প্রণমি: পুষ্পাঞ্জলি দিচ্ছে তুহিনা (ডান দিকে)। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
গত কটা দিন এতটুকু ফুরসত পায়নি সে। ঠাকুর আনা, বাজার করা, আলপনা দেওয়া— সরস্বতী পুজোর সব ঝক্কি সামলাতে হয়েছে তাকে। সহপাঠীরা সব সময় পাশে ছিল। কিন্তু তার দায়িত্ব সব থেকে বেশি। কারণ, সে স্কুলের সরস্বতী পুজো কমিটির সম্পাদিকা।
সোমবার পুজোর দিনেও তাই সকাল থেকে ব্যস্ত ছিল লালগড় রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির তুহিনা খাতুন। বন্ধুরা যখন শাড়ি-গয়নায় সেজে উঠেছে, তখনও সাজগোজের সময় পায়নি সে। আটপৌরে সালোয়ার কামিজেই এক ফাঁকে পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছে। পুরোহিত বিবেকবিকাশ গোস্বামীর সুরে সুর মিলিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করেছে, তার পর ফুল দিয়েছে বাগদেবীর চরণে। এ কাজে সহপাঠী পূজা গিরি, ইন্দ্রাণী খিলাড়ি, ভদ্রা পালের থেকে তুহিনার যত্নে এতটুকু খামতি ছিল না।
১৯৩০ সালে রামকৃষ্ণ মিশনের ভাবাদর্শে পথ চলা শুরু হয়েছিল লালগড় রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ের। এখন ছাত্রছাত্রী ১২৪৯ জন। পড়ুয়ারাই এ বার তুহিনাকে পুজো কমিটির সম্পাদিকা বেছেছে। স্কুলের টিচার-ইনচার্জ জ্যোতির্ময় মহান্তি বলেন, “তুহিনা খুব পরিশ্রমী। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে পুজোর সব কাজ সুন্দর ভাবে পালন করেছে।”
তুহিনার বাবা পেশায় ব্যবসায়ী শেখ খলিলও এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলে আমিও সরস্বতী পুজোয় নানা দায়িত্ব পালন করেছি।” খলিলের মতে, স্কুলের সরস্বতী পুজোয় দল বেঁধে দায়িত্ব নিতে শেখে পড়ুয়ারা। ‘‘এমন উত্সবে তুহিনা যোগ দেবে, এটাই তো স্বাভাবিক’’— বলছিলেন তার বাবা। তুহিনারা তিন বোন ও এক ভাই। ভাই শেখ নাজিম তুহিনার স্কুলেই নবম শ্রেণিতে পড়ে। পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছিল সে-ও।
আরও পড়ুন: ফেরা বিপদ, ইলিশও তাই নদীর ‘আবাসিক’
লালগড়ের একটি স্কুল থেকে গত বছর মাধ্যমিক পাশ করে লালগড় রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে তুহিনা। তার কথায়, “আগের স্কুলেও সরস্বতী পুজোর দিন যেতাম, মজা করতাম। নতুন স্কুলে সহপাঠীরা আমাকে সম্পাদিকা হিসেবে চাইল। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে দারুণ অভিজ্ঞতা হচ্ছে।” তুহিনার নেতৃত্বেই রবিবার বিকেল থেকে পড়ুয়ারা পুজো প্রাঙ্গণ সাজিয়ে তুলেছে। নিজে হাতে আলপনা দিয়েছে তুহিনা, ফল কেটেছে। তার আগে সহপাঠী কৌশিক পাত্র, সৌরাংশু জানাদের সঙ্গে পুজোর বাজার করতেও ছুটেছে।
সকালে বন্ধুদের সঙ্গে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার পরে তুহিনা বলছিল, ‘‘ছোট থেকে শিখেছি উৎসবে কোনও ভেদাভেদ নেই। পূজা, ইন্দ্রাণীরা ইদের সময় আমার বাড়িতে আসে, আমিও দুর্গাপুজোর সময় ওদের সঙ্গে মণ্ডপে যাই। এটাই তো আমাদের সংস্কৃতি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy