Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
নান্টু খুনের পরে সক্রিয় পুলিশ

সংঘাতপ্রবণ এলাকার খোঁজ শুরু

নান্টু প্রধানকে খুনের তদন্তের পাশাপাশি পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে জেলার সংঘর্ষপ্রবণ এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩০
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের মুখে তৃণমূলের খাসতালুক পূর্ব মেদিনীপুরে দলের উপপ্রধান খুন হয়ে যাওয়ায় রাজ্য জুড়ে আলোড়ন পড়েছে। প্রশ্নের মুখে পড়েছে নন্দীগ্রামের জেলার আইশৃঙ্খলা। পরিস্থিতি সামলাতে সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। নান্টু প্রধানকে খুনের তদন্তের পাশাপাশি পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে জেলার সংঘর্ষপ্রবণ এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, ভগবানপুর-সহ জেলার প্রতিটি ব্লকের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা তাদের নজরে রয়েছে। যে সব এলাকায় শাসকদলের সাংগঠনিক শক্তির সঙ্গে বিরোধী দলগুলির শক্তির তুল্য-মূল্য অবস্থায়, বা যেখানে বিরোধীদের পাল্লা ভারী, সেই এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি কোনও এলাকায় তৃণমূল নেতার দাপটে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে কিনা, বা প্রতিরোধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কিনা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাও। নান্টুর খুন থেকে শিক্ষা নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ঘর গোছাতেই তৃণমূল পুলিশকে ব্যবহার করে এই সব তথ্য সংগ্রহ করছে বলে বিরোধী শিবিরের ব্যাখ্যা।

মহম্মদপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপ-প্রধান নান্টু খুনের পরে বিজেপি ও সিপিএমের দিকে আঙুল তুলেছেন দলীয় নেতৃত্ব। তবে স্থানীয় সূত্রের দাবি, চাষের জমিতে মাছের ভেড়ি তৈরির জন্য নোনা জল ঢোকানোকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর সঙ্গে বিরোধেই মরতে হয়েছে নান্টুকে। গায়ের জোরে ভেড়ি তৈরি ছাড়াও পঞ্চায়েতের বিভিন্ন পদে পরিবারের লোকেদের বসিয়ে দুর্নীতি থেকে শুরু করে চাঁদার জুলুম, নান্টুর ত্রাসে এলাকাবাসী যে অতিষ্ঠ ছিলেন, গ্রামে গিয়েই তার আঁচ মিলেছে। দেখা গিয়েছে, পোস্টার ‘ভেনামি (পড়ুন ভ্যানামেই) নয়, ভাত চাই’। নান্টুর মতো স্থানীয় নেতাদের দাপট যে দল ভাল চোখে দেখছে না, তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের মন্তব্যেও তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। নান্টুর নাম না করলেও দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছে, ‘দলকে ব্যবহার করে কলেবর বৃদ্ধির চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।’

সেই সূত্রেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে পুলিশের এই সংঘাত-প্রবণ এলাকা চিহ্নিতকরণের উদ্যোগ গুরুত্ব পাচ্ছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর জনরোষেই নান্টু প্রধান খুন হয়েছেন। তবু তৃণমূল নেতৃত্ব আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।’’

ভগবানপুরের মহম্মদপুর-১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা চণ্ডীপুর বিধানসভার মধ্যে পড়ে। সেখানকার তৃণমূল বিধায়ক অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য অবশ্য সোমবারও বলেন, ‘‘এলাকায় রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্বদানের পাশাপাশি পঞ্চায়েতের মাধ্যমে প্রচুর উন্নয়ন করছিলেম। প্রতিহিংসা থেকেই সিপিএম-বিজেপির লোকজন নান্টুকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে।’’ আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘নান্টু প্রধান খুনের ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করছে। জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। দলীয়ভাবেও ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE