Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
মিড ডে মিলে আশঙ্কা

আধার নেই বহু পড়ুয়ার

প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের আধার কার্ডের নম্বর জানানোর জন্য জেলা থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল প্রতিটি ব্লককে। গত ডিসেম্বরের মধ্যে তথ্য জানাতে বলা হয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৭
Share: Save:

কেন্দ্র চাইছে মিড ডে মিলের ক্ষেত্রে আধার নম্বর বাধ্যতামূলক করতে। অথচ পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু স্কুল পড়ুয়ারই আধার কার্ড নেই।

প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের আধার কার্ডের নম্বর জানানোর জন্য জেলা থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল প্রতিটি ব্লককে। গত ডিসেম্বরের মধ্যে তথ্য জানাতে বলা হয়েছিল। সেই মতো স্কুলগুলো ব্লকে রিপোর্ট পাঠায়। ব্লক থেকে রিপোর্ট পৌঁছয় জেলায়। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সেই রিপোর্টেই প্রাথমিক ভাবে দেখা গিয়েছে, ৩০-৪০ শতাংশ স্কুল পড়ুয়ারই আধার কার্ড নেই। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “এখনও সব ব্লকের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসেনি। তবে অনেক স্কুল পড়ুয়ার যে আধার কার্ড নেই তা প্রাথমিক রিপোর্টেই জানা গিয়েছে।”

মিড ডে মিলে দুর্নীতি বন্ধ করতেই কেন্দ্র চাইছে আধার নম্বর বাধ্যতামূলক করতে। যদিও এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগেই কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি-বিরোধী শিবিরের যুক্তি, স্কুলপড়ুয়া শিশুদের বায়োমেট্রিক আধার কার্ড করানো অবৈজ্ঞানিক। কারণ, শিশুদের হাতের ছাপ, অক্ষিগোলকের মাপ— কোনও কিছুই স্থির নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বদলায়।

পড়ুয়াদের আধার নম্বর জানার প্রক্রিয়া অবশ্য থেমে নেই। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, কেন্দ্রের এক চিঠির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি রাজ্য থেকে জেলায় চিঠি পাঠিয়ে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের আধার নম্বর জানাতে বলা হয়। জেলা আবার ওই চিঠি স্কুল পরিদর্শকদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। জানানো হয়, স্কুলভিত্তিক রিপোর্ট ব্লকে জানাতে হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) তৃপ্তি গুহ মানছেন, “ওই নির্দেশিকা এসেছিল। তা এসআই-দের কাছে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছিল। এসআই- রা ব্লকে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন।’’ সেই সঙ্গে তাঁর স্বীকারোক্তি, “স্কুল পড়ুয়াদের সকলের আধার কার্ড নেই বলেই জেনেছি।’’

অনেক স্কুল পড়ুয়ার আধার কার্ড যে নেই তা মানছেন জাহালদা দক্ষিণ চক্রের এসআই কৌস্তুভ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “সব পড়ুয়ার আধার কার্ড নেই। কাদের আছে, কাদের নেই, তা রিপোর্টে জানানো রয়েছে।’’ আমলাগোড়ার রেউদি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় মানছেন, “স্কুলের সব পড়ুয়ার এখনও আধার হয়নি।’’ পরিসংখ্যানও সে কথাই বলছে। শালবনির এক প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা যেখানে ১০২জন, সেখানে আধার রয়েছে ৭১ জনের। এই স্কুলে আবার প্রি-প্রাইমারিতে পড়ুয়া সংখ্যা ২২। স্কুলের এক শিক্ষকের কথায়, “মিড ডে মিলে আধার বাধ্যতামূলক হলে সমস্যা হতে পারে। বুঝতে পারছি না ঠিক কি হবে। প্রি- প্রাইমারির পড়ুয়াদের আধার চাওয়া হয়নি। অথচ, ওরাও তো মিড ডে মিল পায়।’’ মেদিনীপুর সদর ব্লকের মণিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান অঞ্জন বেরার মতে, “শিবির করে আধার কার্ড তৈরি হলে এই সমস্যা হত না। আধার না-থাকায় মিড ডে মিল বন্ধ হয়ে গেলে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়বে।”

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “রাজ্য থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল। স্কুল পড়ুয়াদের কতজনের আধার রয়েছে, কতজনের নেই, তা আমরা জানিয়ে দেবো। এরপর রাজ্য থেকে যেমন নির্দেশ আসবে, জেলায় তেমন পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE