Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
জলাতঙ্কের চিকিৎসায় ওঝা

নেই টিকা! শিশুমৃত্যুর অভিযোগ

বছর পাঁচেকের এক শিশুকে কুকুরে কামড়েছিল। প্রথমে ওঝা পরে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি তাকে। সোমবার রাতে দাসপুর থানার সীতাকুণ্ডুতে মৃত্যু হল মঞ্জুশ্রী ওরফে সোমা দোলই (৫)। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছেন, মঞ্জুশ্রীর জলাতঙ্কের উপসর্গ ছিল। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে মেলেনি জলাতঙ্কের প্রতিষেধক।

মঞ্জুশ্রী দোলইয়ের (ইনসেটে) বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীরা। দাসপুর থানার সীতাকুণ্ডুতে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

মঞ্জুশ্রী দোলইয়ের (ইনসেটে) বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীরা। দাসপুর থানার সীতাকুণ্ডুতে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

নিজস্ব সংবাদদাতা
দাসপুর শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ০১:৫৯
Share: Save:

বছর পাঁচেকের এক শিশুকে কুকুরে কামড়েছিল। প্রথমে ওঝা পরে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি তাকে। সোমবার রাতে দাসপুর থানার সীতাকুণ্ডুতে মৃত্যু হল মঞ্জুশ্রী ওরফে সোমা দোলই (৫)। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছেন, মঞ্জুশ্রীর জলাতঙ্কের উপসর্গ ছিল। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে মেলেনি জলাতঙ্কের প্রতিষেধক।

স্থানীয় সূত্রের খবর, দিন পনেরো আগে একটি কুকুর মঞ্জুশ্রীর পায়ে এবং মাথায় কাম়ড়ে দেয়। হাসপাতালে নয়। ঘটনার দিনই মঞ্জুশ্রীর মা চন্দনা মেয়েকে ঘাটালের হরিদাসপুর গ্রামের এক ওঝার কাছে নিয়ে যান। চন্দনা স্বীকার করেছেন, মেয়েকে তিনি প্রথমে ওঝার কাছেই নিয়ে গিয়েছিলেন। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, হাসপাতালে গিয়ে মেলেনি জলাতঙ্কের প্রতিষেধক। মঙ্গলবার চন্দনাদেবী বলেন, ‘‘মেয়েকে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু টিকা দেওয়ার জন্য দাসপুর হাসপাতালেও গিয়েছিলাম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছিলেন, কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক নেই। বাইরে থেকে প্রতিষেধক কিনতে বলা হয়। সামর্থ্য নেই। তাই মেয়েকে ওই টিকা দিতে পারিনি।” সোমবার সকাল থেকে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে মঞ্জুশ্রী। ঠাকুমা, জেঠিমা সহ পাঁচ-সাতজনকে কামড়ে দেয় সে। সন্ধ্যায় মঞ্জুশ্রীকে ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “জলাতঙ্কের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল শিশুটি। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে কলকাতায় রেফার করে দেওয়া হয়েছিল।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার রাতে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যায় মঞ্জুশ্রী।

জলাতঙ্কের কথা জানাজানি হতেই দাসপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জখম আত্মীয়দের হাসপাতালে এদিন টিকা দেওয়ার ব্যবস্থাও করে। তাতে ক্ষোভ কমেনি সীতাকুণ্ডু গ্রামের বাসিন্দাদের। মাস পাঁচেক আগে গ্রামে বছর ছ’য়েকের মনীষা দোলইকেও কুকুরে কামড়েছিল। অভিযোগ, তখনও দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিষেধক টিকা নেই বলে দায় এড়িয়েছিলেন বলে অভিযোগ। দাসপুর হাসপাতালের বিএমওইচ সুদীপ ঘোড়ুই বললেন, “মাঝে একবার ওই প্রতিষেধক ছিল না। তবে প্রতিষেধক না থাকলেও বাইরে থেকে এনেও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। কী হয়েছিল খোঁজ নিচ্ছি।”

মেয়ের জন্য বাইরে থেকে প্রতিষেধক আনতে পারেননি চন্দনাদেবী। বছর চারেক আগে তাঁর স্বামী উত্তম মারা যান। দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালান চন্দনাদেবী। সম্প্রতি মঞ্জুশ্রীর দাদা বছর সাতেকের সুব্রতের ধান ঝাড়াই মেশিনে হাত কেটে গিয়েছিল। ছেলেকে নিয়ে ঘাটাল হাসপাতালেই ছিলেন চন্দনাদেবী।

পরিকাঠামোর অভাব নাকি সচেতনতার অভাব? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার কথায়, ‘‘মৃতের পরিবার ওঝা-গুনিনের উপর ভর করেই চিকিৎসা করাচ্ছিল। তারা দাবি করছে, হাসপাতালে এসেছিল। কিন্তু প্রমাণ দেখাতে পারেনি। সরকারি হাসপাতালে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক মজুত রয়েছে।’’ গ্রামে একটি সচেতনতা শিবিরও করা হবে বলে জানিয়েছেন গিরীশবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Rabies Vaccine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE