Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ি বানাচ্ছে পড়ুয়ারাই

কেউ টিফিনের খরচ বাঁচিয়েছে। কেউ বাড়ির বড়দের কাছে আবদার করে টাকা জোগাড় করেছে। কেউ আবার পুজোয় নতুন জামা না কিনে টাকা জমিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, গণেশদাদুর বাড়িটা তৈরি করে দিতে হবে।

সহায়: নির্মীয়মাণ ঘর পরিদর্শনে পড়ুয়ারা। পাশে গণেশ মান্নার বেড়ার বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

সহায়: নির্মীয়মাণ ঘর পরিদর্শনে পড়ুয়ারা। পাশে গণেশ মান্নার বেড়ার বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:৪০
Share: Save:

কেউ টিফিনের খরচ বাঁচিয়েছে। কেউ বাড়ির বড়দের কাছে আবদার করে টাকা জোগাড় করেছে। কেউ আবার পুজোয় নতুন জামা না কিনে টাকা জমিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, গণেশদাদুর বাড়িটা তৈরি করে দিতে হবে।

কাজ শুরু হওয়ার পর চলছে তদারকি। শিশু দিবসের দিন কাজেও হাত লাগাবে তারা।

মহিষাদলের মধ্যহিংলি গ্রামের অ্যাপেক্স অ্যাকাডেমি স্কুলের পাশেই ছিটে বেড়ার ঘরে থাকেন বৃদ্ধ গণেশ মান্না ও তাঁর স্ত্রী সীতা মান্না। মাথার উপরে খোলা আকাশ ঢাকতে তাঁদের ভরসা ত্রিপলই। বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় একটি পরিবারের দুর্দশা দেখে সাহায্যে এগিয়ে আসেন পড়ুয়ারাই।

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নয়নতারা রায় বলেন, “ছেলেমেয়েরা এক দিন আমাদের জানায়, ওই পরিবারের জন্য তারা কিছু করতে চায়। নিজেরাই তৈরি করে কমিটি। সাহায্যের আবেদন জানিয়ে তারা নিজেদের বাড়িতেই চিঠি দেয়। আপ্লুত অভিভাবকেরাও এগিয়ে আসেন এই উদ্যোগে।” এমন ভাবেই ৫০ হাজারেরও বেশি টাকা উঠে যায় বলে জানা গিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, ১৫০ বর্গফুটের একটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে ওই পরিবারকে। যোগাযোগ করা হয় এক বেসরকারি নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে। আগ্রহ দেখায় তারাও। চল্লিশটি ইটভাটার সাহায্যে ইট মেলে বিনামূল্যে। ইট ভাটার মালিকদের পক্ষ থেকে ভরত খাটুয়া বলেন, “পড়ুয়াদের এই কাজে সাহায্য করতে পেরে আমরা খুশি।” জোগাড় হয়ে যায় রড, সিমেন্টও।

স্কুলের সম্পাদক দেবাশিস মাইতির কথায়, “ছেলেমেয়েরা কমিটি তৈরি করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছেও সাহায্যের আবেদন করেছে। ওদের এই কাজে আমরা খুশি।” স্কুলের সভাপতি হরিপদ মাইতি জানান, পড়ুয়ারা দীর্ঘ দিন ধরে পরিকল্পনা করলেও নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে অক্টোবর থেকে।

শিশু দিবসের দিনের বিশেষ পরিকল্পনা হল, নির্মাণকাজে যোগ দেবে দ্বাদশ শ্রেণির ছেলেরা। পড়ুয়া ময়ূখমালা দাস, চিত্রিতা মান্না, সৈয়দ রবিউল ইসলাম, অনুষ্কা মাইতি-রা জানায়, এই কাজ করতে পেরে তারা গর্বিত। টাকা জোগাড়ের পর এখন চোখের সামনে ঘর তৈরি হতে দেখে খুব ভাল লাগছে। শিশু দিবসে স্কুলে নানা অনুষ্ঠান হবে, কিন্তু তার মধ্যেই বাড়ি তৈরিতে শ্রম দেবে অনেকে।

যাঁর জন্য এত আয়োজন সেই গণেশবাবু কী বলছেন? তাঁর কথায়, “আমার বয়স হয়েছে। প্রায় পঙ্গু হয়ে গিয়েছি। স্ত্রী পরিচারিকার কাজ করে টাকা আনলে তবেই সংসার চলে। এমন অবস্থায় বাড়ি করতে পারতাম না।” তবে ছেলেমেয়েরা যে এমন পরিকল্পনা করবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি। খুশি স্থানীয়েরাও। বাড়ি তৈরি নিয়ে কী বলছে প্রশাসন? মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিলক চক্রবর্তী বলেন, “গৃহহীনদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য নানা প্রকল্প রয়েছে সরকারের। তার আওতায় কেন নেই ওই পরিবার, তা খোঁজ নিয়ে দেখব। ওঁদের পাশে থাকব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

House Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE