প্রহরাজের পুজোয় দেবীর প্রতীকী অবয়ব। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
বেলিয়াবেড়ার প্রহরাজ পরিবারের চারশো বছরের সাবেক পুজোয় দেবীর মূর্তি হয় না। নব পত্রিকাকেই নবদুর্গা রূপে পুজো করা হয়। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বেলবরণের পরে তৈরি করা হয় দেবীর প্রতীকী অবয়ব। একটি আস্ত কলাগাছের সঙ্গে বেল সমেত বেল গাছের ডাল, হলুদ, কচু, ডালিম, জয়ন্তী, অশোক, মানকচু, ধান গাছকে পাটকাঠি ও অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে তৈরি হয় নবপত্রিকা। পরানো হয় লাল ও নীল রঙের বেনারসী।
জনশ্রুতি, প্রায় চারশো বছর আগে ঝাড়গ্রামের মল্লদেব বংশের এক রাজার বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলেন নিমাইচাঁদ দাস নামে এক উৎকল ব্রাহ্মণ। নিমাইচাঁদের বিদ্যাবুদ্ধিতে খুশি হয়ে রাজা তাঁকে এলাকার একশোটি গ্রামের জমিদারি লিখে দিয়েছিলেন। জনশ্রুতি, মল্লদেব রাজার নির্দেশে এক প্রহরের মধ্যে ঘোড়ায় চেপে নিজের জমিদারির এলাকা চিহ্নিত করেছিলেন নিমাইচাঁদ। সেই কারণে ঝাড়গ্রামের রাজা সংগ্রাম মল্লদেব নিমাইচাঁদকে ‘প্রহরাজ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। বেলিয়াবেড়ায় প্রহরাজ বংশের প্রাসাদ ও কুলদেবতা গোপীনাথের মন্দির রয়েছে। জনশ্রুতি, নিমাইচাঁদের আমলেই দুর্গাপুজো শুরু হয়। তবে রাজবাড়ির মন্দিরে কুলদেবতা গোপীনাথের বিগ্রহ থাকায় প্রহরাজ পরিবারের চৌহদ্দির ভিতরে মূর্তি পুজোর চল নেই। তাই দুর্গা পুজোয় মূর্তি হয় না।
মহাসপ্তমীর সকালে রাজবাড়ির ঠাকুর ঘর থেকে রাজলক্ষ্মীর বিগ্রহ ও মন্দির থেকে সরস্বতীর বিগ্রহ নিয়ে আসা হয় স্থায়ী দুর্গামণ্ডপে। রাজবাড়ির সংলগ্ন বাঁধ পুকুরের জলে নবপত্রিকার স্নান হয়। তবে দেবীর ঘট ভরা হয় ডুলুং নদীর জলে। সপ্তমীর সকালেই রাজ পরিবারের একটি প্রাচীন তলোয়ার আর বল্লম নিয়ে আসা হয় পূজাঙ্গণে। শুরু হয় অস্ত্র পুজো। জনশ্রতি, ওই তলোয়ার ও বল্লম দিয়ে প্রহারাজ বংশের শাসকরা এ তল্লাটে
বর্গীদমন করেছিলেন।
প্রহরাজ পরিবারের প্রবীণা সোমা দাশমহাপাত্র, গীতা দাশমহাপাত্র-রা জানালেন, দেবীর ভোগের সমস্ত রান্নায় গাওয়া ঘি ব্যবহার করা হয়। দেবীকে অন্নভোগের সঙ্গে দেওয়া হয় লুচি, খিচুড়ি, পাঁচ মিশালি ঘন্ট, কাঁচকলা ভাজা, চালতার অম্বল, পান ও মিষ্টি। রাতে নিবেদন করা হয় পোলাও, সাদা অন্ন, ভাজা, ডাল ও নানা রকমের ব্যঞ্জন। এ ছাড়া দেওয়া হয় ডাবের জলের সরবত। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিনদিনই চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। দশমীর বিকেলে ডুলুং নদীতে নবপত্রিকার বিসর্জন দিয়ে শান্তিজল মাথায় নেন এলাকাবাসী। প্রহরাজ পরিবারের তরুণ সদস্য বিশ্বজিত দাশমহাপাত্র বলেন, “সেই দিন আর নেই। অন্তরের ভক্তি আর নিষ্ঠা দিয়েই প্রতি বছর ঐতিহ্যের পুজোর আয়োজন করা হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy