দিশাহারা: গোয়ালতোড়ের বাড়িতে পদ্মলোচন দে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
টাকা নিয়ে একেবারে ফিরবে বলে ৯ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিল ছেলে। কিন্তু তারপর আর কোনও ফোন বা খবর ছিল না। ভেবেছিলেন ছেলে কাজে ব্যস্ত আছে বলেই হয়তো ফোন করছে না। কিন্ত ১১ ফেব্রুয়ারি ছেলের অফিস থেকে ফোন করে তার নিখোঁজের খবর জানার পর থেকেই কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না বাবা পদ্মলোচন দে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে খবর, একটি তেল সংস্থার ঠিকাকর্মী হয়ে মুম্বইয়ে গিয়েছিলেন চম্পক দে। চম্পকের নিখোঁজ হওয়ার খবরে সংস্থার তরফে স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করার পর মুম্বই পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্তের জন্য তাঁর পরিবারকে মুম্বইয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ছেলের নিখোঁজ হওয়ার খবরে দুশ্চিন্তার মধ্যেও কী ভাবে মুম্বইয়ে যাওয়ার খরচ জোগাড় হবে তা ভেবে পাচ্ছেন না বাবা পদ্মলোচনবাবু। এতদিন পরেও ছেলের খোঁজ না মেলায় আদৌ সে বেঁচে আছে কি না তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। এই অবস্থায় তাঁর আর্জি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি দেখুন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গোয়ালতোড়ের মাকলি পঞ্চায়েতের পেড়ুয়াবাঁধ গ্রামের যুবক বছর বাইশের চম্পক ছিলেন বাড়ির একমাত্র রোজগেরে। সম্বল বলতে বিঘা চারেক জমি। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী পদ্মলোচনবাবু। সংসার থেকে চাষবাস সবই দেখাশোনা করতে হয় মা যমুনাদেবীকে। ছোট ভাই চন্দন পড়াশোনা করে। সংসারের হাল ফেরাতে কলেজের পড়া শেষ না করেই মুম্বইয়ে কাজে গিয়েছিলেন চম্পক।
পদ্মলোচনবাবু বলেন, ‘‘৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বাড়িতে ফোন করে ছেলে বলেছিল, শিগগিরই দেড় মাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবে। টাকাপয়সাও আনবে।’’ যমুনা দেবী বলেন, “বলেছিল বাড়ি এসে বাবাকে ডাক্তার দেখাবে। হঠাৎ কী হল যে ছেলেটাই হারিয়ে গেল?’’ পদ্মলোচনবাবু আরও বলেন, ‘‘১১ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ে ছেলের অফিস থেকে ফোন করে জানানো হয় তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ ৯ তারিখ ছেলে জানিয়েছিল যে সে জাহাজে আছে। তেল কোম্পানির কাজে ব্যস্ত। তা হলে জাহাজ থেকে ছেলে কী ভাবে নিখোঁজ হয়?” তাঁর দাবি, “মুম্বই থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলা হচ্ছে। কখনও বলছে ছেলে নিখোঁজ। আবার কখনও বলা হয়েছে আপনারা চলে আসুন, সব ঠিক হয়ে যাবে। ওদের কথাবার্তায় সন্দেহ হচ্ছে। আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি দেখার আর্জি জানাচ্ছি।” তাঁর আশঙ্কা ছেলে হয়তো আর বেঁচে নেই। সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে তাঁর অভিযোগ, কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে পাছে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় তাই সংস্থা নিখোঁজ হওয়ার কথা বলছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পিংলার এক যুবকই চম্পককে তেল সংস্থার কাজের জন্য মুম্বইতে পাঠায়। বিনিময়ে সে এক লক্ষ টাকাও নিয়েছিল। ছেলের নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন চম্পকের পরিবার। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, ওই যুবক এখন দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। গোয়ালতোড়ের পুলিশের তরফে ইতিমধ্যেই মুম্বই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘আমরা চম্পকের পরিবারের পাশে আছি। ওঁর পরিবারকে সবরকম ভাবে সাহায্য করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy