ফ্যাসাদে: মৎস্যখটিতে মাছ শুকোতে সমস্যা। নিজস্ব চিত্র
নিম্নচাপের অকালবৃষ্টিতে মাথায় হাত পড়েছিল ধানচাষিদের। সেই বৃষ্টি না কমায় এ বার চিন্তার ভাঁজ মৎস্যজীবীদের কপালে।
বৃহস্পতিবার বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর ঝোড়ো হাওয়ায় নোঙরের দড়ি ছিঁড়ে ভেসে গিয়েছিল দু’টি নৌকো। দাদনপাত্রবাড় মৎস্যখটির দীপক পাত্রের ‘মা লক্ষ্মী’ ও লক্ষ্মণ মাইতির ‘অন্নপূর্ণা’ নামে নৌকো দু’টি শনিবার সন্ধ্যায় উদ্ধার হয় দিঘা মোহনার কাছে। দিঘায় ফেরা একটি ট্রলার সেগুলিকে উদ্ধার করে। কাঁথি মহকুমার মৎস্যজীবীদের দাবি, মাছ শুকোতে গিয়েও একই রকম বিপদে পড়েছে তাঁরা। তাঁরা জানান, খেজুরি-১ ব্লকের ১৯টি, কাঁথি-১ ও ২ ব্লকের ১২টি, রামনগর-১ ও ২ ব্লকের ১০টি মিলিয়ে মোট ৪১টি মৎস্যখটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে সঙ্কটে পড়েছে দিঘা মোহনার শুটকি মাছের কারবারও। শুটকি প্রস্তুতকারীদের দাবি, এটাই শুটকি তৈরির মূল সময়। আর সেই মরসুমেই ভিজে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ। বাড়ছে পোকা ধরে যাওয়ার আশঙ্কা। বৃষ্টি না হলেও আকাশ মেঘলা থাকছে। ফলে মাছ শুকোচ্ছে না কোনও ভাবেই। স্থানীয় সূত্রে খবর, রোদ না ওঠায় আপাতত শুঁটকির উপর আচ্ছাদন দিয়ে রাখা হয়েছে। ‘কাঁথি মহকুমা মৎস্যখটি উন্নয়ন সমবায় সমিতি’র সম্পাদক লক্ষ্মীনারায়ণ জানা বলেন, “আনুমানিক সাড়ে চার-পাঁচ কোটি টাকার কাঁচা মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
সামগ্রিক ভাবে মৎস্যখটির ক্ষতি হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। ভেঙে পড়েছে কয়েকটি খটির অস্থায়ী ছাউনি। লক্ষ্মীবাবুর কথায়, “এমনিতেই একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় লেগে রয়েছে এই এলাকায়। মরসুমের শুরুতেও খটিগুলির ক্ষতি হয়েছিল। এ বার দ্বিতীয় দফা। ক্ষতিপূরণের জন্য জানিয়েছি মৎস্য দফতরকে।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মাধ্যক্ষ দেবব্রত দাস বলেন, “খটির মৎস্যজীবীরা বরাবরই অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল। সরকারি সাহায্যে তাঁদের কারবার চলে। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে লোকসান হয়েছে তাঁদের। সাংগঠনিক ভাবে আবেদন জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। মৎস্য দফতরের কাছে সে জন্য আবেদন করা হবে।” মৎস্য দফতরের সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) রামকৃষ্ণ সর্দার বলেন, “মরসুমের শুরুতেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের সাহায্য করেছিল মৎস্য দফতর। এ বারও খটিগুলির ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ জানাতে বলা হবে। সেই তালিকা পাঠানো হবে রাজ্য মৎস্য দফতরে।”
মাছ শুকনোর মতোই ক্ষতি হতে পারে ধান ও আনাজ চাষেও, আশঙ্কা চাষিদের। রামনগর ও এগরার কিছু জায়গায় জমির পাকা ধান বৃষ্টির জলে ভিজে গিয়েছে। আনাজ চাষে ক্ষতি হয়েছে পানিপারুল, দুবদায়। এখন আনাজ চাষের ভরা মরসুমে মাঠে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, বেগুন, মুলো। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে এই সব ফসলের, দাবি চাষিদের। মাসখানেক আগের বৃষ্টিতে বেড়ে গিয়েছিল আনাজের দাম। ধীরে ধীরে যখন সেই দাম কমতে শুরু করেছে তখন ফের অকালবৃষ্টিতে আবার দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। রামনগরের ধান চাষি সুশান্ত মাইতি, আশিস মাইতি, রঞ্জন গিরি-রা জানান, যে সব জমির ধান জলের তলায়, তা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তা থেকে আর কিছুই পাওয়া যাবে না। অন্য দিকে, কেটে ফেলে রাখা ধান ভিজে গেলে তা ঝাড়াই করার পর কালো হয়ে যেতে পারে, আশঙ্কা তাঁদের।
এগরা মহকুমা কৃষি আধিকারিক সুবোধ মান্ডি বলেন, “বৃষ্টি কমলেই সমীক্ষা করে ক্ষতির তালিকা বানানো হবে। সেই তালিকা পাঠানো হবে জেলায়।” রামনগর ১ বিডিও অনুপম বাগ বলেন, “ব্লক কৃষি আধিকারিকের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে জেলায় দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy