সঙ্কীর্ণ: সরু রাস্তায় হাঁটার সুযোগ বড় কম। সেখানেই টোটো, মোটর বাইক, সাইকেল ছয়লাপ। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস
বাড়ি থেকে মেয়ের স্কুলের দূরত্ব বড়জোর এক-আধ কিলোমিটার। মোটর বাইকে সময় লাগার কথা পাঁচ-সাত মিনিট। মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে অফিসে যান তমলুকের পার্বতীপুরের বাসিন্দা প্রদীপ্ত খাটুয়া। কিন্তু শেষ ২০০ মিটারের যানজট কাটিয়ে স্কুলে পৌঁছতেই কেটে যায় ২০ মিনিট।
প্রদীপ্তবাবুর দাবি, শঙ্করআড়া থেকে রামকৃষ্ণ মিশনগামী রাস্তায় সান্ত্বনাময়ী গার্লস হাইস্কুলের কাছে সেতুর কাছে যান নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা নেই। ট্রাফিক পুলিশের দেখা মেলে না কোনও দিন। বড় বড় গাড়ি স্কুলের সামনের রাস্তায় ঢুকে যানজটের সৃষ্টি করে। তার উপর যোগ হয়েছে টোটোর দৌরাত্ম্য।
ছবিটা শুধু সান্ত্বনাময়ী গার্লস হাইস্কুলের নয়। তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড় এলাকার যানজটে নাকাল আশপাশের প্রায় চার-পাঁচটি স্কুলের পড়ুয়া। ওই এলাকায় এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে একাধিক হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুল। স্কুলের সামনে যানজটের জেরে প্রতিদিন নাকাল হচ্ছেন শিক্ষক, শিক্ষিকা, পড়ুয়া, অভিভাবকরা। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাঁদের দাবি, পুরসভা ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাতেই বাড়ছে দুর্ভোগ।
জেলা সদর তমলুক শহরে জেলা হাসপাতালের পাশেই রাজকুমারী সান্ত্বনাময়ী গার্লস হাইস্কুল, কাছেই জিলা পাবলিক স্কুল ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিছু দূরে তমলুক হ্যামিল্টন হাইস্কুল।
যাঁরা শহরের পশ্চিম দিকে থাকেন, বা যাঁরা গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরে আসেন, তাঁরা হলদিয়া–মেচেদা রাজ্য সড়ক ধরে হাসপাতাল মোড়ে আসেন। অথবা শঙ্করআড়া বাসস্টপেজের কাছ থেকে শহরের ভিতরে পাকা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। আর যাঁরা শহরের পূর্ব অংশের বাসিন্দা, তাঁরা যাতায়াত করেন পাঁশকুড়া-তমলুক রাজ্য সড়ক থেকে জেলখানা মোড়, থানা মোড়, বর্গভীমা মন্দির মোড় ও পুরনো পাঞ্জাব ব্যাঙ্কের মোড় দিয়ে।
বাজার এলাকা হওয়ায় সকাল থেকেই ভিড় হয়। সাড়ে ৯টা-১০টা থেকে শুরু হয়ে যায় স্কুল পড়ুয়াদের ভিড়। যান চলাচলও বাড়ে ওই সময় থেকেই। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলের সময় হাসপাতাল মোড় থেকে বড়বাজার পর্যন্ত রাস্তায় লরি, ম্যাটাডোর, ট্যাক্সি, টোটোর জট লেগেই থাকে। ট্রাফিকের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সান্ত্বনাময়ী গার্লস স্কুল ও জিলা পাবলিক স্কুলের সামনে চলাফেরাই দায় হয়। অথচ, পুরনো পাঞ্জাব ব্যাঙ্কের মোড় ও রামকৃষ্ণ মিশনের কাছে এখনও লাগানো রয়েছে পুরসভার বোর্ড— স্কুলের সময় তিন ও চার চাকার গাড়ির প্রবেশ নিষেধ।
পুরসভার নির্দেশিকা। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন বাম পুরবোর্ডের তরফে ওই নির্দেশিকা লাগানো হয়েছিল। মরচে ধরেছে সেই বোর্ডে। এখন নির্দেশিকার পরোয়া করে না কেউ। নজরদারিও শিকেয়।
সান্ত্বনাময়ী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা মজুমদার বলেন, ‘‘প্রায়ই ছাত্রীদের একাংশ সকালের প্রার্থনায় যোগ দিতেই পারে না। সে জন্য তাদের বকুনিও খেতে হয়। কিন্তু আমরা তো জানি রাস্তার কী হাল। প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’
সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন। তাঁর দাবি, ‘‘স্কুলের সময়ে বড় গাড়ি ও টোটো নিয়ন্ত্রণে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy