Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ঘর তৈরির টাকা পেলেন ঘাটালের বন্যাদুর্গতেরা  

অবশেষে সরকারের ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৭০ হাজার টাকা করে পেতে চলেছেন প্রতাপপুরের বাসিন্দাদের একাংশ। তবে টাকার অঙ্ক কম হওয়ায় বন্যা দুর্গতেরা ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন।

শিলাবতীর বাঁধ ভেঙে প্রতাপপুের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি। —ফাইল চিত্র।

শিলাবতীর বাঁধ ভেঙে প্রতাপপুের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি। —ফাইল চিত্র।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩০
Share: Save:

মাস সাতেক আগে বন্যার জলে ভেসে গিয়েছিল তাঁদের ঘরবাড়ি। অস্থায়ীভাবে বা আত্মীয়ের বাড়িতে এতদিন কোনও মতে দিন কাটিয়েছেন তাঁরা। অবশেষে সরকারের ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৭০ হাজার টাকা করে পেতে চলেছেন প্রতাপপুরের বাসিন্দাদের একাংশ। তবে টাকার অঙ্ক কম হওয়ায় বন্যা দুর্গতেরা ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন।

গত ২৬ জুলাই রাতে শিলাবতী নদীর বাঁধ ভেঙে ভেসে গিয়েছিল প্রতাপপুরের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি। রাতারাতি ঘরছাড়া হয়েছিলেন তাঁরা। দুর্গাপুজোর আগে বন্যার জল কমে যাওয়ায় বাসিন্দারা গ্রামে ফিরেছিলেন। কিন্তু দেখে দেয় স্থায়ী বাসস্থানের সমস্যা। বাধ্য হয়ে এই শীতেও অনেকে রাত কাটিয়েছেন ত্রিপলের ছাউনির নীচে।

ঘাটাল থেকে তিন-চার কিলোমিটার দূরের ওই প্রতাপপুর গ্রামেই ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পের আওয়ায় বর্তমানে ২২টি বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার দিতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। এ ব্যাপারে ঘাটালের বিডিও অরিন্দম দাশগুপ্ত বলেন, “ঘর ভাঙার ক্ষতিপূরণ এলে দুর্গতেরা তা পাবেন। তবে প্রাথমিক ভাবে ওই এলাকার ২২টি পরিবারকে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।’’

প্রতাপপুরের বাসিন্দাদের অধিকাংশই চাষবাস এবং রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালান। কেউ ব্যবসাও করেন। বন্যার পরে তাঁদের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম পরিদর্শন করেছিলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ কেন্দ্রের একাধিক আধিকারিক। বর্তমানে গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই সময় ঘর মেরামতি থেকে শুরু করে সাহায্যের সব রকম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বন্যার পরে এলাকায় কোনও রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা মন্ত্রীর দেখা মেলেনি। মেলেনি ক্ষতিপূরণের অর্থও।

বন্যার পর দফায় দফায় সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন প্রতাপপুরে। ক্ষয়ক্ষতি সরেজমিন খতিয়ে দেখতে এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছিলেন কেন্দ্রের পদস্থ আধিকারিকরা। গত বছরের ২৬ জুলাই রাতে এক লহমায় নদীর বাঁধ ভেঙে জলের তোড়ে একতলা মাটির বাড়ি থেকে তিনতলা পাকা বাড়ি সবই ভেসে গিয়েছিল। এতদিন বাদে ওই সব ঘরহারারা আপাতত ঘর তৈরির জন্য সত্তর হাজার করে টাকা পাবেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। বন্যায় ঘাটালের প্রতাপপুরে শিলাবতী নদীর বাঁধ ভেঙে চোখের নিমেষে তলিয়ে গিয়েছিল ঘরবাড়ি। জল নেমে যাওয়ার পর থেকে তাঁদের কেউ ভাঙা ঘরের সামনে আস্তানা বানিয়ে, কেউ আবার আত্মীয়ের বাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুযোর্গের সময় নেতা-মন্ত্রীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অচিরেই ঘর হবে। বন্যার পর দফায় দফায় সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন প্রতাপপুরে। ক্ষয়ক্ষতি সরেজমিন খতিয়ে দেখতে এলাকায় ঘুরে যান কেন্দ্রের পদস্থ আধিকারিকরা।

কিন্তু অভিযোগ, বন্যার জল কমার পর থেকেই গ্রামে আর কারও দেখা মেলেনি। মেলেনি ক্ষতিপূরণও। শেষ পর্যন্ত প্রায় সাত মাস পরে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে গ্রামের বাইশটি বাড়ি বানিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। যদিও টাকার অঙ্ক নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ জানিয়েছেন দুর্গতেরা।

গ্রামের মালতী পাত্র, বলরাম ঘোড়ুই বলেন, ‘‘আমাদের পাকার ঘর ছিল। বাঁধের ত্রটিতেই তো আমাদের দুর্ভোগ। এখন যখন ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হচ্ছে, তখন এত কম কেন?” ক্ষতিগ্রস্তদের বক্তব্য যে অমূলক নয়, তা মানছেন স্থানীয় বিধায়ক থেকে প্রশাসন। ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, “এটা ঠিক যে, সত্তর হাজার টাকায় কিছু হবে না। তবে আপাতত এই টাকা দেওয়া হচ্ছে। পরে আরও কী ভাবে টাকা জোগাড় করা যায়, সে বিষয় ভাবনা-চিন্তা চলছে।” ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দিলীপ মাঝির কথায়, “এখনও কেন্দ্রের তরফে ক্ষতিপূরণ বাবদ কিছু আসেনি। ওই সাহায্য এলে ভাল হতো।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Money Flood Victim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE