প্রতীকী ছবি।
অ্যাসিড বিক্রিতে সরকারি বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু নজরদারি নেই পুলিশ-প্রশাসনের। তেমন পরোয়া নেই ক্রেতাদেরও। ফলাফল, বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। ঘাটাল জুড়ে প্রশ্ন এখন একটাই— অ্যাসিড বিক্রিতে লাগাম টানা হবে কবে?
এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভ বাড়ছে ঘাটালে। অ্যাসিড বিক্রিতে নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলেছেন ঘাটালের সব স্তরের মানুষেরই। হাতের নাগালে অ্যাসিড মেলায় ক্রমশ বাড়ছে অ্যাসিড-হানার ঘটনা। গত দু’বছরে ঘাটাল মহকুমায় পর পর পাঁচটি বড়সড় অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে। আর ছোটখাটো ঘটনা তো লেগে আছেই। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার। গত বছরের গোড়ায় ঘাটালে অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছিলেন এক যুবক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনও একটি ঘটনা ঘটলেই পুলিশি ধরপাকড় শুরু হতে থাকে। সে সময়ে মামলা এবং গ্রেফতারির ভয়ে দোকান থেকে অ্যাসিড সরিয়ে দেন বিক্রেতারা। কিছু দিন বন্ধ থাকে বেআইনি কারবার। কিন্তু পরিস্থিতি একটু থিতিয়ে গেলেই ফের যে কে সেই! প্রকাশ্যে বিক্রি শুরু হয় সালফিউরিক, নাইট্রিক অ্যাসিড! যা এক ফোঁটাতেই শরীরে ঝলসে যেতে পারে।
নিয়ম অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া অ্যাসিড বিক্রি এবং ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এ নিয়ে কড়া আইন রয়েছে— অ্যাসিড দিয়ে কাউকে আক্রমণ করলে অভিযুক্তের দশ বছরের জেল ও জরিমানা হতে পারে। বিক্রির ক্ষেত্রেও শুধু লাইসেন্স থাকলেই চলবে না, দোকানে ‘স্টক রেজিস্টার’ থাকা বাধ্যতামূলক। তা ছাড়া, বিক্রির সময় ক্রেতার সচিত্র পরিচয়পত্র-সহ কেনার কারণ জানতে হবে। মাসে দু’বার দোকানে কত পরিমাণ অ্যাসিড মজুত আছে, তা লিখিত ভাবে জানাতে হবে মহকুমাশাসককে। কিন্তু বাস্তবে মানা হচ্ছে না এই আইন। উদ্যোগী নয় পুলিশ-প্রশাসনও।
জানা গিয়েছে, ঘাটাল মহকুমার সর্বত্রই বিকোচ্ছে অ্যাসিড। এই অ্যাসিড কলকাতা থেকেই আনেন বেশির ভাগ দোকানি। ইদানিং আবার গাড়িতে করেই সরাসরি কলকাতা থেকে অ্যাসিড ঢুকছে মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে। লাইসেন্স অবশ্য নেই কারও। দিন দিন তা আরও সহজলভ্য হয়ে উঠছে। ঘাটাল শহর-সহ দাসপুর, সাগরপুর, রাজনগর, চাঁইপাটের একাধিক দোকানেই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অ্যাসিড।
কী বলছে প্রশাসন? ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকিরঞ্জন প্রধান বলেন, “পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হয়। কিন্তু অ্যাসিড বিক্রিতে এখনও পুরোপুরি রাশ টানা সম্ভব হয়নি। এ বার অভিযানের সঙ্গে সরকারি নিয়মগুলি নিয়ে প্রচার করা হবে।” জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার কথায়, “নিয়ম মেনেই অ্যাসিড বিক্রি ও ব্যবহার করতে হবে। কেউ যগি নিয়ম না মানে, তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দ্রুত শুরু হবে অভিযান।”
যত্রতত্র অ্যাসিড বিক্রি সঙ্গে অ্যাসিড হানার ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলা চাইল্ড লাইন। জেলা কো-অর্ডিনেটর বিশ্বনাথ সামন্তের কথায়, “সরকারি নিয়ম জানাতে এবং ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতে আমরা জনবহুল এলাকায় কর্মশালা করব। পুলিশি তো অভিযান করবেই। সঙ্গে জরুরি সচেতনতাও।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাটাল কলেজের এক শিক্ষকের মতে, “অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটছে আকছার। তাই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতা বাড়লেই মিলবে সাফল্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy