Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ডোরাকাটার ভয়ে সওয়ার ট্রেকারে

লালগড়ের পড়ুয়াদের কাছে হাতির হানা নতুন কিছু নয়। কিন্তু জঙ্গলে নয়া হানাদারের আর্বিভাব হয়েছে। তার ভয়েই সিঁটিয়ে রয়েছে সকলে। এতদিন দেখা যেত, সাইকেল করে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা।

প্রচার: জঙ্গল এলাকায় পরীক্ষার্থীদের সতর্ক করতে বন দফতরের প্রচার-গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

প্রচার: জঙ্গল এলাকায় পরীক্ষার্থীদের সতর্ক করতে বন দফতরের প্রচার-গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
লালগড় শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০১:৩৫
Share: Save:

প্রতিদিনের সঙ্গী সাইকেল নয়। বাঘের আতঙ্কে লালগড় এবং সংলগ্ন অঞ্চলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সোমবার পরীক্ষা দিতে গেল ট্রেকারে।

লালগড়ের পড়ুয়াদের কাছে হাতির হানা নতুন কিছু নয়। কিন্তু জঙ্গলে নয়া হানাদারের আর্বিভাব হয়েছে। তার ভয়েই সিঁটিয়ে রয়েছে সকলে। এতদিন দেখা যেত, সাইকেল করে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু সে চেনা ছবি দেখা গেল না এ বার। গাড়ি ভা়ড়া করার সামর্থ নেই। তাই কিছুটা নিরাপত্তার খোঁজে পরীক্ষার্থীরা বেছে নিল ট্রেকারকেই। পরীক্ষা শেষে সন্তানদের নিয়ে বাসে করে বাড়ি ফিরলেন অভিভাবকেরা।

লালগড় এলাকার পরীক্ষার দু’টি মূল কেন্দ্র হল লালগড় রামকৃষ্ণ বিদ্যালয় এবং রামগড় মোক্ষদা সুন্দরী উচ্চতর বিদ্যালয়। লালগড় রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ে রামগড় ও গোহমিডাঙা স্কুলের পড়ুয়াদের সিট পড়েছিল। রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিল রামগড় স্কুলের প্রতাপ সিং, মধুমিতা মল্ল। দিনমজুর পরিবারের এই দুই পরীক্ষার্থীর মা শ্যামলী সিংহ ও বাসন্তী মল্ল বলেন, ‘‘বাঘের ভয়ে সবুজ সাথীর সাইকেলে ছেলে মেয়েদের পাঠাতে সাহস পাইনি। গাড়ি ভাড়া করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানোর ক্ষমতা নেই। তাই রুটের ট্রেকারে ওদের নিয়ে এসেছি। পরীক্ষা শেষ হলে বিকেলের বাসে ফিরব।’’ পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে বসেছিলেন অভিভাবক রামগড়ের দেবকুমার রায়, অনিমেষ সিংহ। তাঁদের কথায়, ‘‘বাঘ নিয়ে নানা গুজব ছড়াচ্ছে। কে আর ঝুঁকি নিতে চায় বলুন তো!’’ লালগড় রামকৃষ্ণ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের সেক্রেটারি তথা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জ্যোতির্ময় মহান্তি বলেন, ‘‘গত বছরও বহু পরীক্ষার্থী সাইকেলে পরীক্ষা দিতে এসেছিল। এ বার গোনা পরীক্ষার্থীরা সাইকেল করে এসেছে। বাঘ নিয়ে একাংশ অভিভাবক রীতিমত চিন্তিত।’’

সাইকেল করে রামগড় স্কুলে পরীক্ষা দিতে এসেছিল কাঁটাপাহাড়ি হাইস্কুলের ছাত্র সাগুন মুর্মু, প্রদীপ রানারা। বাড়ি থেকে জঙ্গল পথে দু’ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন? সাগুনের কথায়, ‘‘বাঘ এখন পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াবসত জঙ্গলে আছে বলে কানাঘুষো শুনছি। জঙ্গল রাস্তায় গা ছম্ ছম্ করছিল।’’ রামগড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা মিলল লালগড় সারদামণি বালিকা বিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ পারমিতা রায়ের। তিনি বললেন, ‘‘স্কুলের ২০২ জন ছাত্রী পরীক্ষা দিতে এসেছে। অনেকেই জঙ্গল এলাকার গ্রামে থাকে। পরীক্ষা শেষে সকলে যাতে নিরাপদে বাড়ি ফেরে, সেটা বলতে এসেছি। জঙ্গল রাস্তায় কোনও ঝুঁকি না নিতে অভিভাবকদের অনুরোধ করছি।’’

ঝুঁকি নেননি অভিভাবকেরা। ঝুঁকি নেয়নি প্রশাসনও। লালগ়়ড়, গোয়ালতোড়-সহ যেসব এলাকায় বাঘমামার পদচিহ্ন দেখা গিয়েছে প্রতিটি জায়গাতেই সচেতনতামূলক প্রচার করে বন দফতর। মাইকে ঘোষণা করা হয়, ‘যে সমস্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জঙ্গল রাস্তা ধরে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন তাদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। বনকর্মীরা জঙ্গল রাস্তায় টহল দিচ্ছেন।’ রাস্তায় টহল দিয়েছে পুলিশও। লালগড়ের বিডিও জ্যোতিন্দ্রনাথ বৈরাগী বলেন, ‘‘পরীক্ষার দিনগুলোতে বাস মালিক সংগঠনকে বেশি সংখ্যায় বাস চালাতে বলা হয়েছে।’’

সকলেরই বক্তব্য, ভয় পেও না। কিন্তু ভয় কি যাচ্ছে? গোয়ালতোড়ের ধামচা হাইস্কুলের শিক্ষক বিপ্লব মাহাতোর কথায়, “এত তাড়াতাড়ি ভয় কাটবে না। বাঘ বলে কথা!” মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আকাশদীপ হাজরা, মাম্পি মাহাতো, শুভেন্দু সিংহদের কথায়, “কখনও বাঘ দেখিনি। শুনেছি বাঘ না কি ঘুরছে। একটা ভয় আছেই!”

কেমন হল পরীক্ষা, আগামিকালের প্রস্তুতি কেমন, পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে পরীক্ষার্থীরা এ সব আলোচনা করল কম। ঘুরে ফিরে এল সেই ডোরাকাটা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Car Trekker car Tiger Lalgarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE