বিপদ: সুবলবাবুর বাড়ির সামনের ডোবা। এখানেই কলমি শাক চাষ করেছিলেন তিনি। নিজস্ব চিত্র
জ্বর এসেছিল বুধবার থেকে। কিন্তু একমাত্র ছেলে কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকে। অসুস্থ স্ত্রীর পক্ষে বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। চিকিৎসা হচ্ছিল স্থানীয় হাতুড়ের অধীনেই। অবশেষে আত্মীয়েরা সিদ্ধান্ত নেন, রবিবার চিকিৎসার জন্য কটক নিয়ে যাওয়া হবে তাঁকে। কিন্তু সুযোগ আর মিলল না। রবিবার ভোরে নিজের বাড়িতেই মৃত্যু হল এগরা-১ ব্লকের জেড়থান পঞ্চায়েতের আলংগিরি গ্রামের বাসিন্দা সুবল মাইতি (৬২)-র।
রবিবার দুপুরে তাঁর বাড়িতে বসে সেই আফশোসটাই যেন ঝরে পড়ছে ছেলে অসিত মাইতি, জামাই শচীন দাসের গলায়। তাঁরা জানান, বড় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার সুযোগটাই দিলেন না সুবলবাবু। তাঁর ভাইপো মানস মাইতি বলেন, “জ্যাঠার গায়ে জ্বর থাকায় তিনি এগরার এক চিকিৎসককে দেখাতে গিয়েছিলেন পরশু। কিন্তু তাঁর চেম্বার বন্ধ থাকায় বাড়ি ফিরে আসতে হয়।” মানসবাবু আরও জানান, স্থানীয় হাতুড়ের পরামর্শ মতো এগরার এক বেসরকারি ল্যাবে রক্ত পরীক্ষা করিয়েছিলেন সুবলবাবু। পরীক্ষার রিপোর্ট চিকিৎসককেও দেখাবেন বলে ভেবেছিলেন তিনি। হাতুড়ে শুভেন্দু মিশ্রের কথায়, “জ্বর হয়েছিল। মূত্রাশয়ে সংক্রমণও ছিল। সেই কারণেই জ্বর কি না, তা জানতে বড় চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম।” এ বিষয়ে এগরা-১ বিডিও পার্থ মণ্ডল বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জেনেছি, মূত্রাশয়ে সংক্রমণ থেকে জ্বর হয়েছিল। তবে এটি দফতরের প্রাথমিক রিপোর্ট।”
সুবলবাবুর গ্রামে জ্বরের ছবিটা ঠিক কী রকম? স্থানীয়রা জানান, এলাকার নানা জায়গায় জল জমে থাকলেও মশাবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা যায়নি এখনও। আলংগিরি বাসস্ট্যান্ড থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সুবলবাবুর বাড়ি। এগরা-কসবাগোলা পিচের রাস্তাটি ধরে এগোলে খানিকটা ঢালাই রাস্তা, বাকিটা বোল্ডারের রাস্তা। এর দু’দিকে কয়েকটি ডোবা কচুরিপানা ভর্তি। সুবলবাবুর বাড়ির সামনেও ধান গাছের গোড়ায় জল জমে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অজয়কুমার মাইতি অবশ্য বলেন, “সম্প্রতি নিম্নচাপের বৃষ্টিতে এ ভাবে জল জমেছে।” বাড়ির সামনেই একটি বড় ডোবার মতো জায়গায় জমা জলে কলমি শাকের চাষ করছিলেন সুবলবাবু। স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয়কুমার দাস বলেন, “জল জমে আছে ঠিকই। কিন্তু মশাবাহিত রোগ দেখা যায়নি।” জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে গ্রাম জুড়ে ব্লিচিং ছড়ানো হয়েছে। সেই চিহ্ন দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু জায়গায়। পঞ্চায়েত প্রধান নোজনুস সোমা বিবি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি, জ্বর হয়েছিল সুবলবাবুর। তবে কী কারণে মৃত্যু, তা এখনই বলতে পারব না।”
এই ঘটনায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “আলংগিরির সুবলবাবু কোনও সরকারি চিকিৎসক বা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাননি। ফলে এই মুহূর্তে তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে কিছু বলতে পারব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy