Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পড়ুয়া মাত্র ৪, ধুঁকছে প্রাথমিক বিদ্যালয়

স্থানীয়দের একাংশ জানাচ্ছেন, স্কুলের নামের সঙ্গে তফসিলি শব্দটি থাকায় সাধারণ পরিবারের অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের ভর্তি করতে চাইছেন না।

শিক্ষক আছেন। নেই পড়ুয়া।

শিক্ষক আছেন। নেই পড়ুয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২২
Share: Save:

ছাত্র মোটে ৪ জন। শিক্ষক একজন! পড়ুয়ার অভাবে কার্যত ধুঁকছে রামজীবনপুর পুর-শহরের ফাঁড়ি গোড়া সংলগ্ন কালীমাতা তফসিলি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

১৯৮২ সালে ওই স্কুলটি চালু হয়েছিল। সে সময় স্কুলটি রমরমিয়েই চলত। পড়াশোনা বা স্কুলের পরিকাঠামো নিয়েও অভিযোগ ছিল না অভিভাবকদের। কিন্তু সম্প্রতি স্কুলের ওই বেহাল দশা হয়েছে। পড়ুয়াদের অভাবে একমাত্র শিক্ষক নরেন্দ্র দে প্রতিদিনই স্কুলে গিয়ে কার্যত চুপচাপ বসে বাড়ি ফিরে যান।

কিন্তু কেন স্কুলের এই দশা? স্থানীয় সূত্রের খবর, মূলত এলাকার তফসিলি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যই স্কুলটি চালু হয়েছিল। পরে স্কুলটির এক কিলোমিটারের মধ্যে আরও দু’টি স্কুল চালু হয়। তৈরি হয় একটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র এবং বেসরকারি স্কুল। তার পরেই সমস্যার সূত্রপাত। কালীমাতা স্কুলের পড়ুয়ারা সংলগ্ন স্কুলে ভর্তি হতে শুরু করে। এতেই ধুঁকতে শুরু করে কালীমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্থানীয়দের একাংশ জানাচ্ছেন, স্কুলের নামের সঙ্গে তফসিলি শব্দটি থাকায় সাধারণ পরিবারের অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের ভর্তি করতে চাইছেন না।

গ্রামবাসীদের অবশ্য শিক্ষক বা স্কুলের পরিকাঠামো নিয়ে কোনও ক্ষোভ নেই। তা সত্ত্বেও সন্তানদের ওই স্কুলে কেন পাঠানো হচ্ছে না কেন? জাবাবে স্থানীয় বাসিন্দা নমিতা মাল বলেন, “বর্তমানে সবাই চাই ছেলেমেয়েরা ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে পড়ুক। পাশাপাশি একাধিক বেসরকারি স্কুল চালু হয়েছে। শিশু শিক্ষা কেন্দ্রেও রয়েছে। তাই ওই স্কুলের এই দশা।”

স্থানীয় বনপুর, রাজমা এবং পাণ্ডুয়া গ্রামের বাচ্চারাও স্কুলটিতে ভর্তি হতো। কিন্তু ওই সব এলাকায় নতুন স্কুল চালু হওয়ায় কালীমাতা তফসিলি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সংলগ্ন গ্রামের পড়ুয়ারা। গত বছর থেকেই স্কুলটিতে পড়ুয়ার সংখ্যা একেবারেই কমে যায়। চলতি শিক্ষাবর্ষে স্কুলে চারজন পড়ুয়া রয়েছে। না। ছাত্রের সংখ্যা কমে যাওয়ায় স্কুল থেকে দু’জন শিক্ষককে বদলি করে দেয় শিক্ষা দফতর। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মিড-ডে মিলও।

স্কুলের বেহাল দশার কথা জানেন স্কুল পরিদর্শক কৌশিক ঘোষ। তিনি বলেন, “বিষয়টির কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। স্কুলটির আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে আলোচনা করেছি। স্থানীয় পুর-কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। পযার্প্ত স্কুল থাকায় পড়ুয়া পাওয়া যাচ্ছে না।” কৌশিকবাবু জানিয়েছেন, প্রয়োজনে স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। ওই পুরসভার চেয়ারম্যান নির্মল চৌধুরীর কথায়, “বহুদিন থেকেই চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখন পাশাপাশি একাধিক স্কুল চালু হয়েছে। ফলে ভাগ হচ্ছে পড়ুয়ারা।” স্কুলের অবস্থা নিয়ে নরেন্দ্রবাবুর বক্তব্য, “যা বলার স্কুল পরিদর্শকই বলবেন। পড়ুয়া না এলে আমি কী করব?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Student Class
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE