Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশ পরিচয়ে বৃদ্ধকে অপহরণের অভিযোগে ধৃত

সোমবার রাত সাড়ে ১২ টা নাগাদ দেবাশিস তার চার-পাঁচজন সঙ্গীকে নিয়ে একটি ট্যাক্সি করে ময়নার শ্রীকণ্ঠায় অপূর্বের বাড়িতে পৌঁছয়। দেবাশিসের দুই সঙ্গী প্রথমে অপূর্বের নাম ধরে ডাকাডাকি করে।

আদালতের পথে অভিযুক্ত দেবাশিস মাইতি ওরফে দেবু। —নিজস্ব চিত্র।

আদালতের পথে অভিযুক্ত দেবাশিস মাইতি ওরফে দেবু। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:১০
Share: Save:

ছেলের সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে গোলমাল। ছেলেকে না পেয়ে তাঁর বৃদ্ধ বাবাকে পুলিশ সেজে অপহরণ করেছিল এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তবে শেষরক্ষা হল না। মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার নাম করে ফাঁদ পেতে পুলিশ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাঁশকুড়ার রাতুলিয়া বাজারে হাতেনাতে ধরে ফেলল ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে। উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃতকে। বুধবার অভিযুক্তকে তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক ছ’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল শহরের চাউলি সিংহপুরে বাসিন্দা দেবাশিস মাইতি ওরফে দেবু স্বর্ণ ব্যবসায়ী। পুলিশ সূত্রের খবর, বছর দশেক আগে সে উত্তর চব্বিশ পরগনার বরাহনগরে একটি সোনার দোকান খুলেছিল। সেখানে কারিগর হিসাবে কাজ করতে গিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না থানার শ্রীকণ্ঠা গ্রামের যুবক অপূর্ব সাহু। পরে তিনি ওই বাজারেই সোনার গয়না তৈরির দোকান করেন। দেবাশিসের দাবি, সে গয়না তৈরির জন্য বছর দু’য়েক আগে ১৮২ গ্রাম সোনা অপূর্বকে দিয়েছিল। অভিযোগ, অপূর্ব সোনার গয়না তৈরি না করে ময়না ফিরে যান। বর্তমানে টোটো চালাচ্ছেন তিনি। অভিযোগ, দেবাশিস সোনার দাম বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা চাইলেও তা দিতে অস্বীকার করেন অপূর্ব।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাত সাড়ে ১২ টা নাগাদ দেবাশিস তার চার-পাঁচজন সঙ্গীকে নিয়ে একটি ট্যাক্সি করে ময়নার শ্রীকণ্ঠায় অপূর্বের বাড়িতে পৌঁছয়। দেবাশিসের দুই সঙ্গী প্রথমে অপূর্বের নাম ধরে ডাকাডাকি করে। সেসময় বা়ড়িতে ছিলেন না অপূর্ব। তাঁর বাবা বৃদ্ধ চিত্তরঞ্জন বাড়ির বাইরে বেরোলেই তাঁকে জোর করে একটি ট্যাক্সিতে তোলা হয়। এরপর অভিযুক্তেরা জানায়, তারা পুলিশ। জরুরি কাজে চিত্তরঞ্জনবাবুকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে তারা। পুলিশ সূত্রের খবর, দেবাশিস ও তার সঙ্গীরা চিত্তরঞ্জনবাবুকে প্রথমে পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে একটি হোটেলে রেখেছিল।

চিত্তরঞ্জন সাহু।

চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন,‘‘রাতে বাড়ি থেকে আমাকে জোর করে গাড়িতে তুলে প্রথমে পুলিশ পরিচয় দেয়। এরপর পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে এক হোটেলে আটকে রেখে দেবাশিস ও তার সঙ্গীরা টাকা চেয়ে মারধর করেছিল। টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে ঘাটালে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছিল।’’ সোমবার রাতেই পুলিশকে সব জানান অপূর্ব। ময়না থানার তদন্তকারীরা অপূর্বকে পরামর্শ দেন, দেবাশিসের যোগাযোগ করতে। দেবাশিস স্বীকার করে নেয় সে অপূর্বের চিত্তরঞ্জনবাবুকে আটকে রেখেছে। পুলিশের পরিকল্পনা মেনে, অপূর্ব মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজি হয়ে যায়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাঁশকুড়া থানার রাতুলিয়া বাজারের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি হোটেলে দেবাশিসকে ডাকেন অপূর্ব। হোটেলের আশেপাশেই ছিল পুলিশ। টাকা নিতে দেবাশিস হোটেলে পৌঁছলে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দেবাশিসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘাটাল শহরে তার বাড়ি থেকে চিত্তরঞ্জনবাবুকে উদ্ধার করা হয়।

অপূর্ব বলেন, ‘‘দেবাশিস গয়না গড়ার জন্য আমাকে যে সোনা দিয়েছিল, তা তমলুক শহরের এক কারিগরকে দিয়েছিলাম। ওই কারিগর সোনা ফেরত দেয়নি। পুরো ঘটনা জানত দেবাশিসও।’’ অভিযুক্ত দেবাশিসের কথায়, ‘‘অপূর্ব সোনা ফেরত না দেওয়ায় লোকসানে পড়ে গিয়েছিলাম। বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও সোনা বা টাকা কিছুই ফেরত দিচ্ছিল না। তাই এভাবে টাকা আদায়ের জন্য চেষ্টা করেছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE