Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শব্দে নিষেধাজ্ঞা রুখতে বন্‌ধ ডাকল মাইক ইউনিয়ন!

কী ভাবে তৈরি হল এই পরিস্থিতি? কয়েক মাস আগেই জেলা জুড়ে নোটিস জারি করে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল জানান, শব্দদূষণ রোধে এ বার কড়া পদক্ষেপ করবে প্রশাসন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪২
Share: Save:

উৎসব মানেই তারস্বরে মাইক— এই ছবিই এ বার বদলে দিতে উদ্যোগী হয়েছে খেজুরির প্রশাসন। কিন্তু শব্দদানব রোধে এমন পদক্ষেপ একেবারেই একেবারেই পছন্দ করছেন না মাইক অপারেটরদের। বক্স বাজানোর বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে তাই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকল ‘খেজুরি-২ ব্লক মাইক ইউনিয়ন’।

বুধবার জনকার এক সভা থেকে বন্‌ধের ঘোষণা করেন সংগঠনের সম্পাদক মানস প্রামাণিক। জানানো হয়, এ দিন থেকেই পুজো, উৎসব, অনুষ্ঠানে মাইক ভাড়া দেওয়া বন্ধ রাখছেন তাঁরা। তাঁর কথায়, “পুজোর সময়ে বড় জলসায় অন্তত ৬টা করে বক্স না হলে চলে না। সেগুলো নিয়ম মেনে বাজানো হবে বলে জানানো হয়েছিল প্রশাসনকে। কেউ নিয়ম ভাঙলে আমরাই পুলিশকে জানাতাম। কিন্তু প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে আমাদের রোজগার এখন সঙ্কটের মুখে।” মাইক মালিক তপন মণ্ডল বলেন, “বক্স পরীক্ষার নামে আমাদের ঘোরাচ্ছে প্রশাসন। এখন বলা হচ্ছে, বড় বক্স বাজানো যাবে না।” সে কারণেই প্রতিবাদ বলে জানাচ্ছেন মানসবাবু, তপনবাবুরা। প্রশাসনের পাল্টা বক্তব্য, আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। তা সকলের জন্যই সমান। কারও রোজগারের জন্য মানুষের ক্ষতি করা সম্ভব নয়।

কী ভাবে তৈরি হল এই পরিস্থিতি? কয়েক মাস আগেই জেলা জুড়ে নোটিস জারি করে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল জানান, শব্দদূষণ রোধে এ বার কড়া পদক্ষেপ করবে প্রশাসন। নির্দেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয় সব বিডিও এবং আধিকারিকদের। সেই অনুযায়ী এবং হাইকোর্টের নির্দেশে খেজুরি-২ ব্লক প্রশাসন, খেজুরি-২ পঞ্চায়েত সমিতি ও খেজুরি থানার পুলিশ মাইক অপারেটরদের জানান, এ বার একটি পুজোয় শুধুমাত্র ৪টে স্টিরিয়ো বক্স ও ৪টে হর্ন ব্যবহার করা যাবে। ডিজে বক্স বা ২২ ইঞ্চি ব্যাসের স্পিকারের ডিএল বক্স বাজানো যাবে না কোনও ভাবেই। শব্দের মাত্রা রাখতে হবে ৬৫ ডেসিবেলের মধ্যে। নিয়ম না মানলে সাউন্ড সিস্টেম বাজেয়াপ্ত করা হবে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই বন্‌ধ ডেকেছেন অপারেটরেরা।

খেজুরি-২ বিডিও তিলককান্তি মজুমদার বলেন, “কমার্শিয়াল অর্থাৎ বাজার এলাকা, রেসিডেনশিয়াল অর্থাৎ বসতি এলাকা এবং হসপিটাল জোনের জন্য মাইক ব্যবহারে নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৈঠক করে তা বোঝানো হয়েছে ক্লাব, মহরম কমিটি ও মাইক অপারেটরদের। তার পর এই বন্‌ধ দুর্ভাগ্যজনক।” খেজুরি-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীম মণ্ডল বলেন, “এটা আমাদের নির্দেশ নয়। হাইকোর্ট ও জেলাশাসকের নির্দেশ পালন করছি আমরা। ক্লাব বা মহরম কমিটিগুলি প্রতিবাদ করছে না। সে ক্ষেত্রে মাইক আপারেটরদের এমন সিদ্ধান্ত কেন?” পুলিশের দাবি, মাইক বাজানো বারণ নয়। কিন্তু তা বাজাতে হবে আইন মেনে। তবে ডিজে বক্স বা গুমটি বক্স বাজানো যাবে না। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের কথায়, “সাইলেন্ট জোন অৰ্থাৎ হাসপাতাল, স্কুল ও সরকারি অফিসের এলাকায় ৪৫ ডেসিবেলের নীচে মাইক বাজাতে হবে। আর রেসিডেনশিয়াল জোনের ক্ষেত্রে দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবেলের মধ্যে মাইক বাজাতে হবে। তবে ডিজে বক্স পুরোপুরি নিষিদ্ধ।” পুজো ও মহরম কমিটিগুলিকে নিয়ে সম্প্রতি বৈঠক করেন কাঁথি মহকুমাশাসক শুভময় ভট্টাচার্য। প্রশাসন সূত্রে খবর, উৎসবের দিনগুলোতে মণ্ডপে মণ্ডপে ‘সারপ্রাইজ’ অভিযান চালাবে পুলিশের একটি দল। ডেসিবেল মাপার যন্ত্র দিয়ে শব্দের তীব্রতাও মাপা হবে। পদক্ষেপ করা হবে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে। অপারেটরদের এমন সিদ্ধান্তে কী ভাবছেন উদ্যোক্তারা? ৩০০ অপারেটরের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন খেজুরির বিশ্বকর্মা, দুর্গাপুজো ও মহরম কমিটিগুলি। উৎসবের মুখে এমন বন্‌ধে সঙ্কটে পড়েছেন হাজার দুয়েক মাইক অপারেটর কর্মীও। কারণ পুজোর মরসুমেই তাঁদের মূল রোজগার।

স্থানীয়দের বক্তব্য, শব্দদানবের অত্যাচার মানবিকতার সীমা ছাড়ায় অনেক সময়েই। সাউন্ড সিস্টেমের আওয়াজ বেশি মানে কদরও বেশি, এমন ধারণা অনেকের। তাই বক্সগুলিতে অনেক সময়ে ৬টা পর্যন্ত ‘উফার’ লাগানো হয়। এত জোরে বাজে যে তা চালাতে আলাদা জেনারেটর লাগে। কোথাও কোথাও শব্দের তীব্রতা পরীক্ষার জন্য বক্সের সামনে মুরগি বা ছাগল বেঁধে দেওয়া হয়। আওয়াজের জোরে বক্সের সামনেই মারা যায় সেই মুরগি বা ছাগল। সভ্য সমাজে এটা চলতে পারে না, মত তাঁদের। সে কারণে প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mike union bandh Sound Box Loud Speaker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE