এই বাঁধের জন্যই পলি জমছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
মৎস্য বন্দরকে রক্ষা করতে দিঘা মোহনায় সমুদ্রে গ্রানাইট পাথরের বাঁধ (গ্রোয়িং বাঁধ) দেওয়া হয়েছিল। এখন সেই বাঁধই কাল হয়েছে বন্দরের। বাঁধের জন্য একদিকে যেমন মোহনা এলাকায় পলি জমে সমুদ্রের নাব্যতা কমছে, অন্য দিকে তেমনই শঙ্করপুর এলাকায় ভাঙছে সমুদ্রের উপকূল। বন্দর বাঁচাতে অবিলম্বে সমুদ্রে ড্রেজিং করার দাবিতে সরব মৎস্যজীবীরা।
নাব্যতা কমায় বন্দরে ঢোকার মুখে ট্রলার উল্টে যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। বছর তিনেকের মধ্যে মোহনা এলাকায় উল্টে গিয়েছে তিনটি মাছের ট্রলার। সম্প্রতি মোহনা এলাকায় ইলিশবাহী ট্রলার উল্টে যাওয়ায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে হয় মৎস্যজীবীদের। মৎস্যজীবীদের দাবি, ট্রলারের নীচে মৎস্যজীবীরা চাপা পড়লে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। একমাত্র ড্রেজিং করেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
নাব্যতা সঙ্কট কাটাতে ড্রেজিংও হয়েছে একাধিকবার। বাম আমলে ২০০৬-য়ে দিঘা থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত ড্রেজিং করা হয়। ফের একবার ড্রেজিং হয় ২০১০-য়ে। যদিও মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, সে বার সঠিক ভাবে ড্রেজিং করা হয়নি। ২০১২-য় দিঘায় এক অনুষ্ঠানে মৎস্যজীবীদের দাবির কথা শোনেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় তাঁর সামনে ড্রেজিংয়ের প্রসঙ্গও ওঠে। তারপরে ২০১৪ সালে শুধুমাত্র দিঘা মোহনার মুখে ড্রেজিং করা হয়। কিন্তু গত তিন বছরে আর ড্রেজিং না হওয়ায় ফের পলি জমে নাব্যতা কমেছে দিঘা মোহনা এলাকায়।
সূত্রে খবর, আর্থিক সঙ্কটের কারণে প্রতিবছর ড্রেজিং করা যাচ্ছে না। ফলে সমস্যা বাড়ছে। দিঘার নাব্যতা বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘ফিশারিজ কর্পোরেশন’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমিতাভ বন্দোপাধ্যায় জানান, প্রতি বছর মোহনায় ড্রেজিং প্রয়োজন। মোহনায় ভাঙন নিয়ন্ত্রণে উপকূল থেকে সমুদ্রের দিকে গ্রানাইট পাথর দিয়ে গ্রোয়িং বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। ওই বাঁধে ধাক্কা খেয়ে সমুদ্রের জলস্রোতের গতি কমছে। স্রোত দুর্বল হওয়ায় সমুদ্রের জলের সঙ্গে উপকূলে আগত পলি ফের সমুদ্রে ফিরে যেতে পারছে না। ফলে মোহনা এলাকায় পরি জমছে। একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘গ্রোয়িং বাঁধের পাথর ক্রমে সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়াও দিঘা মোহনায় পলি জমার কারণ। বাঁধের সম্প্রসারণ প্রয়োজন।’’
২০০১-২০০৯ পর্যন্ত দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিএ)-এর চেয়ারম্যান ছিলেন সমুদ্র বিশেষজ্ঞ আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়। তাঁর সময়েই ২০০৯-য়ে দিঘা মোহনায় গ্রোয়িং বাঁধ দেওয়া হয়। আনন্দদেববাবুর অভিযোগ, ডিএসডিএ-কে এড়িয়েই গ্রোয়িং বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। সমস্যা হবে জেনে তিনি এই বাঁধ তৈরির বিরোধিতাও করেছিলেন।
দিঘা মোহনার উপর প্রায় ৪০ হাজার মৎস্যজীবী নির্ভরশীল। ‘দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ‘‘বাম আমলে গ্রোয়িং বাঁধ দেওয়ার সময়ই এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। বাঁধ দেওয়ার পরে ভাঙন সমস্যা তো মেটেইনি, উল্টে নাব্যতা সঙ্কটে আরও সমস্যায় পড়েছি। অবিলম্বে সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।’’ এ বিষয়ে ডিএসডিএ-র চেয়ারম্যান সাংসদ শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘দিঘা মোহনায় শীঘ্রই ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। ফলে সমস্যা মিটবে বলে আশা করা য়ায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy