বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে পড়ে থাকা টাকা ফেরত পাঠাতে হবে রাজ্যে। জেলায় পৌঁছনে এই সরকারি নির্দেশ আসার পরই ঘুম ছুটেছে সরকারি আধিকারিকদের। ধুলো জমা ফাইলে টান পড়তে শুরু করেছে। একের পর এক ফাইল ঘেঁটে আধিকারিকেরা দেখছেন, কোন প্রকল্পে কত টাকা পড়ে রয়েছে। পড়ে থাকা টাকা ফেরত পাঠানোর তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে।
রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সব প্রকল্পের ক্ষেত্রেই পড়ে থাকা টাকা ফেরানোর এই নির্দেশ এসেছে। সপ্তাহ খানেক আগে রাজ্য প্রশাসনের তরফে পাঠানো এই চিঠি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় পৌঁছেছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ যত টাকা খরচ হয়নি তা ফেরত পাঠাতে হবে। কিন্তু বিগত কত বছরের পড়ে থাকা টাকা ফেরাতে হবে, নির্দেশে তা স্পষ্ট করে বলা নেই। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মানছেন, “বিভিন্ন প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। সেই মতো পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ফেরত দেওয়ার আগে অব্যয়িত অর্থ কোথায় কত পড়ে রয়েছে তা খুঁজে বের করা জরুরি। এখন তা খুঁজে বের করারই কাজ চলছে।’’ তাঁর কথায়, “কুড়ি-তিরিশ বছরের পড়ে থাকা টাকা খোঁজাটা তো খুব সহজ ব্যাপার নয়!”
ইতিমধ্যে ব্লকে ব্লকে ওই নির্দেশ পৌঁছেছে। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রের বক্তব্য, সব ব্লকে পড়ে থাকা টাকার অঙ্ক সমান নয়। প্রাথমিক ভাবে যা বোঝা যাচ্ছে, কোনও ব্লকে এই অঙ্কটা ৬০-৭০ লক্ষ হতে পারে, আবার কোনও ব্লকে ১ কোটিও ছাড়াতে পারে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “কোনও ব্লকই এখনও চূড়ান্ত হিসেব কষতে পারেনি। হিসেব কষা চলছে।’’
এই কাজে গড়িমসি এড়াতে তৎপর জেলা প্রশাসনও। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে মেদিনীপুরে এ নিয়ে এক বৈঠক হয়েছে। মেদিনীপুরের কালেক্টরেটের সভাকক্ষে ওই বৈঠকে ছিলেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা-সহ অতিরিক্ত জেলাশাসকেরা, জেলা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকেরা। ছিলেন বিডিও, যুগ্ম বিডিওরা। ব্লকের হিসেবরক্ষকদেরও বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। জানানো হয়েছে, কী ভাবে কাজ এগোতে হবে। মেদিনীপুর মহকুমার এক বিডিও বলছিলেন, “পাঁচ-ছ’বছর আগের বরাদ্দের খরচ না হওয়া অর্থের হদিস কম্পিউটার ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে। কিন্তু বিশ-পঁচিশ বছর আগের হিসেব পাওয়াটা খুব সহজ নয়। বিভিন্ন ফাইল নাড়াচাড়া করে তার হদিস পেতে হবে।’’
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা এসেছে জেলায়, ব্লকে। বরাদ্দ অর্থের সবটা যে খরচ হয় তা নয়। কিছু টাকা পড়ে থাকেই। এমনও দেখা যাচ্ছে, এক সময় যে প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, সেই প্রকল্পই এখন বন্ধ। খড়্গপুর মহকুমার একটি ব্লকের প্রসঙ্গ টেনে এক আধিকারিক বলছিলেন, “ওই ব্লকে খুব কম করে হলেও বিভিন্ন প্রকল্পের ১ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। প্রাথমিক হিসেবে তাই দেখা যাচ্ছে। এমন একটি প্রকল্পের কিছু টাকা পড়ে রয়েছে যে প্রকল্পই এখন বন্ধ।’’ তাঁর কথায়, “দ্রুতই পড়ে থাকা টাকা রাজ্যে ফেরত পাঠানো হবে।”
কেন টাকা পড়ে থাকে? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের যুক্তি, “বেশিরভাগ প্রকল্পের ক্ষেত্রেই যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয় তার সবটা খরচ নাও হতে পারে। কারণ, বাকি টাকায় হয়তো কোনও প্রকল্প রূপায়ণই সম্ভব নয়। এক খাতের টাকা তো অন্য খাতে খরচ করা যায় না।’’ আপাতত, পড়ে থাকা টাকার হদিস পেতেই ব্যস্ত জেলা, ব্লক। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “আশা করা যায়, আর এক- দেড় সপ্তাহের মধ্যেই ব্লকগুলো চূড়ান্ত হিসেব কষে উঠতে পারবে। ব্য না হওয়া অর্থ ফেরত পাঠিয়ে দেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy