গে থাকে।” তৃণমূলের এক জেলা মানছেন, “এই ফল আমাদের কাছে সত্যিই অপ্রত্যাশিত। মেদিনীপুর সদর ব্লকে কী ভাবে এত পদ্ম ফুটল বুঝতে পারছি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। নিশ্চয়ই কোথাও রোগ লুকিয়ে ছিল। রোগটা আমরা ধরতে পারিনি!” বিজেপির দাবি, এটা হওয়ারই ছিল। পঞ্চায়েতস্তরে তৃণমূল ব্যাপক দুর্নীতি- স্বজনপোষন করেছে। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় দুর্নীতি বেশি হয়েছে। শাসকদল সূত্রে খবর, ধেরুয়া এলাকায় তৃণমূলের এক আদিবাসী নেতা ২০১১ সালে মানুষের আপদে বিপদে থাকতেন। এমনকি, পরিচিতদের কাছ থেকে কয়েকশো টাকা ধার চাইতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু সাত বছরের মধ্যে তার ‘পরিবর্তন’ চোখে পড়ার মত। পোশাক-পরিচ্ছদ বদলছে। ব্যবহার বদলে গিয়েছে। কয়েক বছরে তাঁর সম্পত্তি পড়শির ঈর্ষার কারণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE