প্রতিবাদ: সোমবার তমলুকের নিমতৌড়িতে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস
পান চাষিদের বিক্ষোভে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল তমলুকের নিমতৌড়ি বাজার। পান ছড়িয়ে দফায় দফায় অবরোধ করা হল হলদিয়া–মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক, চলল মারধর, ভাঙচুর। আক্রান্ত হলেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও।
পান চাষি ও আড়তদারদের সংঘাতেই সোমবার সকালে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নিমতৌড়ি বাজার এলাকা। পানের আড়তদাররা কমিশন শতকরা ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা করায় বিক্ষোভে সামিল হন চাষিরা। জাতীয় সড়ক অবরোধের জেরে সপ্তাহের প্রথম দিনেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চল এবং দিঘাগামী ওই সড়কে লম্বা যানজট তৈরি হয়। আটকে পড়ে শিল্পাঞ্চলগামী কয়েকশো পণ্যবাহী লরি, তেল-গ্যাস ট্যাঙ্কার, যাত্রিবাহী বাস। হয়রানিতে পড়ে স্কুল-কলেজের পড়ুয়া-সহ কয়েক হাজার নিত্যযাত্রী। সকাল ১০টা থেকে প্রথম দফার অবরোধ চলাকালীন তমলুক থানার পুলিশবাহিনী এসে অবরোধকারীদের বুঝিয়ে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আরও পান চাষি ফের বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পান বাজারে ঢুকে আড়তদারের অফিসে ভাঙচুর ও লুঠপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ। সেই সময় কিছু দুষ্কৃতী সংবামাধ্যমের কয়েকজন প্রতিনিধির উপরেও হামলা চালায়। মারধর করা হয় তাঁদের। নিমতৌড়ি পানবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত ভৌমিকের অভিযোগ, ‘‘পান চাষিদের সঙ্গে বহিরাগতরা বাজারে ঢুকে পান নষ্ট করেছে, ভাঙচুর ও লুঠপাট চালিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’’ এই ঘটনায় পুলিশে অভিযোগও জানানো হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘এই গোলামালে কারা জড়িত জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
পানের বাজারে চাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে কার্যত সেতুবন্ধের কাজ করেন আড়তদাররা। তাঁরাই ব্যবসায়ীদের হয়ে পানের দাম নগদে চাষিদের দিয়ে দেন। বিনিময়ে আড়তদাররা চাষিদের থেকে পানের দাম থেকে শতকরা ৫ টাকা কমিশন নেন। ফলে, পানের দামের একাংশ কেটে টাকা দেওয়া হয় চাষিদের হাতে। পান বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই এই আড়তদারি প্রথা চলছে। গত ৪ ডিসেম্বর পান ব্যবসায়ী ও আড়তদের সংগঠন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, বাংলা পান কেনার সময় আড়তদারের নেওয়া কমিশন শতকরা ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা করা হবে। ফলে, চাষিদের পানের দাম বাবদ পাওয়া টাকা আরও কমে যাবে। এতেই চাষিদের ক্ষোভ বাড়ছিল।
এ দিন থেকে নিমতৌড়ির তিনটি বাজারে যাতে পান না আনা হয় সে জন্য প্রচার চালিয়েছিলেন একাংশ বিক্ষুব্ধ চাষি। তাও কিছু চাষি পান নিয়ে হাজির হলে অন্য একদল তা রাস্তায় ফেলে নষ্ট করে দেন। কয়েকজনকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। তারপরই অবরোধ-বিক্ষোভে তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা চত্বর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy