Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বাগঘোরায় বাঘমামার হত্যার প্রতিবাদে খুদেরা

হলদিয়ায় ও মহিষাদলের দুটি প্রত্যন্ত গ্রামের সরকারি প্রাথমিক স্কুলে এদিন পৃথকভাবে বাঘ নিয়ে নাটক ও বাঘ নিয়ে সচেতনতা প্রচার করা হল। রীতিমত বাঘের মুখোশ পরে এ দিন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রিয় বাঘমামাকে বাঁচানোর আর্জি জানাল বড়দের কাছে।

বাগদার স্কুলে প্রতিবাদ। নিজস্ব চিত্র

বাগদার স্কুলে প্রতিবাদ। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৭
Share: Save:

হলদিয়ায় ও মহিষাদলের দুটি প্রত্যন্ত গ্রামের সরকারি প্রাথমিক স্কুলে এদিন পৃথকভাবে বাঘ নিয়ে নাটক ও বাঘ নিয়ে সচেতনতা প্রচার করা হল। রীতিমত বাঘের মুখোশ পরে এ দিন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রিয় বাঘমামাকে বাঁচানোর আর্জি জানাল বড়দের কাছে। মহিষাদলের বাগদা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হলদিয়ার কিসমতনগর গ্রামের স্কুলের খুদেরা এদিন বাঘমামার বেঘোরে মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাল এ ভাবেই।

গত এক মাস ধরে তারা বাঘের কথা শুনে আসছিল বাবা-মায়ের কাছে। খবরের কাগজে বাঘমামার ছবিও দেখেছিল। কেউ কেউ সেই ছবি কেটে নিজের কাছে রেখেও দেয়। কিন্তু গত শুক্রবার টিভিতে বাঘমামাকে মেরে ফেলার খবর শোনার পর তাদের মন খারাপ। মাস্টারমশাই বলেন বাঘমামা জাতীয় পশু। তাহলে কে তাকে মেরে ফেলল, কেন মারল, তা নিয়ে তাদের প্রশ্নে বিব্রত বাবা-মা থেকে মাস্টারমশাই সকলেই।

বাগদা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক এবং বাচিক শিল্পী অরিজিৎ বসু বলেন, ‘‘বাঘকে এভাবে মেরে ফেলার ঘটনায় আমরা কষ্ট পেয়েছি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও প্রশ্নে জেরবার করে দিচ্ছে। ওদের কৌতূহল মেটাতেই এই আয়োজন।’’

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি ও চতুর্থ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে অনেক কিছু লেখা রয়েছে। বাঘ যে আমাদের পরিবেশের বন্ধু তাও লেখা রয়েছে। কিছুদিন ধরে মৃত বাঘের ছবি দেখে মন খারাপ মহিষাদলের বাগদা প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের। তাদের মন খারাপ কাটাতে সোমবার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পথনাটিকা করলেন স্কুলের শিক্ষক–শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা। পড়ুয়ারা বাঘের মুখোশ পরে পথ নাটিকায় অংশ নিল। এমনকী খুদে পড়ুয়াদের মিছিল গ্রাম পরিক্রমা করে বুঝিয়ে দিল সুন্দরবনের ডোরাকাটা তাদের পরম বন্ধু।

কিসমতনগর স্কুলের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

এমন আয়োজনের গুরুত্ব সম্পর্কে বাগদা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অসীমা সেনী দাস বলেন, ‘‘ওদের পাঠ্যসূচীর মধ্যে রয়েছে বাঘ রক্ষার গুরুত্ব। ওরা বাঘের মুখোশ তৈরি করে তার গুরুত্ব শিখছিল। কিন্তু বাঘ মেরে ফেলার ঘটনায় ওরা বিচলিত হয়ে পড়ে। আমাদের নানা প্রশ্ন করছিল। সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই এই প্রয়াস।’’

স্কুলছাত্রী অঙ্কিতা সামন্ত, দেবজিৎ ভুঁইয়া, দীপ বেরা বলে, ‘‘বাঘমামাকে মেরে ফেলার খবর জানার পর খুব কষ্ট পেয়েছি। আমরা চাই শুধু বাঘ নয়, কোনও জীবজন্তুকেই যেন এভাবে মারা না হয়।’’

হলদিয়ার কিসমত শিবরাম নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র অমলেশ দাস বলে, ‘‘বাঘের সংখ্যা আমাদের দেশে কমে যাচ্ছে বলে জেনেছি। আমরা স্কুলে বাঘের মুখোশ, বাঘের চামড়া বানিয়ে নাটক করেছি।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোভন দাস বলেন, ‘‘ওদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, বাঘ মারা হলো কেন? ওদেরকে বোঝানো হয়েছে যে বাঘ মারা উচিত নয়। ওরা বুঝেছে আমাদের কথা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE