Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পলিথিন আটকে অবরুদ্ধ নিকাশি নালা, জমছে জলও

দেদার চলছে প্লাস্টিক ব্যাগ, নেই পুর-নজর

বাজার হোক বা নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, বাড়ি ফিরেই প্লাস্টিকের ব্যাগ বাইরে ফেলে দেন অনেকে। আর সেই প্লাস্টিক উড়ে গিয়ে জমছে নালার মুখে। নিকাশি নালার মুখ বুজে গিয়ে জমছে জলও

অনিয়ম: নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে চলছে প্লাস্টিক ব্যাগে জিনিস দেওয়া। খড়্গপুরের খরিদা বাজারে। নিজস্ব চিত্র

অনিয়ম: নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে চলছে প্লাস্টিক ব্যাগে জিনিস দেওয়া। খড়্গপুরের খরিদা বাজারে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:০৪
Share: Save:

নিষেধাজ্ঞা রয়েছে নামেই। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই খড়্গপুরে অবাধে চলছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। বাজার হোক বা নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, বাড়ি ফিরেই প্লাস্টিকের ব্যাগ বাইরে ফেলে দেন অনেকে। আর সেই প্লাস্টিক উড়ে গিয়ে জমছে নালার মুখে। নিকাশি নালার মুখ বুজে গিয়ে জমছে জলও। যদিও প্লাস্টিক ব্যবহারে রাশ টানতে কোনও হেলদোল নেই পুরসভার!

প্লাস্টিকই যে শহরের নিকাশি সমস্যার মূল কারণ, তা মানছেন সকলেই। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, একে তো নিয়মিত নিকাশি নালা সাফাই করা হয় না। তার উপর নালার মুখে প্লাস্টিক জমে অবস্থা আরও সঙ্গীন হয়ে উঠছে। অথচ প্রশাসন একটু কড়া হলেই এই প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো যায়। কিন্তু সে বিষয়ে কোনও পরিকল্পনাই নেই পুরসভার।

বছর কয়েক আগে রাজ্যের অন্য জায়গার মতো খড়্গপুরেও নিষিদ্ধ করা হয় ৪০ মাইক্রনের কম ঘনত্বযুক্ত প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার। প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে অভিযানও চালায় পুরসভা। যদিও তারপরে অবস্থা যে কে সেই। বাজারে আনাজ, মাছের দোকান হোক বা মিষ্টির দোকান, ভূষিমালের দোকান— অধিকাংশ জায়গাতেই প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার চলছে দেদার।

পলিথিন জমে বুজে গিয়েছে নিকাশি নালার মুখ। ইন্দার আনন্দনগরে। নিজস্ব চিত্র

শহরের খরিদা বাজারের আনাজ ব্যবসায়ী দিলীপ রাণার অভিযোগ, “প্লাস্টিক ব্যাগ ছাড়া ক্রেতারা জিনিস নিতে চান না। ব্যাগ না দিলে বলেন, অন্য দোকানে চলে যাবে। তাই প্লাস্টিক ব্যাগ রাখতেই হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ হলে তো আমাদের ভাল। কারণ প্লাস্টিক ব্যাগেরও দাম রয়েছে। প্লাস্টিক বন্ধে পুরসভা-প্রশাসন কড়া হোক।” একই বক্তব্য মালঞ্চর মুদি দোকানি ধর্মেন্দ্রকুমার জৈনেরও। তিনি বলেন, “শহরে য়খন প্লাস্টিক বন্ধ হয়েছিল, তখন ক্রেতারা চাইলেও প্লাস্টিক দিইনি। আর এখন চারিদিকে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আমাকেও প্লাস্টিক ব্যাগেই জিনিস দিতে হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পুরসভা বা প্রশাসনের যদি হেলদোল না থাকে, তবে আমরাই বা কেন ক্রেতার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করব?”

‘‘প্লাস্টিক না দিলে ক্রেতারা খাবার নিতে চান না। তাই বাধ্য হয়েই প্লাস্টিকের ব্যাগ দিতে হয়’’, বলছেন খড়্গপুরের এক ফাস্ট ফুড দোকানের মালিক ফকিরা ঘোষ। তিনি স্বীকার করছেন, ‘‘ফাস্টফুডের ব্যবসায় যা লাভ থাকে, তা দিয়ে দামি প্লাস্টিক ব্যাগ কেনা সম্ভব নয়। তাই ক্ষতিকর জেনেও ক্রেতাদের বাজার চলতি প্লাস্টিক ব্যাগেই গরম খাবার দিতে হচ্ছে।”

প্লাস্টিক ব্যাগ যে দূষণের অন্যতম উৎস, সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষের উদাসীনতাই প্লাস্টিক ব্যবহার বাড়ার কারণ বলে মনে করছেন শহরের অধিকাংশ বাসিন্দাই। শহরের ইন্দার কালু চক্রবর্তী বলেন, “প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানি। তাই যতটা সম্ভব প্লাস্টিক ব্যাগ কমই ব্যবহার করি। কিন্তু সব মানুষ এ বিষয়ে সচেতন নন। তাই সকলের সচেতন তা বাড়ানোর দায়িত্ব পুরসভাকেই নিতে হবে।”

এ বিষয়ে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদীপ সরকার বলছেন, “ইতিমধ্যেই শহরের প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে পুরসভাকে পদক্ষেপ করতে বলেছি।”

আর পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের বক্তব্য, “মহকুমাশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। শীঘ্রই প্লাস্টিক ব্যাগ বন্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Garbage Municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE