Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
দুর্ঘটনার বলি দুই পড়ুয়া-সহ ৪

স্বজনহারার শোকে স্তব্ধ শালবনি

রবিবার সকালে ট্রেকার-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষ চারজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। হাসপাতালে লড়ছেন আরও ২১ জন।

অনিলের দেহের পাশে গৌরবের সেই ছবি।

অনিলের দেহের পাশে গৌরবের সেই ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০১
Share: Save:

স্বজন-হারানোর যন্ত্রণায় স্তব্ধ বনমালীপুর-সহ শালবনির একাধিক গ্রাম। একটি দুর্ঘটনা সব লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। চোখের জল বাধ মানছে না গ্রামবাসীর।

রবিবার সকালে ট্রেকার-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষ চারজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। হাসপাতালে লড়ছেন আরও ২১ জন। মৃত চারজনের মধ্যে দু’জন স্কুল পড়ুয়া। বছর ষোলোর উত্তম মাহাতো দশম শ্রেণির ছাত্র। আর বছর পনেরোর নবনীতা মাহাতো সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। দু’জনই ট্রেকারে ছিল। উল্টো দিক থেকে আসা লরি ট্রেকারে ধাক্কা মারতেই রাস্তায় ছিটকে পড়ে তারা। লরির চাকায় পিষে মৃত্যু হয় দু’জনের। উত্তমের বাড়ি বইখণ্ডপুরে, নবনীতার বনমালীপুরে।

জখম ২১ জনের মধ্যে ৫ জনের আঘাত গুরুতর। এঁদের মাথায় চোট রয়েছে। এই ৫ জন মেদিনীপুর মেডিক্যালে এবং বাকি ১৬ জন শালবনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মেদিনীপুর মেডিক্যালের শয্যায় শুয়ে লুকলি মাহাতো, বীরেন হাঁসদারা বলছিলেন, “আচমকাই বিকট শব্দ হয়। বুঝি ট্রেকার দুর্ঘটনায় পড়েছে। কয়েকজন রাস্তায় ছিটকে পড়ে।”

ক’দিন আগেই সেতু ভেঙে বাস জলে পড়ে মুর্শিবাবাদের দৌলতাবাদে ৪৩ জন মারা যান। সপ্তাহ কয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর গ্রামীণ থানার সতকুইয়েও এক বাস দুর্ঘটনায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছিল। শনিবার আবার কলকাতার চিংড়িঘাটায় বাসের চাকায় পিষে মৃত্যু হয়েছে দুই তরুণের। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে এত প্রচার সত্ত্বেও প্রশ্ন উঠছে গাড়ির গতিতে কেন লাগাম পড়ানো যাচ্ছে না। শালবনিতে সামনে এসেছে ট্রেকারে বাড়তি যাত্রী পরিবহণের বিষয়টিও। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “ট্রেকারে এত যাত্রী থাকার কথা নয়।”

দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মহেশ্বর টুডু। বাগপিছলায়র এই যুবক ক্রীড়াপ্রেমী বলেই এলাকায় পরিচিত ছিলেন। ‘বাগপিছলা রিলেমালা গাঁউতার’ নামে স্থানীয় এক ক্লাবের সম্পাদক ছিলেন তিনি। কী ভাবে এলাকায় খেলাধুলোর প্রসার হবে, ক্লাবের উন্নতি হবে, সে সব নিয়ে মেতে থাকতেন। ক্লাবের ফুটবল দল ছিল। সেই সঙ্গে কারও কোনও সমস্যা হয়েছে শুনলেই ছুটে যেতেন মহেশ্বর। পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেন। এ বার রাজ্য সরকারের ক্লাব-অনুদান পাওয়ার কথা মহেশ্বরদের ক্লাবের। ক্লাব যাতে অনুদান পায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন মহেশ্বর। মেদিনীপুর সদর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক সন্দীপকে শনিবার রাতেও ফোন করেছিলেন তিনি। সেই মহেশ্বর আর নেই, ভাবতেই পারছেন না সন্দীপ, ভাবতে পারছে না বাগপিছলাও।

সন্দীপ বলছিলেন, “মহেশ্বর ফোনে বলেছিলেন, ক্লাবের চেক এখনও পাইনি। কবে পাবে। আমি বলেছিলাম, কাল রবিবার। সব অফিস ছুটি। সোমবারই খোঁজ নিয়ে জানাবো।’’ সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন মহেশ্বর। সেই সূত্রেও এলাকায় পরিচিতি ছিল তাঁর।

একটা দুর্ঘটনা অনেক কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। অনেক স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের পরে বিকেলে চারজনের দেহ পৌঁছয় গ্রামে। এলাকায় তখন শোকের ছায়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE