Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিকল্প জীবিকায় ভরসা ‘রোড আইল্যান্ড রেড’

জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগে খুশি স্থানীয়েরা। কালিন্দি অঞ্চলের দক্ষিণ ডেরার বাসিন্দা মুনমুন রায় বলেন, “১০টা মুরগির ছানা পেয়েছি।

ভরসা: রোড আইল্যান্ড রেড মুরগি। কালিন্দিতে। নিজস্ব চিত্র

ভরসা: রোড আইল্যান্ড রেড মুরগি। কালিন্দিতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি ও তমলুক শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫৭
Share: Save:

দিন কয়েক হল, উন্নত প্রজাতির মুরগির ছানা বিলি শুরু হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কিছু পঞ্চায়েত এলাকায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামীণ এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উন্নয়নেই এমন পদক্ষেপ করেছে জেলা পরিষদের প্রাণিসম্পদ দফতর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জেলার বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে প্রাণিসম্পদের গুরুত্ব রয়েছে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রাণিপালনের মাধ্যমে যেমন গ্রামীণ এলাকায় অপুষ্টি ও দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব, তেমনই একে বিকল্প জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নও হতে পারে। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই গত ২৯ নভেম্বর রামনগর-২ ব্লকের কালিন্দি অঞ্চলের ২২০ জন এবং কাদুয়া অঞ্চলের ১৪২ জন উপভোক্তার হাতে ‘রোড আইল্যান্ড রেড’ নামক উন্নত প্রজাতির মুরগির ছানা তুলে দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগে খুশি স্থানীয়েরা। কালিন্দি অঞ্চলের দক্ষিণ ডেরার বাসিন্দা মুনমুন রায় বলেন, “১০টা মুরগির ছানা পেয়েছি। আগে কখনও পাইনি, এই প্রথম বার। আমাদের পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ। স্বামী চাষের কাজ করেন। এ বার মুরগি পালন করে খানিকটা লাভ হবে।” কাদুয়া অঞ্চলের ডাণ্ডা বেলবনির বাসিন্দা শকুন্তলা বারিক বলেন, “আমার স্বামী অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। মুরগি পালনকেই তাই বিকল্প জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছি। যাতে আরও বেশি ছানা পেতে পারি, সে জন্য জানিয়েছি জেলা পরিষদের প্রাণিসম্পদ কর্মাধ্যক্ষকে।” দেপাল অঞ্চলের বাসিন্দা আসেমা বিবি বলেন, “পঞ্চায়েতে কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। ১০টি মুরগির ছানা পেয়েছি। আপাতত ডিম পাব। আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলে মুরগির খামার করার ইচ্ছে রয়েছে। শীতে ছানাগুলিকে বাঁচিয়ে রাখাটাই একটা চ্যালেঞ্জ।”

তবে হঠাৎ করে মুরগির ছানা কেন বিলি করছে প্রশাসন? পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের উপ-অধিকর্তা কামদেব সর্দার বলেন, “মূলত ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলায় ৪ লক্ষ উন্নত প্রজাতির মুরগি ছানা বিলি করা হচ্ছে। এর ফলে মাংসের উৎপাদন বাড়বে। জেলার প্রতিটি ব্লকে প্রাণিপালকদের ১০টি করে ছানা দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে।” জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে প্রায় ২ লক্ষ ছানা বিলি হয়েছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে সে কাজ সম্পূর্ণ হবে। জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে খবর, জেলায় ডিমের চাহিদার উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে এখনও। তা পূরণের জন্য ডিমের উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সে জন্য উন্নত প্রজাতির ‘রোড আইল্যান্ড রেড’ মুরগির ছানা বিলি করা হচ্ছে। বর্তমানে ভিন্ রাজ্য থেকে ডিম আমদানি করা হয়।

এ বিষয়ে কাদুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রাণকৃষ্ণ দাস বলেন, “এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য মুরগির ছানা দেওয়া হয়েছে।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের প্রাণিসম্পদ কর্মাধ্যক্ষ দেবব্রত দাস বলেন, “জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আগে ২০টি করে মুরগির ছানা বিলি করা হয়েছিল। এখন দেওয়া হচ্ছে ১০টি করে ছানা। যে কোনও পরিবারের এক জন উপভোক্তা তা পাবে।” জেলায় মোট ৪৬ হাজার উপভোক্তাকে ছানা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। কামদেববাবু জানান, বাছাই করা পরিবারপিছু ১০টি করে ছানা বিলি হচ্ছে। পাশাপাশি স্বসহায়ক দলগুলির মধ্যে যারা যৌথ ভাবে খামার তৈরি করে মুরগি পালনে আগ্রহী তাঁদের ১০০ থেকে ২৫০টি পর্যন্ত ছানা দেওয়া হবে। এ জন্য আগ্রহী দলের কাছ থেকে আবেদনও পাওয়া গিয়েছে। মুরগি পালনের জন্য দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat areas Breed Chicken
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE