Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

স্ত্রীর হার ছিনতাই রুখতে ট্রেন থেকে লাফ প্রাক্তন বায়ুসেনা কর্মীর

শুক্রবার রাতে চিত্তরঞ্জন থেকে আসানসোল-খড়্গপুর প্যাসেঞ্জারে কলাইকুণ্ডার বাড়িতে ফিরছিলেন বছর পঁচাত্তরের সূর্যকান্তি ধর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী প্রণতিরানি ধর, বড় মেয়ে সারদারানি ধর, ছোট মেয়ে কেয়া ভঞ্জ, দুই নাতনি অদিতিরানি ধর ও শ্রেয়া ভঞ্জ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোকুলপুর শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৩৬
Share: Save:

স্ত্রীর গলার চেন ছিতাই করতে ট্রেনের জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতী। দুষ্কৃতীকে পাকড়াও করতে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দেন স্বামী। দুষ্কৃতী অবশ্য ততক্ষণে পগারপার! দুষ্কৃতীকে ধরতে না পারলেও ছিনতাই রুখে দিলেন অবসরপ্রাপ্ত বায়ুসেনা কর্মী। ট্রেন থেকে পড়ে জখমও হয়েছেন তিনি।

শুক্রবার রাতে চিত্তরঞ্জন থেকে আসানসোল-খড়্গপুর প্যাসেঞ্জারে কলাইকুণ্ডার বাড়িতে ফিরছিলেন বছর পঁচাত্তরের সূর্যকান্তি ধর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী প্রণতিরানি ধর, বড় মেয়ে সারদারানি ধর, ছোট মেয়ে কেয়া ভঞ্জ, দুই নাতনি অদিতিরানি ধর ও শ্রেয়া ভঞ্জ। ট্রেন গোকুলপুর স্টেশন ছাড়তেই জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে প্রনতিদেবীর গলার হার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এক যুবক। তবে সে সফল হয়নি।

তবে ট্রেনে রেলসুরক্ষা বাহিনীকে দেখতে না পেয়ে ওই দুষ্কৃতীকে পাকড়াও করতে চলন্ত ট্রেন থেকেই লাফিয়ে নামতে যান সূর্যকান্তিবাবু। ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হন তিনি। পরে পরিজনেরা অন্য যাত্রীদের সহযোগিতায় চেন টেনে ট্রেন দাঁড় করায়। খবর পেয়ে আসে আরপিএফ জওয়ানরা। জখম সূর্যকান্তিবাবুকে খড়্গপুরে রেলের মুখ্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, সেখানে চিকিৎসা না করেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে রেফার করে দেওয়া হয়। পরে মেদিনীপুর মেডিক্যালেও চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতায় আলিপুর কমান্ড হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যান পরিজনেরা। সেখানেই চলছে চিকিৎসা। ঘটনায় রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ সূর্যকান্তিবাবুর পরিজনেরা। ঘটনার তদন্তে নেমেছে আরপিএফ।

সূর্যকান্তিবাবুর পরিজনেদের দাবি, হায়দরাবাদ থেকে মেয়ে ও নাতনি আসায় চিত্তরঞ্জনে এক আত্মীয়ের বাড়িতে সপরিবার ঘুরতে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখান থেকে ওই দিন সন্ধ্যায় আসানসোল-খড়্গপুর প্যাসেঞ্জার ধরেন। ট্রেন দু’ঘণ্টা দেরিতে চলছিল। রাত হয়ে গেলেও ট্রেনে নিরাপত্তারক্ষী দেখতে পাননি তাঁরা। এমনকী এই ঘটনার পরেও প্রথমে আরপিএফ কর্মীরা আসেননি। পরে চিৎকার শুনে কয়েকজন আরপিএফ এসে জখম সূর্যকান্তিবাবুকে উদ্ধার করেন।

ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথে সূর্যকান্তিবাবুর প্রাথমিক চিকিৎসা করেন বড় নাতনি হায়দরাবাদের একটি মেডিক্যাল কলেজের নার্সিংয়ের ছাত্রী অদিতিরানি ধর। তাঁর অভিযোগ, “ট্রেনে আমরা কোনও নিরাপত্তারক্ষী দেখিনি। যখন আমার দিদার গলার হার ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয় তখন চিৎকার শুনেও কেউ এগিয়ে আসেননি। তাই দাদু না বুঝেই চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটে।” রেল হাসপাতালে আসার পরেও নিউরো সার্জেন না থাকায় সূর্যকান্তিবাবুর চিকিৎসা হয়নি বলেও অভিযোগ। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়্গপুর ডিভিশনে নিরাপত্তায় কোথাও ফাঁক থেকে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর পিছনে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনের জন্য আরপিএফের সংখ্যা কম থাকার পাশাপাশি ট্রেন দেরিতে আসার কারণও রয়েছে।

খড়্গপুরের সিনিয়র ডিভিশনাল সিকিউরিটি কমিশনার অশোককুমার রায় বলেন, “কেরলে ভোটের জন্য দু’কোম্পানি আরপিএফ নেওয়া হয়েছে। আরও এক কোম্পানি যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কর্মী সঙ্কট দেখা দিয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শুক্রবার অধিকাংশ কর্মীকে চেঙ্গাইলে অবরোধ সামলাতে পাঠানো হয়েছিল। সেই ফাঁকেই এই ঘটনা ঘটেছে। তবে আমরা গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি দেখছি। দুষ্কৃতীকে ধরার চেষ্টা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ex force worker Snatching Train
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE