Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উপেক্ষা থেকে বিজেপিতে, বলছেন ডেবরার রাধাকান্ত

শুক্রবার কলকাতায় বিজেপির সমাবেশে ডেবরার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের দলবদলের ঘটনায় জেলায় শোরগোল পড়েছে।

রাধাকান্ত মাইতি। ফাইল চিত্র

রাধাকান্ত মাইতি। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০১:০৮
Share: Save:

গত বিধানসভা নির্বাচনে তিনি দলের টিকিট পাননি। তবে বিদায়ী বিধায়ক হিসেবে দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। আর বিধানসভা নির্বাচনের পরেই দলের কোনও কর্মসূচিতে দেখা যায়নি প্রাক্তন ওই বিধায়ককে। এ বার মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিলেন ডেবরার সেই প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি।

শুক্রবার কলকাতায় বিজেপির সমাবেশে ডেবরার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের দলবদলের ঘটনায় জেলায় শোরগোল পড়েছে। এ দিন সকাল পর্যন্ত রাধাকান্তবাবুর বিজেপিতে যোগদানের কথা আঁচ করতে পারেনি জেলার তৃণমূলের নেতারা। ফলে, শাসকদলের নেতারা অস্বস্তিতে। যদিও সামনে তাঁরা বলছেন, গত বিধানসভা ভোটে টিকিট না পেয়ে ক্ষোভে তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছিলেন রাধাকান্তবাবু। এখন প্রলোভনে পা দিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেছেন। এ দিন বিজেপিতে যোগদানের পরে রাধাকান্তবাবু নিজেও বলেন, “গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে তৃণমূলে আমি উপেক্ষিত ছিলাম। কেউ খোঁজ নেয়নি। তাও দলের সঙ্গেই ছিলাম। মুকুলদা বিজেপিতে যোগদানের পরে আমি নিজেই যোগাযোগ করে দলবদল করলাম।”

একসময় ডেবরায় তৃণমূলের মুখ ছিলেন রাধাকান্তবাবু। ২০১১সালে তিনি ডেবরার বিধায়কও হন। সেই নির্বাচনে খড়্গপুর মহকুমা থেকে একমাত্র তিনিই তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে জিতেছিলেন। একটা সময় শুভেন্দু অধিকারীর একদা ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত ছিলেন রাধাকান্তবাবু। তিনি এ বার মুকুলের হাত ধরে বিজেপিতে যাওয়ায় তৃণমূলে অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে। ডেবরার বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক সেলিমা খাতুন বলেন, “রাধাদা দলে শুভেন্দুদার ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেই তো জানতাম। এখন তো দেখছি মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে গেলেন। এ সব মাথায় ঢুকছে না।”

তবে কি দীর্ঘদিন ধরেই মুকুলের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রাখছিলেন? রাধাকান্তবাবুর অবশ্য জবাব, “একসময়ে শুভেন্দুদার অনুগত শিষ্য হয়ে কাজ করেছি। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণার পরে কেউ যোগাযোগ রাখেনি। নিজেকে তো রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই বিজেপিতে এলাম।”

গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে ডেবরায় রাজনৈতিক সমীকরণ অনেক বদলেছে। মাস সাতেক আগে তৃণমূলের ব্লক কমিটি ভেঙে দিয়ে কোর কমিটি গড়া হয়। কোর কমিটির আহ্বায়ক করা হয় জেলা পরিষদ সদস্য বিবেক মুখোপাধ্যায়কে। এ ছাড়া বিধায়ক সেলিমা খাতুন, তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি রতন দে, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মুনমুন সেন, জেলা নেতা অলোক আচার্যকে কোর কমিটির সদস্য করা হয়। কিন্তু রাধাকান্তবাবুকে ওই কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য রাখায় ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছিল। এ দিনও রাধাকান্তবাবু বলেন, “গত বিধানসভা ভোটের প্রচারে এসে তৃণমূলনেত্রী আমাকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছিলেন। অথচ আমাকে আমন্ত্রিত সদস্য করে রাখা হয়েছিল। এটা উপেক্ষা ছাড়া আর কী!”

এ সব ব্যাখ্যা অবশ্য মানতে নারাজ তৃণমূলের কমিটির আহ্বায়ক বিবেকবাবু। তিনি বলেন, “রাধাদা আমাদের ব্লকে দলের প্রতিষ্ঠাতা। ওঁকে কেউ উপেক্ষা করেনি। উনি বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না পেয়ে দলের সঙ্গে দূরত্ব রেখেছিলেন। চাওয়া-পাওয়া থেকে উনি দল বদল করলেন।” আর রাধাকান্তবাবুর বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত ডেবরার যুব তৃণমূল নেতা প্রদীপ করের বক্তব্য, “রাধাকান্ত মাইতি গেলে দলের ক্ষতি হবে না।” একই সুরে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না পাওয়ায় দলের থেকে দূরে ছিলেন রাধাকান্ত মাইতি। রাজনীতি থেকে যিনি বসে গিয়েছেন, তাঁকে নিয়ে বিজেপি সুফল পাবে না।” অবশ্য রাধাকান্তবাবুর প্রত্যয়ী দাবি, “বিজেপিতে যখন যোগ দিয়েছি, তখন নিশ্চয়ই সংগঠন গড়ব। সময় কথা বলবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Radhakanta Maiti bjp tmc Debra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE