Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নজর নেই, রেলশহরে অবাধে হুকিং

এই ছবিটা খড়্গপুরের খরিদা রেল লাইনের ধারে মুড়ি বাজারের। তবে শুধু এই এলাকা নয়, রেলশহর জুড়েই অবাধে চলছে হুকিং।

অনিয়ম: খড়্গপুরের খরিদায় এ ভাবেই চলে হুকিং। নিজস্ব চিত্র

অনিয়ম: খড়্গপুরের খরিদায় এ ভাবেই চলে হুকিং। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০৬
Share: Save:

রেল লাইনের গা ঘেঁষে সার সার ঝুপড়ি। পাশের রাস্তা বরাবর গিয়েছে বিদ্যুৎ বন্টন দফতরের সংযোগের তার। ওই তার থেকে হুকিং করে একটি ঝুপড়িতে সংযোগ নেওয়া হয়েছে। হুকিংয়ের বিদ্যুৎ সংযোগেই চলছে ইন্ডাকশন কুকটপ, রেফ্রিজারেটরের মতো নানা বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম। বছরের পর বছর এমন আইন ভাঙা চললেও বিদ্যুৎ দফতর ব্যবস্থা নেয়নি। ঝুপড়ির মালিক সুশীলা দেবীও বলছেন, “আগে তো মিটার ছিল। বিল দিতে পারিনি বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তাই হুকিং করছে। এখন বিদ্যুৎ দফতর কিছু বলছে না। বললে খুলে দেব।”

এই ছবিটা খড়্গপুরের খরিদা রেল লাইনের ধারে মুড়ি বাজারের। তবে শুধু এই এলাকা নয়, রেলশহর জুড়েই অবাধে চলছে হুকিং। তার জেরে লো-ভোল্টেজের সমস্যায় ভুগছেন বৈধ সংযোগ নেওয়া বাসিন্দারা। সব জেনেও বিদ্যুৎ বণ্টন দফতর উদাসীন বলে অভিযোগ। শহরবাসীর দাবি, বিদ্যুৎ চুরি ঠেকাতে সে ভাবে অভিযানই হয় না। কালেভদ্রে হলেও তার আগাম খবর পেয়ে যায় ‘বিদ্যুৎ চোরে’রা। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ দফতরের একাংশ কর্মীর সঙ্গে যারা হুকিং করছে, তাদের যোগাযোগ রয়েছে বলেও ধারণা শহরবাসীর। হুকিং রুখতে শহর জুড়ে ২০১৭ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এরিয়াল বাঞ্চ কেবল বসানোর কথা ছিল। এই কেবল বসানো হলে একটি মোটা কভার তারের মধ্যে দিয়েই চার-পাঁচটি বিদ্যুতের তার চলে যেতে পারবে। কিন্তু ২০১৭ সাল শেষ হতে চললেও কেব্‌ল বসানোর কাজ এখনও প্রায় ৬০ শতাংশ বাকি বলে জানা গিয়েছে।

কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়ে হুকিং আবার কোথাও সংযোগ থাকা সত্ত্বেও হুকিং চলছে অবাধে। শহরের খরিদা, ছত্তীসপাড়া, কুমোরপাড়া, রাজগ্রাম, ভবানীপুর কৌশল্যা, তলঝুলি, ঝুলি, সোনামুখি, ছোটাট্যাংরা, নিমপুরা, আয়মা এলাকায় সবচেয়ে বেশি হুকিং দেখা যাচ্ছে। ছোটট্যাংরায় আবার বাঁশের লাঠি দিয়ে পাকাপাকি হুকিং করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ দফতরের দাবি ছোট ট্যাংরা-সহ গত মাসে ২টি মামলা রুজু করা হয়েছে। তার পরেও অবস্থার বদল হয়নি। ক্ষুব্ধ ওই এলাকার বহু মানুষ। স্থানীয় সুলোচনা সাকরে বলেন, “বাড়ির আশেপাশে এত হুকিং হচ্ছে যে সারাদিন ভোল্টেজ ওঠা-নামা করছে। আর এই চুরির দায় আমাদের নিতে হচ্ছে। আমাদের বিদ্যুতের বিল দেখছি বেশি আসছে। একবার বিদ্যুৎ দফতরের লোক এসেছিল। অনেক ঝামেলা হয়েছে। নিয়মিত বিদ্যুৎ দফতর অভিযান চালালে এসব বন্ধ হত।” একই কথা শোনা যাচ্ছে খড়্গপুরের খরিদার বাসিন্দা গৃহবধূ সঞ্জু পানিকের গলায়। তিনি বলেন, “আমরা রেল ঝুপড়িতে থেকেও বৈধ সংযোগ পেয়েছি। কিন্তু অনেকে সেই সুযোগ না নিয়ে হুকিং করছে। তাতে বাড়িতে ভোল্টেজের সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যুৎ দফতর কিছু না বললে কী করব। আমরা বললে অশান্তি হবে।”

এই বিষয়ে বিদ্যুৎ দফতর সব জেনেও হাতগুটিয়ে বসে রয়েছে বলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের ধারনা। যদিও বিদ্যুৎ দফতরের দাবি, অনেকক্ষেত্রে দফতর তৎপর হলেও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের মদত থাকায় বিপদে পড়তে হয় বিদ্যুৎ কর্মীদের। অনেকসময়ে অভিযানের সময়ে আক্রান্ত হতে হয় বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের। ফলে পিছিয়ে আসতে হয়। ঘটনার কথা স্বীকার করেই বিদ্যুৎ বন্টন দফতরের খড়্গপুরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার তন্ময় মহাপাত্র বলেন, “খড়্গপুর শহরে হাজার-হাজার হুকিং রয়েছে। আমরা নিয়মিত অভিযান করি। প্রতি মাসেই ২-৩টি মামলাও রুজু হচ্ছে। কিন্তু এক জায়গায় রুখলেও অন্যত্র চলছে। তাছাড়া অভিযান হলে তো স্থানীয়দের বাধা মুখে অনেক সময় আমাদের কর্মীদের পড়তে হয়। তবে আমরা মোকাবিলা করে হুকিং রোধে চেষ্টা চালাচ্ছি।” কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে যে এরিয়াল বাঞ্চ কেবল বসানোর কথা ছিল তা এখনও সম্পন্ন করা গেল না কেন? তন্ময়বাবু বলেন, “আমাদের এরিয়াল বাঞ্চ কেবল লাগানোর কাজ চলছে। এর জন্য অতিরিক্ত খুঁটি বসানো হয়েছে শহরের বিভিন্ন এলাকায়। খুব শীঘ্র এর কাজ শেষ হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kharagpur Hooking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE