কবর: বাড়ির অদূরেই সমাহিত করার প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র
বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধে নেমেছে। কেশপুরের কলাগ্রামে নদী বাঁধের পাশ দিয়ে দৌড়চ্ছিল বছর চব্বিশের ছিপছিপে এক যুবক। দেখে সন্দেহ হয় কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়ারদের। তাঁরা জানতে চান, কোথায় যাচ্ছে ছেলেটা। যুবকের জবাব ছিল, ‘এই তো সামনে নদীতে মাছ ধরতে যাব।’
এই জবাবে সন্তুষ্ট হননি সিভিক ভলান্টিয়াররা। তাঁদের একজন যোগাযোগ করেন কেশপুর থানার এক পুলিশ কর্তার সঙ্গে। জানান, হাফ প্যান্ট পরা এক যুবকের মতিগতি ভাল ঠেকছে না। সময় নষ্ট না করে ওই যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে আসার নির্দেশ দেন ওই পুলিশ কর্তা। থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতেই পুলিশ কর্তা চমকে ওঠেন। আরে, এর খোঁজেই তো কেশপুর জুড়ে তল্লাশি চলছে। ইছাইপুরের বাসিন্দা এই যুবকের নাম শেখ সামসুল আলি, ওরফে পটল। বুধবার রাতে সে স্ত্রী মনুয়ারা বেগম এবং দেড় বছরের শিশুকন্যা মুসকান খাতুনকে খুন করে পালিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সামসুলকে গ্রেফতারের পরে কেশপুর থানার ওই পুলিশ কর্তা বলছিলেন, ‘‘চেহারা দেখে বোঝা মুশকিল, ছেলেটা দু’-দু’টো খুন করতে পারে। সিভিক ভলান্টিয়ারদের হাতে ধরা পড়ে ও মত্স্যজীবী সাজার চেষ্টা করেছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।’’ আজ, শুক্রবার ধৃত সামসুলকে মেদিনীপুর আদালতে হাজির করা হবে। তদন্তের স্বার্থে তাকে হেফাজতে নিতে পারে পুলিশ। পুলিশের এক সূত্রের দাবি, ধৃতকে হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, যে লোহা কাটার যে হ্যাক্সো ব্লেড দিয়ে ও খুন করেছে, সেটি এখনও পাওয়া যায়নি। সেটা উদ্ধার করা জরুরি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জোড়া খুনের কথা স্বীকার করেছে সামসুল। তবে এ নিয়ে তার কোনও অনুতাপ নেই। উল্টে তদন্তকারীদের ওই যুবক জানিয়েছে, ঘটনার রাতে স্ত্রীর সঙ্গে তার বচসা বাধে। এক সময় বচসা চরম আকার নেয়। সে চুপ করে বসে থাকলে স্ত্রী-ই তাকে মেরে ফেলত। এক তদন্তকারী পুলিশ কর্তার কথায়, “ধরা পড়ার পরে ও নানা দাবি করছে। বলছে, ওরই না কি প্রাণসংশয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তাই স্ত্রীকে মেরেছে। অবশ্য ওর সব দাবি যে সঠিক তা মনে করার কোনও কারণ নেই।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর চারেক আগে ইছাইপুরের এই বাড়িতে আরও এক রহস্যমৃত্যু হয়েছিল। ঘরের মধ্যে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল সামসুলের দাদা শেখ রাজুর। তখন সামসুলদের দাবি ছিল, রাজু আত্মহত্যা করেছেন। অবশ্য গ্রামবাসীর একাংশও আজও মনে করেন, ওই আত্মহত্যা ছিল না। রাজুকে কেউ বা কারা মেরেই ঘরের মধ্যে ঝুলিয়ে দিয়েছিল। বুধবার রাতের ঘটনার পর থেকে সামসুলের মা এবং বোন পলাতক। এদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy